ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টের রায় বাতিল করা হয়েছে। এ কারণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য আসামিরাও সাজা থেকে খালাস পেয়েছেন।
আদালতে আপিলের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল ও আইনজীবী কায়সার কামাল। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী জাকির হোসেন ভূইয়া ও মাকসুদ উল্লাহ। কাজী সালিমুল হক কামালের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ ও অনীক আর হক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।
রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, যে মামলায় কিছুই ছিল না, সে মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ সাজা পাঁচ বছর থেকে ১০ বছর করেন। এটি খুবই দুঃখজনক। সেই মামলার মধ্যে কোনো সারবত্তাই ছিলো না। অর্থাৎ বিচার ব্যবস্থা বলে কিছু ছিল না। ফ্যাসিস্ট সরকার যেভাবে বলতো সেভাবে রায় হতো। আজকে মনে হয়েছে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, আজ রায়ে আদালত বলেছেন, আপিল ইজ অ্যালাউড (আপিল মঞ্জুর)। আরও বলেছেন, বিচারিক আদোলতের যে রায় দেওয়া হয়েছে, হাইকোর্ট বিভাগের যে রায় দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাতিল করে দেওয়া হলো। আদালত বলেছেন, যারা আপিল করতে পারেননি, তারেক রহমানসহ সবাইকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এই প্রসিকিউশন ছিল বিদ্বেষমূলক ও প্রতিহিংসামূলক। কার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা? পুরো জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে। সারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা।
দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান জানান, মোট চারটি আপিল ছিল। চারটিই আদালত মঞ্জুর করেছেন। হাইকোর্ট ডিভিশন ও বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করেছেন। যারা আপিল করতে পারেননি, তাদেরও (খালাস দিয়েছেন)। যেহেতু আদালত মামলাটিকে ম্যালিসাস প্রসিকিউশন (বিদ্বেষপূর্ণ কার্যধারা) বলেছেন, তাই তারাও এ সুবিধা পেয়ে খালাস পেলেন। বাকি দুজনের মধ্যে একজন তারেক রহমান। আরেকজন কামাল সিদ্দিকী। রায়টি দুদককে জানাব। তারপর দুদক সিদ্ধান্ত নেবে।
এ মামলায় খালেদা জিয়ার আপিলের ওপর গত ৭ জানুয়ারি শুনানি শুরু হয়। চতুর্থ দিনে গতকাল মঙ্গলবার শুনানি শেষ হয়। আদালত আজ রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।
আর পাঁচ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে খালেদা জিয়া এবং ১০ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে কাজী কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের আপিল খারিজ করেন আদালত।
তিনটি আপিল ও রুলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট একসঙ্গে রায় দেন। রায়ে খালেদা জিয়ার আপিল খারিজ হয়। দুদকের রিভিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া রুল যথাযথ ঘোষণা করে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও কাজী সালিমুল হকের আপিল খারিজ করেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে গত বছর পৃথক আপিল করেন খালেদা জিয়া, শরফুদ্দিন আহমেদ ও কাজী সালিমুল হক। এরপর গত ৭ জানুয়ারি আপিল শুনানি শুরু হয়। গতকাল মঙ্গলবার শুনানি শেষ হয়। আজ রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।