Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তারেক রহমানের দেশে আসা নিয়ে যা বললেন আইনজীবীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:১০ | আপডেট: ৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৩৫

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ছবি

ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১/১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে মানহানি, চাঁদাবাজিসহ অর্ধশতাধিক মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে ৩৬টি মামলায় খালাস পেয়েছেন তিনি। এখনো ১৯টা মামলা বিচারাধীন আছে। এ বাস্তবতায় তিনি কবে দেশে ফিরেছেন- এ বিষয়ে তার আইনজীবীরা বলছেন, তারেক রহমানের দেশে আসা, না আসা মামলার ওপর নির্ভর করছে না। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রতিটি মামলা আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি আইনজীবীদের সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৫ জানুয়ারি) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের করা চারটি মামলা বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন) খারিজ করে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক। তারেক রহমানের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী গাজী কামরুল ইসলাম সজল, ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী, আইনজীবী মাকসুদ উল্লাহ, আজমল হোসেন খোকন।

পরে তারেক রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আজ আপিল বিভাগে চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট মামলাগুলো বাতিল করে রায় দিয়েছিলেন। এই বাতিলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। দুই পক্ষের পূর্ণাঙ্গ শুনানি নিয়ে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আপিল ডিসমিসড (খারিজ) করে দিয়েছেন। তার মানে দাঁড়াল- হাইকোর্ট মামলাগুলো যে বাতিল করেছিলেন, সেই বাতিলের রায় বহাল থাকল।

তিনি আরও বলেন, তারেক রহমানের দেশে আসা, না আসা মামলার ওপর নির্ভর করছে না। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রতিটি মামলা যেন আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হয়, তিনি আমাদের (আইনজীবীদের) সুস্পষ্টভাবে এই নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি প্রচলিত আইন, আদালত ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যেহেতু আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে, আপন গতিতে চলবে, অতএব তারেক রহমানের দেশে আসা, না আসা মামলার ওপর নির্ভর করছে না। তার দেশে আসার ব্যাপারে মামলা কোনো ধরনের প্রভাবও বিস্তার করছে না।

বিজ্ঞাপন

আইনজীবী কায়সার কামাল আরও বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১/১১ এর আমলে দায়ের করা বেশিরভাগ মামলাই খারিজ হয়ে গেছে। এ ছাড়া শেখ হাসিনার সরকারের আমলে সারাদেশে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এরমধ্যে ইতোমধ্যে ৩৬টি মামলা খারিজ হয়ে গেছে। এখন সব মিলিয়ে ১৮ থেকে ১৯টি মামলা চলমান রয়েছে।

তিনি কেন দেশে আসছেন না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারেক রহমান একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তার দেশের আসার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ তিনি যথাসময়ে নেবেন- বলে জানান এই আইনজীবী।

তারেক রহমানের আরেক আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, তারেক রহমান এই বাংলাদেশের আশা আকাঙ্খার ভবিষ্যত। এটা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার অনেক আগেই তা বুঝতে পেরেছিল। এজন্য বিগত সরকার তারেক রহমানের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছিল। নির্যাতন করে তার শরীরের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়া হয়। যেসব মামলার কারণে তারেক রহমানের ওপর এতো নির্যাতন করা হলো আজকে এসব মামলা খারিজ হওয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে দায়ের করা হয়েছিল। এসব মামলার কোনো আইনিভিত্তিও ছিল না।

আইনজীবীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চাঁদাবাজির অভিযোগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাজধানীর পৃথক দুটি থানায় করা চারটি মামলার কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করে গত ২৩ অক্টোবর হাইকোর্ট রায় দেন। ২০০৭ সালে গুলশান থানায় তিনটি এবং ধানমন্ডি থানার একটি মামলাসহ ওই চার মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে তারেক রহমানের করা পৃথক আবেদনের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ওই রায় দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গত ডিসেম্বরে পৃথক লিভ টু আপিল করে। পৃথক লিভ টু আপিল গত ৯ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। আদালত লিভ টু আপিল আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। লিভ টু আপিলগুলো ৪ জানুয়ারি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় রাখা হয়।

আইনজীবীরা আরও জানান, রেজা কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব উদ্দিন ২০০৭ সালের ২৭ মার্চ তারেকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনসহ অন্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল আমিন কনস্ট্রাকশনের কর্মকর্তা সৈয়দ আবু শাহেদ সোহেল চাঁদাবাজির অভিযোগে একই বছরের ৪ মে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। তারেক রহমান ও তার একান্ত সহকারী মিয়া নূরউদ্দিন অপুকে আসামি করে ঠিকাদার আমীন আহমেদ ভুঁইয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে দ্রুত বিচার আইনে গুলশান থানায় ২০০৭ সালের ৮ মার্চ একটি মামলা করেন। ঠিকাদার মীর জাহির হোসেন ধানমন্ডি থানায় ২০০৭ সালের ১ এপ্রিল গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে অপর মামলাটি করেন। এই চার মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে হাইকোর্টে পৃথক আবেদন করেন তারেক রহমান। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।

এরপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে গত ২৩ অক্টোবর রায় দেন হাইকোর্ট।

সারাবাংলা/কেআইএফ

তারেক রহমান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর