Sunday 12 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভ্যাট বৃদ্ধি: যা বলছেন সাধারণ মানুষ

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:১২ | আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:০৩

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: সম্প্রতি শতাধিক পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এতে মোবাইল ফোনে কথা বলা, রেস্তোরাঁর খাবার, সিগারেট, পোশাক, এলপি গ্যাস, কোমল পানীয়সহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে মোবাইল ইন্টারনেটসহ দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টানেটের খরচও। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাতে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ এবং দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করেছে সরকার।

বিজ্ঞাপন

মঞ্জুর মোর্শেদ পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকেন রাজধানীর মানিকনগর এলাকায়। শুল্ক বাড়ার খবর শুনে চিন্তার ভাজ পড়েছে তার কপালে। আয় কম বলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভাল স্কুলে দিতে পারেননি সন্তানদের। সেখানে যদি আরও খরচ বাড়ে, তা বাড়তি চাপ হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। শুল্ক বাড়ার ফলে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা সবচেয়ে বিপদে পড়বেন, এমন আশঙ্কা অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ সংবাদপত্রে প্রকাশিত শুল্ক বৃদ্ধির সংবাদও শেয়ার করে দিচ্ছেন এ সংক্রান্ত পোস্ট। শুল্ক বৃদ্ধিতে সব মানুষের জীবন যাপনে প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে পোস্ট দিচ্ছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুধু হোটেল-রেস্তোরাঁয় খেলেই ভ্যাট গুনতে হচ্ছে, বিষয়টা এখন আর সেখানে থাকছে না। এবার ঘরে রেঁধে খেলেও দিতে হবে অতিরিক্ত ভ্যাট। শুধু তাই নয় ফলমূল, খাদ্যসামগ্রীর সঙ্গে সরকার ভ্যাট বাড়িয়ে দিয়েছে মোবাইলে কথা বলার ক্ষেত্রেও। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ করে ব্র্যান্ডের পোশাক কিনতে গেলে দিতে হবে আগের চেয়ে দিগুন ভ্যাট। বাড়তি এ করের চাপ এমন সময়ে এলো যখন মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

ভোক্তারা বলছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত মানুষের জীবন মানের ওপরে যেন; মড়ার ওপরে, খাঁড়ার ঘা।

মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের সামনে ফুটপাথে ব্যবসা করেন মতিউর রহমান। ১৯ বছরের ব্যবসা তার। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, মানুষ মনে করে ফুটপাথের ব্যবসায় অনেক বেশি আয়। বিষয়টা হলো যখন সিজন পরিবর্তন বা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়, তখন সবচেয়ে বিপদে পরে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা।

তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে র্দীঘদিন ব্যবসা বন্ধ রাখতে হয়েছে। তারপর পরিস্থিতি ঠিক হলেও আগের মতো ক্রেতা নেই। তাছাড়া ফুটপাথ থেকে বেশি টাকা খরচ করে পণ্য কিনতে চান না ক্রেতারা। এখন ভ্যাট বাড়লে আমাদেরও পণ্যের দাম বাড়াতে হবে। সেখানে প্রতিযোগীতার বাজারে কতটা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারব সেটা ভাবছি।

রাজধানীর ওয়ারীতে দেশীয় ব্রান্ড কে-ক্রাফটের কর্মী সুমন বলেন, আগে বছরে বড় একটা ডিসকাউন্ট দেওয়া হতো। সেখানে গেল বছর চারটা বিগ ডিসকাউন্ট দিয়েও আশানুরুপ বিক্রি করা যায়নি। ভ্যাট বাড়লে সাধারণভাবে পোশাকের দামও বাড়বে। সেখানে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা আরও চ্যালেঞ্জের হয়ে যাবে।

ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস কোম্পানিতে চাকরি করেন ইমরান হোসেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিদিন অন্তত ১০০টা কল করতে হয়। মানুষকে অফার জানাতে হয়, নিজেদের কার্যক্রম তুলে ধরতে হয়। কেউ যখন কথায় ইমপ্রেস হয়ে বুক করে তখন সেখান থেকে কমিশন পাই। এছাড়া কখনো কখনো বিভিন্ন অফিসে গিয়েও টুরিস্ট ধরতে হয়। যে মাসে বেশি টুরিস্ট বুকড হয়, সে মাসে কমিশন বেশি। এখন জিনিষপত্রের দাম যদি আরও বাড়ে এই স্বল্প আয় দিয়ে মানুষের জীবন যাপনই মুশকিল হয়ে যাবে।

