ব্যক্তিগত গাড়িচাপায় শিক্ষার্থী নিহতে উত্তাল বুয়েট, ৬ দাবি সহপাঠীদের
২০ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:৪৬ | আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৯
রাজধানীর ৩০০ ফুট সড়ক এলাকায় ব্যক্তিগত এক গাড়ির চাপায় এক সহপাঠী নিহত ও দুজন আহত হওয়ার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। এ দুর্ঘটনাকে ‘হত্যাকাণ্ড’ অভিহিত করে তারা যেকোনো মূল্যে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
পাশপাশি হতাহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ আহতদের চিকিৎসার সব খরচ দুর্ঘটনায় জড়িতদের বহনসহ ছয় দফা দাবি তুলেছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পলাশী মোড়সংলগ্ন এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলন থেকে শিক্ষার্থীরা এসব দাবি তুলে ধরেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে পূর্বাচলের নীলা মার্কেট এলাকায় ৩০০ ফুট সড়কে ব্যক্তিগত এক গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন বুয়েট শিক্ষার্থী মুনতাসির মাসুদ। আহত হন অমিত সাহা ও মেহেদী হাসান। তারা তিনজনই বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন- প্রাইভেটকারের ধাক্কায় বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত
নিহত মাসুদের সহপাঠী ফাইয়াজ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মাসুদের বাসা কলাবাগান। অমিত ও মেহেদী বুয়েটের আহসানউল্লাহ হলে থাকেন। তারা বাইকে করে ৩০০ ফুট সড়কে গেলে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের থামায়। এ সময় অবসরপ্রাপ্ত একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের ছেলে তার ব্যক্তিগত গাড়ি বাইকের ওপর তুলে দেন। দুর্ঘটনাস্থলেই মাসুদের মৃত্যু হয়। রূপগঞ্জ থানার ডিউটি রিয়াদুল ইসলাম অফিসার শুক্রবার সকালে গণমাধ্যমকে জানান, দুর্ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিগত গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে।
এ দুর্ঘটনা নিয়ে শুক্রবার সকাল থেকেই বিক্ষোভ করছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। তারা সহপাঠী ‘হত্যা’র বিচারের দাবিতে বুয়েট ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে মিছিল করেছেন। পরে দুপুরে তারা পলাশীর মোড়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে এক বুয়েট শিক্ষার্থী বলেন, রাতে নীলা মার্কেটের সামনে ৩০০ ফুট রাস্তায় সাবেক সেনা কর্মকর্তার এ-লেভেলে পড়ুয়া ছেলে মদ্যপ অবস্থায় বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে আমাদের এক ভাইকে, গুরুতর আহত হয়েছেন আরও দুই ভাই। এখন পর্যন্ত যে বিবরণ আমরা অমিতের কাছ থেকে জানতে পেরেছি তা হলো— সংকেত পেয়ে আমাদের তিন ভাই বাইক থামিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলছিলেন। আমরা সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছি, এ ঘটনায় অভিযুক্ত চালক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন এবং বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, আমরা এ ঘটনায় গভীরভাবে শোক জ্ঞাপন করছি। নিহতের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। সহপাঠীদের এ হত্যাকাণ্ডে আমরা যখন হতবিহ্বল তখন আমরা জানতে পারি, অভিযুক্ত গাড়িচালকের পিতা একজন প্রভাবশালী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। তার আমরা জানতে পেরেছি, আমাদের এক ভাইয়ের প্রাণহানির পর আরও দুই ভাই যখন হাসপাতালের বিছানায় মারাত্মক যন্ত্রণায় কাতর, ঠিক তখন গাড়িচালকের ক্ষমতাশালী আত্মীয়রা মামলার মোড় ঘোরানো, এমনকি মামলা যেন না নেওয়া হয় তার ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত।
বুয়েট শিক্ষার্থী তূর্য বলেন, আগেও আমরা দেখেছি যে অপরাধী যদি প্রভাবশালী হয়, তাহলে বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়ে, ভিকটিমের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে, হুমকি-ধমকি দিয়ে মামলা না করতে চাপ দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে মামলা হলেও পরে বিভিন্ন ধাপে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রভাব খাটায়, কিংবা আরও নানা কৌশলে ছাড় পেয়ে যায়। এটা আমরা কখনোই হতে দিতে পারি না।
বুয়েটের এই শিক্ষার্থী বলেন, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, হত্যা মামলা লেখার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা আমাদের ভাইয়ের হত্যার সুষ্ঠু ও অতিসত্বর বিচার চাই। আমাদের দাবি— যেকোনো মূল্যে ক্ষমতার বিপরীতে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা হোক।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বুয়েট শিক্ষার্থীরা যে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন সেগুলো হলো—
- যেকোনো মূল্যে এ ‘হত্যাকাণ্ডে’র সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে;
- আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার অবশ্যই বিবাদীপক্ষকে বহন করতে হবে;
- নিহত মাসুদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে বিবাদীপক্ষকে বাধ্য করতে হবে;
- তদন্ত কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে;
- আহতদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে; এবং
- সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আর কারও প্রাণ যেন না ঝরে যায় এবং সড়কে নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয়, সে বিষয়ে সরকারকে যথোপযুক্ত ভূমিকা রাখতে হবে।
সারাবাংলা/এআইএন/টিআর