Saturday 28 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের মধ্যে বিরাজমান বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন’

স্পেশাল করেসপডেন্ট
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:০২ | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:১৪

বৈষম্যবিরোধী গণকর্মচারী পরিষদের নেতারা

ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী গণকর্মচারী পরিষদের নেতারা বলেছেন, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নির্বিশেষে বিভিন্ন সার্ভিসের মধ্যে যে ভয়াবহ মৌলিক বৈষম্য বিরাজ করছে, এই বৈষম্য দূর করা জরুরি। অন্যথায় প্রশাসনে আরও বিশৃঙ্খলতা বাড়বে।

শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের আহ্বায়ক জিন্নাত আলী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য সচিব রাশেদুল আলম, মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জনপ্রশাসনে যুগোপযোগী সংস্কারসাধনে ও বিদ্যমান বৈষম্য নিরসনে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যেই সাবেক সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে প্রধান করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশনে বিভিন্ন সরকারি সার্ভিসের প্রতিনিধিত্বকারী অংশীজনদের অন্তর্ভুক্ত করা হলেও বিশালসংখ্যক নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি। যা খুবই দুঃখজনক।

তবে লিখত বক্তব্যে বলা হয়েছে, কমিশন এরই মধ্যে ওয়েবসাইটে নাগরিকদের কাছে প্রশ্নমালা দিয়ে জনপ্রশাসনের কি কি জায়গায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন সে বিষয়ে মতামত সংগ্রহ করছে। এর বাইরেও বিভিন্ন অংশীজন, জনপ্রশাসনের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছে। সরকারি জনবল কাঠামোর অন্যতম বৃহৎ অংশটি অর্থাৎ নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিত্বকারী কোনো ফোরাম বা গোষ্ঠীর সঙ্গে অদ্যাবধি কোনো বৈঠক বা আলোচনা করেননি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দফতরের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা কর্মচারীরাই মূলত সাধারণ জনগণ ও সেবাগ্রহীতাদের সরাসরি সেবা দানের সঙ্গে যুক্ত। জনপ্রশাসনকে সংস্কার করে প্রকৃত অর্থে জনকল্যাণমুখী করার জন্য ও সেবামান উন্নয়নের জন্য একদিকে সকল সার্ভিসের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা দরকার। অপরদিকে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নির্বিশেষে বিভিন্ন সার্ভিসের মধ্যে যে ভয়াবহ মৌলিক বৈষম্য বিরাজ করছে তা দূর করা দরকার।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয় সাবেক সিএসপি, ইপিসিএস ও অন্যান্য সার্ভিসের কর্মকর্তাদের নিয়ে। আজকের যে আমলাতন্ত্র তা অনেক পরিবর্তন, সংযোজন-বিয়োজনের মধ্য দিয়ে একটা রূপে দাঁড়িয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান এর দ্বিতীয় ভাগের অনুচ্ছেদ ১৯-এ ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি’ অংশে সুযোগের সমতার কথা বলা হয়েছে। সরকারি কর্মের শ্রেণিবিভাগ এতদিন গেজেটেড ও নন-গেজেটেড অভিধায় বিভক্ত থাকলেও অন্যায্যভাবে ‘নন-ক্যাডার’ নামে বিভাজন সৃষ্টি করে সকল প্রশাসনিক সুযোগ সুবিধা এবং ক্ষমতায়ন কাঠামো হতে একটি বিশাল দক্ষ ও মেধাবী সরকারি জনবলকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত করা হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে তারা সরকারি দফতরগুলোতে বিদ্যমান উল্লেখযোগ্য অসামঞ্জস্য ও বৈষম্য তুলে ধরেন— পরিচিতি ও মর্যাদাগত বৈষম্য, প্রেষণ ও পদোন্নতিজনিত বৈষম্য, জনবল সৃজন ও ব্যবস্থাপনায় বৈষম্য, আর্থিক ব্যবস্থাপনায় বৈষম্য, শিক্ষা-প্রশিক্ষণে বৈষম্য, নীতি নির্ধারণ ও কর্মসম্পাদনে বৈষম্য ও লজিস্টিকসজনিত বৈষম্য। এরূপ বৈষম্যের ফলে একটি অস্থির গণকর্মচারী ব্যবস্থাপনাই শুধু গড়ে উঠে না বরং একটি ভারসাম্যহীন ও পক্ষপাতমূলক সমাজ তথা রাষ্ট্র গড়ে উঠে। এ সকল বৈষম্য একটি দক্ষ, জনবান্ধব, বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা বিনির্মাণের প্রধান অন্তরায়।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, চাকরি জীবনের শুরুতেই একই গ্রেডের একজনকে ক্যাডার এবং অপরজনকে নন-ক্যাডার তকমা দেওয়া হয়, যা চরম বৈষম্যমূলক। কারণ, ‘গেজেটেড অফিসার্স রিক্রটমেন্ট রুলস ১৯৭৮’ এবং ‘পাবলিক সার্ভিস কমিশন (কনসালটেশন) ১৯৭৯’ এ সরকারি পদগুলোকে ‘গেজেটেড’ এবং ‘নন-গেজেটেড’ এই দুইটি গুচ্ছে বিভক্ত করা হয়, যেখানে নবম গ্রেডকে ‘গেজেটেড’ পদের প্রারম্ভিক পদ এবং ১০ম-২০তম গ্রেডকে ‘নন-গেজেটেড’ পদ হিসেবে রাখা হয়। নন-ক্যাডার পরিচয়টাকে আরও গুরুত্বহীন করতে পরবর্তীতে ‘নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা -২০২৩’ এ ৯ম, ১০ম, ১১তম এবং ১২তম গ্রেডকে নন-ক্যাডার হিসেবে অভিহিত করা হয় যা অনভিপ্রেত।

বিজ্ঞাপন

বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, এরুপ অযৌক্তিক পরিচিতিগত বিভাজনের কারণে একই গ্রেডের সরকারি কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও সরকারি সুযোগপ্রাপ্তি ও মর্যাদায় ব্যাপক বৈষম্য দেখা যায়। তাই, সরকারি কর্মে ক্যাডার, নন-ক্যাডার প্রভৃতি অভিধার বিলুপ্তির মাধ্যমেই এই বৈষম্যের অবসান ঘটতে পারে।

বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র বিনির্মাণে সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা সংস্কারে তারা কিছু প্রস্তাবনাও দেন তারা।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এইচআই

ক্যাডার ও নন-ক্যাডার বৈষম্যবিরোধী গণকর্মচারী পরিষদ

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন পর্দার জুলিয়েট
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৫

আরো

সম্পর্কিত খবর