সবচেয়ে দুশ্চিন্তা দেখা গেছে একদল প্রান্তিক পর্যায়ের খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে। মিরপুর-১১ নম্বরে কথা হয় ফুচকা বিক্রেতা আরিফের সঙ্গে। তিনি এখনো জানেন না সরকার খাদ্যপন্যের ওপরে ভ্যাট বাড়িয়েছে। তিনি শুনে অস্থিরতা প্রকাশ করে বলেন, এমনিতেই মানুষ এখন অনেক স্বাস্থ্য সচেতন। রাস্তাঘাটে ভাল খাবার নিয়ে এলেও অনেকেই খেতে অনীহা প্রকাশ করেন। তাছাড়া সাজানো দোকানগুলোতে এসিতে বসে গল্প করে খাবার খেতেই যেন এ প্রজন্ম পছন্দ করে। এই পরিস্থিতিতে যদি খাবারের দাম বাড়িয়ে দিই তাহলে তো একেবারেই ক্রেতাশূন্য হবো আমরা। এই যে সকাল থেকে দুপুর গড়াচ্ছে মাত্র ১৫০ টাকা আয় হয়েছে।

একই কথা বললেন ফুটপাথের জুতা দোকানদার সেলিম মিয়া। তিনি বলেন, সকালে ফেসবুকে দেখেছি কিন্তু বিষয়টা কি সেটা বুঝতে পারনি। আমরা তো কারখানায় গেলে টের পাই কোনটার দাম কত বাড়ল। এর আগে জানতে পারি না।

এদিকে ভ্যাট বৃদ্ধি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা লেখালেখি। এনজিও কর্মকর্তা শরিফুল হাসান লিখেছেন “মানুষকে কষ্ট দেওয়ার এইসব কর কমান।”

আফরি আয়শা নামের একজন লিখেছেন “শুল্ক ও কর বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফিতির এসব হিসেব বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ বোঝে না। সাধারণ মানুষ বোঝে তিন বেলা পেট ভরে খেতে পারা। পারবে খেতে? আপনি হয়তো পারবেন, গরিবরা যারা দারিদ্রসীমার নিচে আছে, খেটে খাওয়া মানুষ, তারা পারবে?”

আরাফাত সিদ্দিকী লিখেছেন, “দাম কমানোর মুরোদ নেই, শুল্ক মারানোর গোসাই।”

খান আল আমীন মাহমুদ জয় লিখেছেন “কর বা শুল্ক কতটুকু সঠিক আদায় হয় তা নিশ্চিত করা, অপ্রয়োজনীয় সরকারি ব্যয় বাদ দেওয়া এগুলো বেশি দরকার ছিল। অতিরিক্ত ভ্যাট এ সাধারণ জনগণ অসাধারণ হয়ে উঠবে না। অতীতে যা ছিল তার থেকে একটু ভালো থাকাই তো প্রত্যাশা।”

অর্থ বছরের মাঝে হঠাৎ শতাধিক পন্য ও সেবার ওপরে ভ্যাট ও সম্পূর্ণ শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। ঘোষণা অনুযায়ী, ওই রাতেই তা কার্যকর হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে ভোক্তা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সংগঠন এমনকি অর্থনীতিবিদরাও এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করছেন।

যদিও এনবিআর বলছে, এই শুল্কের আওতায় নিত্যপ্রয়োজনী পণ্য পড়বে না। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাদ্যপণ্য, মেডিসিন, রেস্তোরাঁর খাবার, মোবাইলে কথা বলা, বিদেশি জুস বা ফল এসবে বাড়তি করাপো করা হয়েছে, সেসবই নিত্যপণ্য। ফলে এতে নিঃসন্দেহে মানুষের ব্যয় বাড়বে।

জানা গেছে, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আন্তজার্তিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ থেকে বিভিন্ন শর্তে ৪৭০ কোটি ঋণ নিয়েছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। সেই শর্তে ছিল রাজস্ব আহরণ বাড়ানো। মূলত আইএমএফ’র শর্ত পূরণেই শুল্ক ও কর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

সারাবাংলা/জেআর/ইআ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) শুল্কারোপ

বিজ্ঞাপন

এক মিনিটে নেইমারের আয় ৩০ কোটি!
১২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪০

আরো

সম্পর্কিত খবর