Friday 27 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নগরঘেঁষা পদ্মার চরে আশা দেখাচ্ছে রবিশস্য

মাহী ইলাহি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:১১ | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:২০

রাজশাহী নগরের পাশেই পদ্মার চরে আবাদ হচ্ছে নানা ধরনের রবিশস্য। শাহ মখদুম মাজার শরিফের সামনে পদ্মার চর থেকে তোলা। ছবি: সারাবাংলা

রাজশাহী: রাজশাহী নগরঘেঁষা পদ্মা নদী। তাতে এখানে ওখানে জেগে থাকা চর। এককালের প্রমত্তা পদ্মা এখন আর সারা বছর পানিতে থই থই করে না। বর্ষায় পানি আসে, হেমন্ত পার হতে হতে নেমে যায় অনেকটাই। ওই হেমন্তের শেষ থেকেই নগরঘেঁষা এই চরে শুরু হয় রবিশস্য আবাদের কর্মযজ্ঞ।

কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে চরের জমি ইজারা নিয়ে চলছে রবিশস্যের আবাদ। গত বছরের তুলনায় এ বছর আবাদ বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

কৃষকরা জানান, নদীর বুকে জেগে ওঠা চর এখন পলিমাটি মিশ্রিত উর্বর আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। সেখানে চাষ হচ্ছে পেঁয়াজ-রসুন, ধান-গম-ভুট্টা, মসুর, মটরশুঁটি, রসুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, টমেটো ও শিমসহ নানা ধরনের শাকসবজি। এতে বেড়েছে কর্মসংস্থান, কৃষকদের মুখে ফুটছে হাসি।

হেমন্তে পদ্মার পানি নেমে গেলে রবিশস্য আবাদের প্রক্রিয়া শুরু হয় এসব চরে। ছবি: সারাবাংলা

আবহাওয়া ও ঋতুর ওপর নির্ভর করে দেশের কৃষি মৌসুমকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে— রবি মৌসুম, খরিপ-১ মৌসুম ও খরিপ-২ মৌসুম। ১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ (কার্তিক মাস থেকে ফাল্গুন মাস) পর্যন্ত সময় রবি মৌসুমের অন্তর্ভুক্ত।

কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, চর এলাকার ১১টি ব্লকে মোট জমি রয়েছে ১৪ হাজার ৪৪ হেক্টর। এর মধ্যে সাত হাজার ৯৪৮ হেক্টর জমিতে ফসল আবাদ হয়ে থাকে। ১৫ হেক্টর জমি পতিত রয়েছে। চরাঞ্চলের দুই হাজার ৭৯ হেক্টর জমিতে বছরে এক ফসল হয়। চার হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে দুই ফসলের আবাদ হয়। বাকি এক হাজার ৮১৯ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে তিনটি ফসল।

চাষিরা বলছেন, চরের পলিমাটির সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, সার কম লাগে। নদী থেকে পানি তোলার ব্যবস্থা করা গেলে তাদের জন্য আবাদ আরও সুবিধাজনক হবে। এখানে যোগাযোগের ব্যবস্থাও বেশ ভালো হওয়ায় ফসল তোলার সময় পরিবহণ সুবিধা পাওয়াও যাবে। সব মিলিয়ে চরে রবিশস্যের আবাদ রাজশাহীর অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে।

বিজ্ঞাপন

পেঁয়াজ-রসুন থেকে শুরু করে ধান-গম-ভুট্টা, মসুর এবং মটরশুঁটি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, টমেটো ও শিমসহ নানা ধরনের শাকসবজি আবাদ হচ্ছে এসব চরে। ছবি: সারাবাংলা

নগরীর দরগাপাড়া এলাকার কৃষক মইনুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, নদীতে চর পরে যাওয়াতে ফসলের আবাদ শুরু করেছি। এ বছর প্রায় সব কৃষকই রবিশস্যের আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নদীর পানি নিচে নেমে যাওয়ায় শ্যালো মেশিন বসিয়ে পানি তুলে বীজ রোপণ করতে হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে পুরো চর সবুজ ফসলে ভরে উঠবে।

পদ্মার চরে সরিষা ও পেয়াজের আবাদ করেছেন নগরীর দরগাপাড়া এলাকার কৃষক সুজন আলী। তিনি বলেন, পদ্মার চর নগরীর বিনোদনেরও কেন্দ্রবিন্দু। ফলে মানুষদের আনাগোনা অনেক বেশি। জমির ভেতরেও মানুষ ঢুতে পড়ে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তবে আমরা এর বিকল্প চিন্তাও করছি।

রাজশাহীর পদ্মার চরে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ফসলের চাষ করে আসছেন নগরীর হোসেনীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মডি। তিনি বলেন, ‘আগে আমি কালাই ও খেসারির আবাদ করেছি। খুব একটা লাভ হয়নি। তাই এ বছর আমি বাঁধাকপি, ফুলকপি, সরিষা, বেগুন, গম ও ভুট্টা চাষ করেছি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলার কাজ শুরু হবে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আশা করি এ বছর ভালো লাভের মুখ দেখব।’

আবহাওয়া ভালো থাকলে এ বছর রবিশস্যে ব্যাপক ফলনের সঙ্গে সঙ্গে লাভের আশায় রয়েছেন কৃষকরা। ছবি: সারাবাংলা

পাঠানপাড়া এলাকার জুলফিকার আলী বলেন, ‘চর ইজারা নিয়ে আবাদ করতে হয়। এখানে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলানো সম্ভব। আমি এ বছর আখ চাষ করছি। এ ছাড়াও লাউ, টমেটো, শিম আবাদ হচ্ছে। চরের ফসল রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা কিনে সরাসরি ভোক্তাদের হাতে তুলে দিতে পারছেন। এতে টাটকা সবজি খেতে পারছেন নগরবাসী।’

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, ‘আগে পদ্মার চরে হাতেগোনা কয়েকটি ফসল ফলত। এখন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। সময়ের পালা বদলে বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ হচ্ছে পদ্মার জেগে ওঠা চরে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় লাভও বেশি হচ্ছে কৃষকদের।’

সারাবাংলা/টিআর

পদ্মার চরে আবাদ রবিশস্য রাজশাহী

বিজ্ঞাপন

ফায়ার ফাইটার নয়নের দাফন সম্পন্ন
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০২:৩৫

আরো

সম্পর্কিত খবর