‘পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন হবে না’
৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:২৪ | আপডেট: ৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৫৮
ঢাকা: পিআর পদ্ধতি (সংখ্যানুপাতিক ভোট) ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত শ্রমিক সম্মেলনে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ‘যারা দেশপ্রেমিক রয়েছেন, তাদের সকলকে উদাত্ত আহ্বান জানাব, দেশ আমার, এই দেশে আমি জন্মগ্রহণ করেছি। এই দেশ নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলবে, সেটা আমরা সহ্য করব না। যারা বারবার আমাদেরকে তামাম বিশ্বের মধ্যে চোরের দিক থেকে ফার্স্ট বানিয়েছে, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে; সেই দুর্নীতিবাজদেরকে আবার ক্ষমতায় বসিয়ে আমরা তামাশা দেখব— এটা বাংলাদেশের জনগণ সহ্য করবে না, তারা ফ্যাসিস্টদের আর ক্ষমতায় আসতে দেবে না। সেই লক্ষ্যে আমি সর শ্রেণির সকলকে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি, আসেন আমরা সবাই একত্রিত হই এবং আওয়াজ তুলি- সুন্দর দেশ গড়ার জন্য, সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনার জন্য নির্বাচন পদ্ধিতি হবে পিআর সিস্টেমের। বাংলার জমিনে পিআর সিস্টেম ছাড়া নির্বাচন হবে না।’
তিনি বলেন, ‘সারাবাংলাদেশ সফর করার পর আমার ধারণা হয়েছে ইসলামী আন্দোলনের জন্য এখন মাঠ অনেকটা উর্বর অবস্থায় আছে। এ সময় যদি দৌড়ের পাল্লায় আমাদের প্রতিযোগিতা না থাকে তাহলে এক পর্যায়ে কিন্তু এই মাঠের ভেতরে আগাছা জন্মাবে। আমরা কে কয়দিন থাকব জানি না, তবে স্বাধীনতার এই ৫৩ বছরে বাংলাদেশে ইসলামের পক্ষে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অবস্থান তৈরির জন্য যে ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে এত সুন্দর ক্ষেত্র কিন্তু পেছনে দেখা যায় নাই।’
সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে ৫৩ বছর যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে, এরা দেশের পক্ষে কাজ করেছেন, এটা তারা প্রমাণ করতে পারে নাই। আমি সেদিন সোহরাওয়ার্দ উদ্যানে বলেছিলাম আওয়ামী লীগের সরকারটা মূলত ভারতেরই সরকার ছিল। কারণ, তাদের সমস্ত কার্যক্রম ভারতের স্বার্থ রক্ষার জন্য ছিল বলে আমরা লক্ষ্য করেছি। আমার দেশের স্বার্থ তাদের কাছ থেকে তেমন একটা দেখি নাই।’
তিনি বলেন, ‘এই যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বাংলাদেশে হল, সেখানে হাজার হাজার মায়ের কোল খালি হল, হাজার হাজার মানুষ পঙ্গু হল, অন্ধ হয়ে গেল অসংখ্য লোক। এখনও মায়ের কান্না বন্ধ হয় নাই। এই সরকার তো অগোছানো অবস্থায় দেশ পরিচালানার দায়িত্ব পালন করছে। সেখানে আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য হল সহযোগিতা করা। কিন্তু আমরা দেখছি, তাদেরকে অস্থিতিশীল করে তাদের কাছ থেকে দাবি আদায় করে নেওয়ার জন্য… এক পর্যায়ে আমি বলব যে, গত ফ্যাসিস্ট সরকার ২০২৪ এর নির্বাচনে যে প্রকারেই হোক তারা কিন্তু সরকার গঠন করে ফেলেছিল। তারা তো পাঁচ বছরের মেয়াদে ছিল। এখন পর্যন্ত তিন-চার মাস যেতে পারে নাই, এর ভেতরে আমাদের যে তাড়াহুড়া, এর ফলে কিন্তু এই সরকার সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করবে, তা অনেকাংশেই ব্যহত হয়েছে। ফ্যাসিস্টদের দোসররা সব জায়গায় কিন্তু ঘাপটি মেরে আছে। সুযোগ পাওয়া মাত্র ছোবল মারবে। এ জন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘‘আমরা চাই অন্তর্র্বতী সরকার অতীতের সরকারের ন্যায় অসম্মানিত না হয়ে স্বসম্মানে যাতে বিদায় নিতে পারেন সে দিকে খেয়াল রাখবেন। আর জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে শ্রমিক ভাইয়েরা সব সময়ে সোচ্চার হবেন।’’
ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, ‘অতীতে কৃষক শ্রমিকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। ক্ষমতাসীনরা দুর্নীতির মাধ্যমে কৃষক শ্রমিককে তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করেছে। এসব অনচারের অবসান ঘটাতে হলে ইসলামী আন্দোলনকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনতে হবে।’
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া ও মুক্ত করার সুযোগ এসেছে। যারা শহীদ হয়েছে আহত হয়েছে তারা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য ত্যাগ করেছে। একটি দলকে ক্ষমতায় নেওয়া আর শুধু নির্বাচনের জন্য এ ত্যাগ করেনি। ৫৩ বছরে যারাই ক্ষমতায় ছিল তারা লুটে পুটে আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হয়েছে। সরকারের লোকরা বলছেন চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি, হাত বদল হয়েছে। চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির পথ বন্ধ হলে অতীতের ক্ষমতাসীনরা নেতা-কর্মী শূন্য হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন জুলাই বিপ্লবে শুরু থেকে ছিল। যারা বলেছে ছাত্রদের আন্দোলনের সাথে আমরা নাই, তারা এখন কৃতিত্ব নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ক্ষমতায় গিয়ে সংস্কারের কথা ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। বাংলাদেশকে একটি দলের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।’
ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আলহাজ্ব মুহাম্মাদ আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে, সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা খলিলুর রহমান ও জয়েন্ট সেক্রেটারি মুফতি মোস্তফা কামালের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব কে এম আতিকুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মাদ নেছার উদ্দিন, মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী, আলহাজ্ব আবদুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, ডা. মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, ছাত্র নেতা ইউসুফ আহমদ মানসুর ও শ্রমিক আন্দোলন সহ-সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান ও আলহাজ্ব ওয়ায়েজ হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/এমপি