Monday 23 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চিকিৎসকের অবহেলায় গর্ভে সন্তান মারা যাওয়ার অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:২৯ | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:৩৫

চট্টগ্রামের বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় এক নারীর গর্ভের সন্তান মারা গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় এক নারীর গর্ভের সন্তান মারা গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু বকর ছিদ্দিক।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে চবির সহকারী অধ্যাপক আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, ‘চলতি বছরের ২০ এপ্রিল থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় পুরো প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডে আমার স্ত্রী এভারকেয়ার হাসপাতালের গাইনি বিষয়ক সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সানজিদা কবিরের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। প্রতিটি নিয়মিত চেকআপে আমরা ডাক্তারকে শুধু একটাই অনুরোধ করেছিলাম যাতে উনি ডেলিভারির সময় নিজে উপস্থিত থাকেন।’

‘উনি প্রত্যেকবারেই হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়েছিলেন। যেহেতু এটা আমার স্ত্রীর প্রথম গর্ভধারণ তাই ডাক্তারকে এ্টাও বলি যে প্রথমে নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করবেন। যদি কোন জটিলতা দেখা দেয় তবে সিজার করবেন। তিনি আমাদের সম্পূর্ণ আশ্বাস দিয়েছিলেন।’

চবির এ শিক্ষক বলেন, ‘১৯ ডিসেম্বর ভোর চারটার দিকে আমার স্ত্রী প্রসব বেদনা অনুভব করেন। আমরা ভোর সাড়ে পাঁচটায় এভারকেয়ারে পৌঁছাই। তখনই ডা. সানজিদা কবিরকে ফোন করে বিষয়টি অবহিত করি। উনি জরুরি বিভাগে ভর্তি হতে বলেন। তিনিও শিগগিরই চলে আসবেন বলে আমাদেরকে জানান। কিন্তু তিনি আসেন সকাল সাড়ে ৯টায়। ভর্তি করানোর পর ওখানকার নার্স ও ডাক্তাররা বিভিন্ন পরীক্ষা করে বলেন বাচ্চার হার্টবির্ট ঠিক আছে।’

বিজ্ঞাপন

‘সকাল সাড়ে আটটার পর আবার তারাই এসে বলছে বাচ্চার হার্টবিটে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত গর্ভস্থ বেবির হার্টবিট সম্পূর্ণ ভাল ছিল বলে তারা জানিয়েছিল। সাড়ে আটটার পর হঠাৎ হার্টবিট না পাওয়ার কোন কারণ তারা ব্যাখ্যা করতে পারেননি। পরে ১০টা ৫২ মিনিটে নবজাতক বিশেষজ্ঞ একজন ডাক্তার বললেন, মৃত বাচ্চা প্রসব হয়েছে।’

আবু বকর ছিদ্দিকের দাবি ডা. সানজিদা কবির আসার আগেই সাধারণ ডাক্তারদের আনাড়িপনায় গর্ভাবস্থায় শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, ‘দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা আমাকে মৃতদেহ হস্তান্তর করেন এবং ডেথ সার্টিফিকেট দেন। আমি মরদেহ সৎকার করতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলে আসি। রাত আটটার দিকে হাসপাতালে ফিরে যাই। হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে তলব করি। তিনি আসলে তাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলি। তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলবেন বলে আশ্বাস দেন। পরদিন শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় হাসপাতাল প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা কেবিনে আসেন এবং আমাকে ডেকে নেন।’

‘তাদের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা কথা হয়। তারা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অন্যান্যদের সঙ্গে আমাকে নিয়ে মিটিং করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা আমার সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ করেননি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মূলত আমাকে ছেলে ভুলানো প্রবোধ দিয়ে রিলিজ করানো।’

এভারকেয়ার হাসপাতালের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এবং আমার পুরো পরিবার এখনও মেন্টাল ট্রমাতে আছে। বুঝতে পারছি না আমি, আমার স্ত্রী ও গর্ভজাত সন্তানের অপরাধ কি ছিল। আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত করে এভারকেয়ার হাসপাতালের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এভারকেয়ার হাসপাতালের হেড অব মেডিকেল সার্ভিস অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল ডা. তানিয়া লোধ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানে অবহেলার কোনো কিছুই হয়নি। অভিযোগ যেটা এসেছে সেটা ভিত্তিহীন। তবুও সেটার তদন্ত হচ্ছে। এখানে সব প্রটোকোল মেনেই চিকিৎসা দেওয়া হয়। আর ডা. সাবরিনা যার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ তিনি খুবই আন্তরিক ও কমিটেড। তবুও যদি কোনো অবহেলার ঘটনা ঘটে সেটা আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’

সারাবাংলা/আইসি/এসডব্লিউ

গর্ভের সন্তানের মৃত্যু চট্টগ্রাম বেসরকারি হাসপাতাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর