দুর্যোগ ঠেকিয়েছিল খেজুর গাছ, এখন দিচ্ছে সুস্বাদু গুড়
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:০৫ | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৫৭
গাইবান্ধা: বর্ষাকালে বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য রাস্তার পাশে তাল গাছের মতো সরিবদ্ধভাবে লাগানো হয়েছিল খেজুর গাছ। সেই খেজুর গাছগুলো শীত মৌসুমে এসে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে অর্থনীতিতে যোগ করে নতুন মাত্রা। এসব গাছের খেজুরের রস থেকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে সুস্বাদু খেজুর গুড়।
গুড়ের জেলা হিসেবে খুব একটা পরিচিতি না থাকলেও গোবিন্দগঞ্জের এই গুড় স্বাদ দিয়ে মন জয় করেছে ক্রেতা-ভোক্তাদের। ভেজালমুক্ত হওয়ায় এই গুড়ের চাহিদাও ব্যাপক। স্থানীয়ভাবে জেলার গুড়ের চাহিদা এখন গোবিন্দগঞ্জে উৎপাদিত এই গুড় দিয়েই পূরণ হওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয়রা জানান, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামরদহ ইউনিয়নে ফাঁসিতলা-দাড়িদহ সড়কের রসুলপুর এলাকায় লাগানো হয় কয়েক শ খেজুর গাছ। বর্ষা মৌসুমে বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ ও প্রাণীদের রক্ষায় বড় ভূমিকা রেখেছে সেগুলো। এখন এর কার্যক্রম যুক্ত হয়েছে জীবিকায়। এখানকার তিন শ খেজুরের গাছ থেকে সংগ্রহ করা রস দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে খেজুর গুড় উৎপাদন করে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান এলাকায় সাড়া ফেলেছেন।
শীতের সকালে গোবিন্দগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, আব্দুল মান্নানের অধীনে গাছিরা প্রতিদিন খেজুর গাছ থেকে সংগ্রহ করা রস দিয়ে তৈরি করছেন সুস্বাদু গুড়। আর এ কাজের জন্য তিনি নিয়োজিত করেছেন রাজশাহীর বাঘা থেকে নিয়ে আসা পেশাদার গাছিদের। স্থানীয়দের অভিমত, এখানে উৎপাদিত গুড়ের স্বাদ ও মিষ্টতা দেশের খেজুর গুড় উৎপাদনকারী প্রসিদ্ধ জেলাগুলোর মতোই। এ কারণে প্রতিদিনই গাছিদের কাছ থেকে এই নির্ভেজাল খেজুর গুড় নিতে ভিড় করেন স্থানীয় ক্রেতারা।
আব্দুল মান্নান জানান, মৌখিক চুক্তিতে লিজ নেওয়া এসব খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের মাধ্যমে গুড় উৎপাদন করছেন তিনি। গাছগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করে একটি অংশ থেকে গাছিদের মাধ্যমে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ শ লিটার রস সংগ্রহ করা হয়। ভোরে শুরু হয় রস সংগ্রহের কাজ। রস সংগ্রহ করা হয়ে গেলে তা জ্বাল করে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি গুড় উৎপাদন করা হচ্ছে।
সারাবাংলাকে আব্দুল মান্নান বলেন, গুড়ের গুণগত মান যেন ঠিক থাকে, সে কারণে রাজশাহীর বাঘা থেকে পেশাদার গাছি আনিয়েছি। তারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে রস সংগ্রহ করেন, তা থেকে গুড় তৈরি করেন।
গাছিরা জানালেন, গোবিন্দগঞ্জের খেজুর গাছ থেকে যেসব রস তারা সংগ্রহ করছেন, সেগুলো মানে বেশ ভালো। এ কারণেই এ রস থেকে উৎপাদিত গুড়ের মান ও স্বাদও চমৎকার। এমনকি এর স্বাদ গুড়ের জন্য বিখ্যাত কোনো কোনো জেলার গুড়ের চেয়েও ভালো।
স্বাদের পাশাপাশি ভেজালমুক্ত পাওয়ার নিশ্চয়তার কারণেই গুড় নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। স্থানীয় বাসিন্দা রহমান বলেন, কোনো রাসায়নিক দ্রব্য না মিশিয়েই ভেজালমুক্ত খেজুর গুড় উৎপাদন করা হয়। এ কারণে স্থানীয়দের মধ্যে এর বেশ চাহিদা রয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, আমরা বসে থেকে গুড় তৈরি করা দেখি। এর আগে কখনো খেজুর গুড় তৈরি করা দেখিনি। ভালোই লাগে যখন রস জ্বাল করার সময় সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
প্রধানমন্ত্রী পদকপ্রাপ্ত পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমী আহম্মাদউল্লা বলেন, তাল-খেজুর গাছ শুধু পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছে না, এখন এই এলাকায় খেজুরের গাছ মানুষের কর্মসংস্থানসহ অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে। উৎপাদিত খেজুরের গুড় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহও করা হচ্ছে।
গোবিন্দগঞ্জের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান বলেন, এ উপজেলায় যেন সঠিক নিয়ম মেনে খেজুরের রস সংগ্রহ করে স্বাস্থ্যসম্মত উপয়ে গুড় উৎপাদন করা হয়, এ জন্য গুড় প্রস্তুতকারকদের সচেতনতায় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। খেজুর গুড় উৎপাদনে আর্থিক লাভবান হওয়ার পাশাপাশি তারা নিজেরা স্বাবলম্বীও হচ্ছেন।
খেজুরের রস থেকে গুড় উৎপদনে কৃষি প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত পরামর্শ বা সহযোগিতা প্রয়োজন হলে তা দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান।
সারাবাংলা/টিআর