‘আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী সাংবাদিকতা গড়ে তুলব’
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:৪৫ | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৩
ঢাকা: আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী সাংবাদিকতা গড়ে তুলব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহত সাংবাদিকদের আমরা ভুলব না। সাংবাদিকদের কল্যাণে শুধু ওয়েজ বোর্ড নয়, বেসিক পেমেন্ট এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য সেফটি ইকুয়েবমেন্ট নিশ্চিত করতে হবে।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ফ্রি প্রেস ইনিশিয়েটিভের উদ্যোগে ‘কেমন বাংলাদেশ চাই’ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ সাংবাদিকদের স্বজনদের ভাষ্যে (ধারাবাহিক আলোচনা-১) শিরোনামে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

শহিদ সাংবাদিকের স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন। ছবি: সারাবাংলা
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এম আব্দুল্লাহ।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘গত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটা গর্বের জায়গায় নিয়ে গেছে। কোনো ঘটনায় কোথাও কখনও এত সাংবাদিক মারা যায়নি, এত সাংবাদিক আহত হয়নি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের মারা যাওয়ার জন্য খুনি হাসিনা যেমন দায়ী, তেমনি গণমাধ্যমের মালিকপক্ষও দায়ী। গত ১৫ বছরে ৬১ জন সাংবাদিক মৃত্যুর জন্য হাসিনাকে জবাবদিহি করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধার জন্য আমাদের সাংবাদিক ইউনিয়ন, সাংবাদিক সংগঠনগুলোর আওয়াজ তুলতে হবে, যাতে একটা ভালো পেমেন্ট সাংবাদিকেরা পেতে পারে। শুধু প্রেস কার্ড ও আইডি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে করে খাওয়ার জন্য বললে সাংবাদিকদের একসঙ্গে প্রতিবাদ করতে হবে। যেসব মালিক এসব বলবে, তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দিতে হবে। এজন্য আমাদের ফ্যাসিবাদবিরোধী সাংবাদিকতা গড়ে তুলতে হবে।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘গত ১৫ বছরে হাসিনা বিচার বহির্ভূত হত্যা করেছেন, আর কিছু সাংবাদিক এসব হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করেছেন। হাসিনা কীভাবে গুম জননী হয়ে উঠেছেন, সে বিষয়ে গবেষণা করতে হবে।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সাংবাদিকতা সুষ্ঠু ও স্বাধীনতাভাবে চলবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আগস্ট বিপ্লবের বড় প্রাপ্তি হচ্ছে আমরা এখন স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি। গত ১৮ জুলাই একদিনে তিন জন শহিদ হয়েছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সাত জন শহিদ হয়েছেন। এর মধ্যে চার জন পুলিশের গুলিতে শহিদ হয়েছেন। যারা জীবন দিয়েছেন তাদের সবার রক্ত লাল। গত ১৫ বছরে সাংবাদিকেরা মামলা হামলার শিকার হতে হয়েছে। গত ১৫ বছরে ৬১ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। আমাদের শহিদ ও আহত সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়াতে হবে।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা সামসি আরা জামান ছেলের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমার শহর রংপুর। আমার ছেলে খুব ভালো লিখত, খুব ভালো ছবি আঁকতে পারত। গত ১৬ বছর আমি টিভি দেখেনি। গত ১৬ বছর টিভিতে শুধু হাসিনা, তার বাবা ও তার পরিবারের সদস্যদের দেখানো হতো। তাই টিভি দেখতাম না। আমার সন্তানকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আরও অনেক সাংবাদিককে একইভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা কেমন হওয়া উচিত। সে বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করা উচিত। আমি সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা-নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করার দাবি জানাই। আমি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সকল শহিদদের জন্য সবার কাছে দোয়া চাচ্ছি।’
বাংলাদেশ ফ্রি প্রেস ইনিশিয়েটিভের আহ্বায়ক ইয়াসির আরাফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানে গুলিতে নিহত সাংবাদিক হাসান মেহেদী বাবা মোশারেফ হোসেন হাওলাদার, সাংবাদিক প্রদীপ কুমার ভৌমিকের ছেলে সুজন কুমার ভৌমিক, শাকিল হোসেনের বাবা বেলায়েত হোসেন, সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা সামসি আরা জামান।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার ঘটনা স্মৃতিচারণ করেন। তারা সাংবাদিকদের নানা সংকট ও সমস্যা নিয়েও কথা বলেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এইচআই