সচিবালয়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা, বন্ধ প্রধান গেট
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:১৯ | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:২২
ঢাকা: বাংলাদেশের প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়। গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে শুধু রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিনির্ধারণই হয়না, এখানে নানা কর্মকাণ্ডের জরুরি নথিপত্রও থাকে। যে কারণে এখানকার ভবনগুলোতে থাকে বাড়তি নিরাপত্তা। সেই নিরাপত্তার মধ্যেই গেল বুধবার দিবাগত রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে সাত নম্বর ভবনের চারটি ফ্লোর পুরোপুরি পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়।
সচিবালয়ের আগুনের সুত্রপাত আর ক্ষয়ক্ষতি অনুসন্ধানে যাতে বিঘ্ন না ঘটে সে লক্ষ্যে পুরো সচিবালয়ে বেসরকারি লোকদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা যাদের প্রবেশাধিকার রয়েছে তাদেরও ঢুকতে হচ্ছে পায়ে হেঁটে।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সচিবালয় এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা দেখা যায়। নিরাপত্তার কড়াকড়ির মধ্যে কার্যক্রম চলছে। সচিবালয় এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সচিবালয়ের ৫টি গেটের সবগুলোই বন্ধ। সাত নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে গেটগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ সদস্যরা।
গেটে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মী আব্দুল মতিন জানিয়েছেন, কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া কাউকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছেনা। যারা ঢুকছেন তারা প্রবেশের পর আবার দরজা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কর্মকর্তারাও পায়ে হেঁটে প্রবেশ করছেন সচিবালয়ে। কারণ গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছেনা।
যাদের সঙ্গে আগে থেকে কোনো মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা বা অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত সভা রয়েছে, তারা প্রবেশ করতে পারছেন। সচিবালয়ের ১ নম্বর গেটে কথা হয় গণপূর্ত অধিদফতরের এক কর্মকর্তার সঙ্গে তিনি নামপ্রকাশ না করে বলেন, একজন অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে বৈঠক থাকায় তিনি সচিবালয়ে এসেছিলেন। এ সময় তাকে গেটের বাইরে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
সচিবালয়ে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞায় রয়েছে সাংবাদিকদেরও। সকাল থেকে তারা সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারেননি। এরপর সচিবালয়ে সংবাদ সংগ্রহ করা সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট ফোরাম-বিএসআরএফ এর নেতারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহাঙ্গির আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে সাংবাদিকদের অস্থায়ী পাস দেওয়ার কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে যাতে বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকরা যাতে প্রতিদিন তাদের কাজের জন্য প্রবেশ করতে পারেন সেজন্য অস্থায়ী পাসের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
এদিকে, সাধারণ দর্শনার্থীরাও ভিড় করেছিলেন সচিবালয়ের সামনে। যদি প্রবেশের সুযোগ মেলে। এদের মধ্যে নারায়নগঞ্জ থেকে আসা মিজানুর রহমান নামে একজন শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। তার প্রবেশের জন্য সুপারিশ করা হলেও তিনি প্রবেশ করতে পারেননি।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকস চৌধুরীর সই করা এক আদেশে বেসরকারি ব্যক্তিদের অনুকূলে ইস্যু করা সচিবালয় প্রবেশের অস্থায়ী কার্ড বাতিল করা হয়। পাশাপাশি সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাতিল করা হয়।
গত বুধবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার সময় সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সে আগুনে চারটি ফ্লোর পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে। এরপর বৃহস্পতিবার থেকেই সচিবালয়ে কর্মরতদের ছাড়া সকলকে প্রবেশে মৌখিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
সারাবাংলা/জেআর/এসআর