Wednesday 15 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ওপর হামলা, পাহাড়ে প্রতিবাদ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপনডেন্ট
১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৩৭ | আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৪২

ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

রাঙ্গামাটি: মাধ্যমিকের নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয়পত্র বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দসম্বলিত গ্রাফিতি পুনর্বহালের দাবিতে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র কর্মসূচিতে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ নামক সংগঠনের সদস্যদের হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পাহাড়ের তিনটি ছাত্র ও নারী সংগঠন।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক দুইটি বিবৃতিতে হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানায় সংগঠনগুলো।

বিজ্ঞাপন

বিবৃতিদাতা সংগঠনগুলো হলো— সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) সহযোগী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) এবং প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সহযোগী সংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।

জনসংহতি সমিতির সহযোগী সংগঠন পিসিপি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘উগ্র-সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী ও কায়েমী স্বার্থবাদী সংগঠন ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ দাবির মুখে গত ১২ জানুয়ারি নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয়পত্র থেকে বাছবিচার ছাড়া জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কতৃর্পক্ষ ‘আদিবাসী’ শব্দসম্বলিত গ্রাফিতি বাতিল করে। কর্তৃপক্ষের এহেন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা আজ এনসিটিবি ভবন ঘেরাও কর্মসূচি গ্রহণ করে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি মোতাবেক সকাল ১১টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে “সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার” ব্যানারে মিছিল নিয়ে এনসিটিবি কার্যালয়ে অভিমুখে রওনা হয়। কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা উগ্র-মৌলবাদী ও সাম্পদায়িক গোষ্ঠী পুলিশের উপস্থিতিতে ক্রিকেট স্ট্যাম্প, চাপাতি ও লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় ১৭ জন আহত হন। এদের মধ্যে আদিবাসী নেতা অনন্ত বিকাশ ধামাই, আদিবাসী যুব ফোরামের সহসভাপতি টনি চিরান, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সহসভাপতি রেং ইয়ং ম্রো, সাংবাদিক জুয়েল মারাক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা, বাগাছাসের ছাত্রনেতা ডন যেত্রা গুরুত্বর আহত হন। হামলায় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল।’ হামলাকারীদের প্রতিহত করার কোনো ধরনের তৎপরতা দেখায়নি বলে অভিযোগ করা হয়েছে বিবৃতিতে।

বিজ্ঞাপন

তাদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘পাবর্ত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন মনে করে, আদিবাসীদের ওপর হামলা একটি পূর্বপরিকল্পিত হামলা। উগ্র-মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সংগঠন ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ এর আজকের কর্মসূচিটি মূলত আদিবাসীদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি বাঞ্ছাল করার হীন উদ্দেশ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। এর দায় অন্তবর্তীকালীন সরকার কোনোভাবে এড়াতে পারে না। মূলত সরকারের দ্বিধাগ্রস্ত রাষ্ট্রীয় পলিসির কারণে আদিবাসীদের মিছিলে হামলা হয়েছে।

সংগঠন দুটি অবিলম্বে নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সম্বলিত গ্রাফিতি পুনর্বহাল, পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসীদের’ সঠিক ইতিহাস ও পরিচিতি তুলে ধরাসহ সাংবিধানিকভাবে ‘আদিবাসীদের’ স্বীকৃতি দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

অন্যদিকে, ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) সভাপতি অঙ্কন চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা পৃথক এক বিবৃতিতে হামলার ঘটনায় সংগঠনটির প্রতিক্রিয়া জানায়।

বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, ‘রাজধানী ঢাকায় এনসিটিবির সামনে পুলিশের উপস্থিতিতে একটি উগ্র-সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন তথাকথিত ভূঁইফোড় সংগঠন কিভাবে পাহাড়িসহ দেশের সংখ্যালঘু জাতিসত্তার শিক্ষার্থী-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করতে পারে? আমরা মনে করি এ ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘সেটলারদের’ কিছু শিক্ষার্থী ও তাদের পেছনে উগ্রসাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। আমরা এই হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছি।’

হামলার ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় মন্তব্য করে পিসিপি নেতারা বলেন, ‘ঢাকার মতো জায়গায় আজকের এই হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি পরিকল্পিত হামলা। তথাকথিত “স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি” নামক উগ্র-সাম্প্রদায়িক সংগঠনটির লোকজন মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা হুমকি দিয়ে আসছে। আজ সকাল থেকে তারা ক্রিকেট স্ট্যাম্প ও লাঠিতে জাতীয় পতাকা বেঁধে এনসিটিবি ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিল। পরবর্তীতে “সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার” ব্যানারে এনসিটিবি ঘেরাও কর্মসূচির মিছিলটি সেখানে গেলে পুলিশের উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা ন্যাক্কারজনক। এতে অন্তত ১০-১৫ জন আহত হয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।’

বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় আরও বলেন, ‘উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ‘‘আদিবাসী” ইস্যুকে সামনে এনে পাহাড়ি জনগণকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জিগির তুলে দেশের অপরাপর মানুষের কাছে জাতিগত বিদ্বেষ সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এর পেছনে রাষ্ট্রীয় কোনো সংস্থার লোকজন উসকানি দিয়ে যাচ্ছে বলে আমরা মনে করছি।’

ইউপিডিএফের পিসিপি নেতারাও হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সারাবাংলা/এইচআই

আদিবাসী পিসিজেএসএস পিসিপি রাঙ্গামাটি সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর