Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংবিধান কবর দেওয়ার ঘোষণা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত: ড. কামাল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:১৪ | আপডেট: ৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:১১

রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন দলের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমিরেটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন – ছবি : সারাবাংলা

ঢাকা: বাহাত্তরের সংবিধান কবর দেওয়ার ঘোষণায় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের উপর আঘাতের অশনি সংকেত পাওয়া যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরামের ইমিরেটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

রোববার (৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

ড. কামাল হোসেন বলেন, আজ সময়ের প্রয়োজনে জনআকাঙ্খা পূরণে সংবিধান সংশোধন কিংবা যুগোপযোগি করা রাষ্ট্রের জন্য চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের অর্জিত ও মীমাংসিত বিষয়গুলিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলে -তা আমাদের অগ্রসরমান বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বাধাগ্রস্থ করবে। এ ব্যাপারে আমাদের সকলের দায়িত্বশীল হওয়া কর্তব্য।

তিনি বলেন, দেশ ও জাতির কল্যাণে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও একাত্তরের অশুভ শক্তি যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেজন্য জাতীয় ঐক্য খুবই জরুরী। ইতিমধ্যে যে জাতীয় ঐক্য গঠন হয়েছে, তা বিভাজনে পরিণত হয়েছে। এতে করে জাতীয় ঐক্যের শক্তি কমে যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের অঙ্গীকার ছিল- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বিগত ৫৩ বছরেও আমরা কাঙ্খিত বাংলাদেশ অর্জন করতে পারি নি।

তিনি বলেন, এদিকে ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনা হচ্ছে- একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার। এ ক্ষেত্রে ছাত্র-জনতার মধ্যে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। দেশ গড়ার কাজে তারুণ্যের এই শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। এটা যাতে বিনষ্ট না হয়, সে দিকে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খিত একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের চেতনা থেকে যেমন সরে আসতে পারি না; তেমনি ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বৈষম্যমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ত্যাগ ও আকাঙ্খা নসাৎ হতে দিতে পারি না। এই ঐতিহাসিক বিষয়গুলো একটি আরেকটির সম্পূরক ও পরিপূরক।

বিজ্ঞাপন

ড. কামাল বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তা সমাধানের একমাত্র পথ হচ্ছে রাজনৈতিক ঐক্য। এই ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে- আমাদের জাতীয় চেতনা, যা ‘৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ‘৭২ এর সংবিধান এবং ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনা।

তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো নির্লজ্জ দলীয়করণের ফলে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। এ সব প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করতে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, তাদের যৌক্তিক সময় প্রদান এবং সার্বিক সহযোগিতা করা সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণের নৈতিক দায়িত্ব; যাতে তারা অভীষ্ট সংস্কার কর্মসূচী সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে সক্ষম হন।

সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের নবনির্বাচিত সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা হোসেন মন্টু, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও এডভোকেট যুগল আফ্রিদিসহ দলের অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

গণফোরামের নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা হোসেন মন্টু বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দুর্নীতি করেছে, সেজন্য বাহাত্তরের সংবিধানের উপর আঘাত আসতে পারে না। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি। যারা বাহাত্তরের সংবিধান কবর দিতে চায়, তারা সংবিধানের কী বুঝে? ’৭২ এর সংবিধান প্রশ্নবিদ্ধ করা হলে জনগণ তা মেনে নেবে না। অবিলম্বে সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

দলের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান বলেন , দেশ ও জাতি আজ এক সঙ্কটময় মুহূর্ত অতিক্রম করছে। এই সঙ্কটময় মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই।

সারা বাংলা/এএইচএইচ/আরএস

গণফোরাম ড. কামাল হোসেন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর