সচিবালয়ের আগুন তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:০৭ | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৫৮
ঢাকা: প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ছাড়াও ঢাকা মহানগর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধিদের রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসন ও শৃঙ্খলা বিভাগ থেকে এই তদন্ত কমিটি গঠনের অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ইমরান হোসেন অফিস আদেশে সই করেছেন।
আরও পড়ুন-
- সচিবালয়ে নেই বিদ্যুৎ, বন্ধ দাফতরিক কাজ
- সচিবালয়ের পুড়ে যাওয়া ভবন পরিদর্শনে উপদেষ্টারা
- সচিবালয়ের আগুন পরিকল্পিত হতে পারে: নৌ বাহিনী কর্মকর্তা
- আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ৪ মন্ত্রণালয়, তিনটিরই দায়িত্বে উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদ
অফিস আদেশে বলা হয়েছে, সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার ঘটনা তদন্তে যে কমিটি করা হয়েছে তার আহ্বায়ক থাকছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগর অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন) মোহাম্মদ খালেদ রহীম। সদস্য সচিব হিসেবে থাকছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, যার পদমর্যাদা যুগ্ম সচিবের নিচে নয়।
কমিটির বাকি পাঁচ সদস্যের মধ্যে তিনজন থাকবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন করে প্রতিনিধি। তাদের কারও পদমর্যাদাই যুগ্ম সচিবের নিচে হবে না।
এর বাইরে তদন্ত কমিটিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।
কমিটির কার্যপরিধি নির্ধারণ করে বলা হয়েছে, এই তদন্ত কমিটি সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডের উৎস ও কারণ উদ্ঘাটন করবেন। এ অগ্নিদুর্ঘটনার পেছনে কারও ব্যক্তিগত বা পেশাগত দায়দায়িত্ব রয়েছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখবে কমিটি। এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কী করা যায়, সে সুপারিশও কমিটিকে করতে বলা হয়েছে।
এর আগে সকালে সচিবালয় পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছিলেন, অগ্নিকাণ্ড তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করছে সরকার। তখন অবশ্য কমিটির আকার সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি তিনি।
বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫০ মিনিটের দিকে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ওই ভবনে আগুন লাগে। রাত ১টা ৫২ মিনিটে খবর পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায় রাত ১টা ৫৪ মিনিটে। একে একে ফায়ার সার্ভিসের ১৯ ইউনিট সেখানে নিয়োজিত হয়। প্রায় ঘণ্টা পর সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে সচিবালয়। ৭ নম্বর ভবনসহ বাকি ভবনগুলোর সব দফতরও বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা সচিবালয় পরিদর্শন করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও কিছু সময়ের মধ্যেই অগ্নিদগ্ধ ভবনটি পরিদর্শন করবেন বলে তথ্য রয়েছে।
এদিকে সবিচালয়ের ৭ নম্বর ওই ভবনের তিনটি তলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে অন্তত চারটি মন্ত্রণালয়ের সব কক্ষ, আসবাব ও নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়েছে। এখন পর্যন্ত আগুনের সূত্রপাতের কারণ জানা সম্ভব হয়নি। তবে নৌ বাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আগুন যেভাবে একাধিক স্থান থেকে ছড়িয়েছে, তাতে এটি পরিকল্পিত হতে পারে।
আগুনের পেছনে নাশকতা বা ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেখছেন যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আগের সরকারের আমলের দুর্নীতি ও অর্থ লুটপাট নিয়ে তারা তদন্ত করছিলেন। ব্যাপক দুর্নীতির তথ্যও কিছু পেয়েছেন। সেগুলোর তথ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য আগুন দেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
সারাবাংলা/জেআর/টিআর