ঢাকা: কর্তৃত্ববাদী শাসন রুখতে নাগরিক সংগঠনগুলোকে ওয়াচ ডগের ভূমিকায় থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তার কার্যক্রমের আওতায় ‘সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকার প্রতিবেদন:তারপর কী?’ শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনা আয়োজন করে সুজন।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে যে, গণঅভ্যত্থানের পর মানুষের আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছে, আর যেন কর্তৃত্ববাদী শাসনের উদ্ভব না হয়, নির্বাচন ব্যবস্থা যেন পরিশুদ্ধ হয়, গণতন্ত্র যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় এবং সর্বোপরি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারভিত্তিক একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে যাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হয়।’
‘এই ধরনের একটি রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ঘটাতে হলে সংস্কার প্রক্রিয়াকে চলমান রাখতে হবে। এই জন্য জনমত সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সংস্কারের প্রশ্নে নাগরিকদে সচেতন ও সোচ্চার রাখতে হবে। পাশাপাশি নাগরিক সংগঠনগুলোকে সব সময় ‘ওয়াচ ডগ’ ও ‘প্রেসার গ্রুপের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে’- বলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছে যে, সংস্কার পরে করলেও হবে। কিছু কিছু সংস্কার করলেই হবে। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, ন্যুনতম দাবি ছিল উই ওয়ান্ট জাস্টিস এবং পুরোনো ফ্যাসিবাদী-কর্তৃত্ববাদী সরকারের যেন পুনরুত্থান না ঘটে। এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে এবং বুঝে-শুনে চলতে হবে। যারা অপরাধ করেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং অর্থনৈতিক অপরাধ তাদের শাস্তির আওয়াতায় আনতে হবে।’
গোলটেবিল বৈঠকে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকার, সংবিধান সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকার, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকার, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কারের অগ্রাধিকার, স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকার, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকার, শ্রমিক অধিকার বিষয়ক সংস্কার অগ্রাধিকার, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকার এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকারসমূহ ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেন বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন তুলে ধরার পর সরকার রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের সাথে বসবে এবং জাতীয় ঐক্যমত্য সৃষ্টির মধ্য দিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এ লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে নিজেকে সভাপতি করে এবং ৬ সংস্কার কমিশনের প্রধানদের সদস্য করে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। এই কমিশন জাতীয় ঐক্যমত্য সৃষ্টির কাজটি করবে।’
‘তার আগে আমরা সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছি। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে সংস্কার সম্পর্কে তাদের মতামত নিচ্ছি। সেই মতামতের ভিত্তিতেই সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকারসমূহের একটা খসড়া তৈরি করা হয়েছে। আমরা জানি, কমিশনগুলোর প্রস্তাবনা জমা দেওয়ার পর, সেটি সরকারের অ্যাসেট হয়ে যাবে। তখন তা প্রকাশ করা না করা তাদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। সে কারণে ‘সুজন’ কিছু প্রস্তাবনা আজ তুলে ধরল’- বলেন ড. বদিউল আলম মজুদার।
গোলটেবিল বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ, সাবেক সচিব আব্দুল আউয়াল মজুমদার প্রমুখ।