বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ ২ হাজার ৫৭ কোটি ডলার
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:৫৯
ঢাকা: সম্প্রতি দেশের বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বেড়েছে। গত জুন শেষে (২০২৩-২৪ অর্থবছর) দেশের বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের পুঞ্জিভূত স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৭ কোটি ৪৮ লাখ ২০ হাজার ডলার। এটি জিডিপি’র ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এটি বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের ১৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। গত জুন পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট (সরকারি ও বেসরকারি) বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ১০ হাজার ৩৭৮ কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার। এর মধ্যে সরকারের ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৮ হাজার ৩২১ কোটি ৪০ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
সূত্র জানায়, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ‘অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট’ (ওবিইউ) বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ প্রবাহের প্রধান মাধ্যম। বর্তমানে দেশের ৩৬টি ব্যাংকে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম রয়েছে। এছাড়া ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ (বিডা)-এর মাধ্যমেও বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ বিতরণ হয়ে থাকে।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাণিজ্যিক ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটগুলোকে ২০১২ সালে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ আনার অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বছর বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২৩ কোটি ডলার। কিন্তু এরপর থেকেই ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বাড়তে থাকে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে মোট বৈদেশিক ঋণের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট স্বল্প মেয়াদি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১ হাজার ১৪০ কোটি ৫১ হাজার ডলার। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ঋণের পরিমাণ ৭৬২ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। আর বাণিজ্যিক ঋণের মধ্যে ৫৭৬ কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার ডলার বায়ার্স ক্রেডিট, ৭৬ কোটি ৬৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার ডেফার্ড পেমেন্ট ও বিদেশি ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি’র পরিমাণ হচ্ছে ১০৯ কোটি ৮৮ লাখ ২০ হাজার ডলার।
অন্যদিকে, গত জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে মোট দীর্ঘ মেয়াদী ঋণের পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ৯১৭ কোটি ৪৩ লাখ ১০ হাজার ডলার। এর মধ্যে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে ১০২ কোটি ৪০ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৮০৮ কোটি ৪৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার (এর মধ্যে ব্যবসা খাতে ২৪ কোটি ৬২ লাখ ৩০ হাজার ডলার) ঋণ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া নন-ব্যাংক ডেপোজিটরি করপোরেশনগুলোর মাধ্যমে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের ব্যাংক খাতের প্রয়োজনেই বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ আনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে বিদেশের যেসব উৎস থেকে এ ধরনের ঋণ আনা হচ্ছে, সেগুলো যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য কি না- সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, দেশে যখন উচ্চ সুদহার ছিল তখন বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ নেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই সময়ে স্থানীয় ব্যাংকগুলোর সুদের হার ছিল ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। বর্তমানে বিদেশি ঋণের সঙ্গে দেশীয় ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদহারের তেমন পার্থক্য নেই। দেশের তুলনায় বিদেশি ঋণের সুদহার তুলনামূলক কম হলেও সীমাহীন ঋণের অনুমোদন দেওয়া হবে না।
সারাবাংলা/আরএস