Saturday 04 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২০ বছরেও ১০ম গ্রেড পাননি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৫৯ | আপডেট: ২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৩০

গ্রেড ও বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের আন্দোলন। ফাইল ছবি

ঢাকা: দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে আটকে রয়েছে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট ও মেডিকেল অ্যাসিসটেন্টদের পদমর্যাদা ও বেতন স্কেল বাড়ানোর প্রক্রিয়া। ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের পদমর্যাদা ও বেতন স্কেল বাড়ানোর পর থেকেই তারা এ দাবি করে আসছেন। বিএনপি সরকারের আমলে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে এলেও বাস্তবায়ন হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ওই ফাইল আর আলোর মুখই দেখেনি।

দীর্ঘ প্রায় ২০ দশক পর অবশেষে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ১০ম গ্রেড পদমর্যাদার দাবি আলোচনায় এসেছে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এলে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের প্রায় দুই দশকের অপেক্ষার অবসান ঘটবে।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গাজী সাইফুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, আমরা এখন ১১তম গ্রেডে বেতন পাই। প্রায় ২০ বছর ধরে ১০ম গ্রেডের ফাইল আটকে আছে। অথচ আমাদের সমকক্ষ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারর ও ডিপ্লোমা কৃষিবিদরা ১০ম গ্রেডে বেতন পাচ্ছে। কেবল আমরাই বৈষম্যের শিকার।

আওয়ামী লীগ সরকারের অনীহার কারণে ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের বিষয়টি এগোয়নি জানিয়ে গাজী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও স্বাস্থ্য সচিবকে বিষয়টি জানিয়েছি। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক। এখন আর আমরা হয়তো বৈষম্যের শিকার হব না।

বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব মো. সেলিম মোল্লা সারাবাাংলাকে বলেন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট ও মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের মর্যাদা বাড়ানোর দাবি যৌক্তিক। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বিগত সরকারের আমলে যৌক্তিক দাবিটি রাজনৈতিক বিবেচনায় বাস্তবায়িত হয়নি। আমাদের পদমর্যাদা ও বেতন স্কেল বাড়ানোর কার্যক্রম প্রায় চূড়ান্ত হলেও মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে বিএনপি সরকার তা কার্যকর করে যেতে পারেনি। পরে আওয়ামী লীগ সরকার আর এই দাবি বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপই নেয়নি।

বিজ্ঞাপন

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা জানান, ২০০২ সালে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা হেলথ টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএইচটিএ) ও বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিপিএ) পক্ষ থেকে ওই সময়কার প্রধানমন্ত্রী বরাবর ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মতো দ্বিতীয় শ্রেণি পদমর্যাদা ও বেতন স্কেল বাড়ানোর আবেদন জানানো হয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ওই বছরের ১৭ জানুয়ারি জনপ্রশাসন সচিবকে অনুরোধ করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও তাদের চাকরি দ্বিতীয় শ্রেণি পদমর্যাদা ও বেতন স্কেল উন্নীত করার প্রস্তাব করে।

এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের আলোকে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় (বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) ২০০২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট ও মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের পদমর্যাদা ও উচ্চতর বেতন স্কেলের দাবি ও প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত দিতে পাঁচ সদস্যের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি ২০০৩ সালের নভেম্বরে ডিপ্লোমাধারীদের পদমর্যাদা ও বেতন স্কেল বাড়ানোর সুপারিশ করে। সেই সুপারিশের আলোকে ডিসেম্বরে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সারসংক্ষেপ প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির বিবেচনার জন্য পাঠান। ওই সারসংক্ষেপ সারাবাংলার হাতে রয়েছে।

এদিকে সংসদে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ২০০৪ সালের সপ্তম বৈঠকে ওই ডিপ্লোমাধারীদের পদমর্যাদা ও বেতন স্কেল উন্নীত করার জন্য সুপারিশ করে। ২০০৫ সালের শুরুতে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে ওই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। সভা থেকে সুপারিশ আকারে জানিয়ে দেওয়া হয়, বিষয়টি প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির কার্যপরিধির বাইরে। এটি বেতন বৈষম্য দূরীকরণসংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটিতে পাঠাতে হবে। বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সুপারিশ দীর্ঘ ২০ বছরেও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্য খাতের এসব ডিপ্লোমাধারী ও ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরাও তাদের দাবি আদায়ে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেননি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের পর সরকার পরিবর্তন হলে ফের এসব চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীরা দাবি-দাওয়া নিয়ে সোচ্চার হন। শেষ পর্যন্ত বেতন স্কেল ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করাসহ সার্বিক বিষয় পর্যালোচনার জন্য বৃহস্পতিবার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আহ্বান করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্য বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিদফতরের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থত থাকবেন। মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে চিঠি পাঠিয়ে বৈঠকটি আহ্বান করেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ আব্দুল হাই।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

গ্রেড বাড়ানোর দাবি ফার্মাসিস্ট বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট

বিজ্ঞাপন

আজ তাকেই সবাই শেষ বিদায় দিলো
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:৪৪

আরো

সম্পর্কিত খবর