আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা সানজিদা বরখাস্ত
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০১:৫৭ | আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:৪৫
ঢাকা: ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক আলোচিত পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সানজিদা আফরিনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তাকে বরখাস্ত করার কথা জানানো হয়েছে। সানজিদা সবশেষ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) কর্মরত ছিলেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিবিধি আইন অনুযায়ী সানজিদাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত থাকার সময়ে তিনি বরিশাল রেঞ্জে সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী খোরপোশ ভাতা পাবেন।
সূত্র জানায়, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে হত্যার দুটি মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরির পেছনে সানজিদার নাম এসেছে।
ওই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফ। তবে তিনি আদালতে ওই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই তা জানাজানি হয়। এরই মধ্যে পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফকেও চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আরিফ জানিয়েছেন যে এডিসি সানজিদার নির্দেশে তিনি আনিসুল-সালমানকে অব্যাহতি দিয়ে অভিযোগপত্র তৈরি করেছিলেন।
৩১তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা সানজিদা আফরিন ২০১৬ সালের ৫ মে থেকে ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশের বিশেষ শাখায় ছিলেন। ২০২১ সালের ৬ মে থেকে ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ছিলেন গাজীপুর সদর সার্কেলের এএসপি। ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশে যোগ দেন।
এডিসি সানজিদা আলোচনায় আসেন গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর। ওই দিন রাজধানীর বারডেম হাসপাতাল হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে শাহবাগ থানায় আটকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুজন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নেতাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পুলিশের রমনা বিভাগের তৎকালীন এডিসি হারুন অর রশিদ এই মারধরে নেতৃত্ব দেন।
ওই সময় জানা যায়, রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুনের স্ত্রী ডিএমপির এডিসি সানজিদা আফরিন চিকিৎসা নিতে ওই দিন সন্ধ্যায় বারডেম হাসপাতালে গিয়েছিলেন। চিকিৎসকের সাক্ষাৎ পেতে তিনি সহকর্মী এডিসি হারুনের সহায়তা নেন। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে এডিসি হারুনকে মারধর করেন সানজিদার স্বামী মামুন। এর সূত্র ধরেই ছাত্রলীগ নেতাদের থানায় তুলে নিয়ে মারধর করেন এডিসি হারুন।
ঘটনার পরদিন রমনা বিভাগ থেকে প্রত্যাহার করে ডিএমপির সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয় এডিসি হারুনকে। একই দিন তাকে দুই বার বদলির আদেশ দেওয়া হয়। পরে সাময়িক বরখাস্তও করে পুলিশ অধিদফতরে সংযুক্ত করা হয়েছিল। আবার তাকে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।
এ ঘটনায় একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনই আলোর মুখ দেখেনি। এর মধ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের কয়েকদিন আগে হারুনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার।
এর মধ্যে গত ২৪ অক্টোবর পুলিশ মহাপরিদর্শকের সই করা এক আদেশে ১৭ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদের ও ১৮ জন সহকারী পুলিশ সুপারকে বিভিন্ন ইউনিটে বদলি করা হয়। ওই আদেশেই ‘হারুনকাণ্ডে’ আলোচিত সানজিদাকে রংপুর পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (পিটিসি) বদলি করা হয়। চার দিন পরেই ২৯ অক্টোবর আবার সেই আদেশ বাতিলও করা হয়।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর