রাজধানীতে নানা আয়োজনে বড়দিন উদযাপন
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৮ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৪০
ঢাকা: আজ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন। খ্রিষ্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট প্রায় দুই হাজার বছর আগে এই দিনে জেরুজালেমের কাছে বেথেলহেমের এক গোয়াল ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। এ দিনটিকে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা ‘শুভ বড়দিন’ হিসেবে উদযাপন করে থাকেন। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে দেশের সকল গির্জায় প্রার্থনা হয়েছে। এখনো চলছে নানা অনুষ্ঠান।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন গির্জায় সকালে বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা।
রাজধানীর তেঁজগাও গীর্জায় সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় পবিত্র কথামালা ও প্রার্থনা পর্ব। আর্চবিশপ বিজয় অ্যান্ডি ক্রুজ প্রার্থনা পর্ব পরিচালনা করেন। চার্চ ঘুরে দেখা যায়, বড়দিন উদযাপন করতে রাজধানীর নানা প্রান্ত থেকে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা হোলি রোজারি চার্চে এসেছেন। অধিকাংশই এসেছেন সপরিবারে। এ সময় তাদের নানা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেখা যায়।
খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, হিংসা-বিদ্বেষ, অন্যায়-অত্যাচার ও পাপাচারে নিমজ্জিত মানুষকে সুপথে আনার জন্যই যিশু আবির্ভূত হয়েছিলেন। এরপর থেকে আমৃত্যু আর্তমানবতার সেবা, ত্যাগ ও শান্তির আদর্শ প্রচার করে গেছেন। হিংসা-দ্বেষ ভুলে তিনি সবাইকে শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তাই মানবতার বন্ধনে আবদ্ধের আমন্ত্রণের দিন হিসেবে দেখা হয় বড়দিন বা মেরি ক্রিসমাসকে।
এদিকে বড়দিন উপলক্ষ্যে গির্জাগুলোর ভেতরে-বাইরে রঙিন কাগজে সেজেছে। গির্জার চারপাশ সাজানো হয়েছে বর্ণিল আলোকসজ্জায়। ভেতরে ক্রিসমাস ট্রিতেও আলোর ঝলকানি। গির্জা প্রাঙ্গণে তৈরি করা হয়েছে গো-শালা। এর পাশে রাখা হয়েছে সান্তা ক্লজ। দেশের সব গির্জার ভেতরটা এখন এমনই বর্ণিল।
খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচারের মাধ্যমে মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতেই যিশুর পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টান ধর্মানুসারীরাও যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আচার, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ‘শুভ বড়দিন’ উদযাপন করেন।
বড়দিন উপলক্ষে আজ ২৫ ডিসেম্বর সরকারি ছুটি। দিনটি উপলক্ষ্যে অনেক খ্রিষ্টান পরিবারে কেক তৈরি করা হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। এ ছাড়াও দেশের অনেক অঞ্চলে ধর্মীয় গানের আয়োজন করা হয়েছে।
রাজধানীর তারকা হোটেলগুলো ঘুরে দেখা গেছে সেখানেও আলোকসজ্জার পাশাপাশি ভেতরে কৃত্রিমভাবে স্থাপন করা হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি। সেখানে সান্তা ক্লজের সাজে চলছে শিশুসহ সবাইকে উপহার ও আনন্দ দেওয়ার আয়োজন।
এদিকে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসবে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বাণীতে তারা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, কামনা করেছেন দেশ ও বিশ্ব মানবতার শান্তি।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ‘বড়দিন’ উপলক্ষ্যে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের জন্য বুধবার দুপুরে বঙ্গভবনে সংবর্ধনা আয়োজন করেছেন। দুপুর ১২টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।
অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল মঙ্গলবারই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। এসময় তিনি একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত এবং ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনকে আরো মজবুত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
দুপুরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির দেওয়া সংবর্ধনা ও শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে খ্রিস্টান নেতৃবৃন্দ এবং দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দেওয়া শুভেচ্ছা ভাষণে এ কথা বলেন। সকল ধর্মের মূল কথাই হচ্ছে মানুষের সেবা ও কল্যাণ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এদেশে সকল ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠানাদি স্বাধীনভাবে ও আনন্দঘন পরিবেশে আবহমানকাল থেকেই পালন করে আসছে। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন দেশের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান।
সারাবাংলা/জেআর/এমপি