Monday 20 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা
রংপুরে চালের বাজারে সিন্ডিকেটের থাবা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৭ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:০৬

রংপুর: সিন্ডিকেটের থাবায় শস্যভান্ডার খ্যাত রংপুরের চালের বাজার যেন ধীরে ধীরে অস্থির হয়ে উঠছে। এখন আমনের ভরা মৌসুম আর অতিরিক্ত চাল মজুদ থাকা সত্ত্বেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকারও বেশি। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।

বিশেষ করে শ্রমজীবী, কৃষিজীবী ও দিনমজুরসহ মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। তাই অতিদ্রুতই সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে ধরার তাগিদ ভুক্তভোগীদের। এদিকে, সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে হঠাৎ দামবৃদ্ধি হওয়ায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কৃষি বিভাগ।

বিজ্ঞাপন

আমনের ভরা মৌসুমে রংপুরে চালের দাম বাড়ানোর কারণ সম্পর্কে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন জানান, চলতি আমন মৌসুমে রংপুরে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৬৬ হাজার ৭২৩ হেক্টর জমি। সেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে এক লাখ ৬৬ হাজার ৯৪০ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪ মেট্রিক টন চাল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে জেলায় চালের চাহিদা রয়েছে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন। হিসাবে আড়াই লাখ মেট্রিক টনের বেশি উদ্বৃত্ত থাকবে।

তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় কেনোই বা বাড়ল চালের দাম। সারাবাংলার প্রতিবেদক গত কয়েকদিন জেলার বেশ কয়েকটি চালের মোকাম ও বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেন।

তিনি বাজার পর্যালোচনা করে দেখেছেন—গত ২০ দিনে প্রতিবস্তা ৩৫০-৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, মিল পর্যায়ে চালের দাম বৃদ্ধির কারণে খুচরা ও পাইকারিতে দাম বেড়েছে। বেশি দামে কিনতে হওয়ায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। এতে খুচরা পর্যায়ে চিকন চালের দাম কেজিতে সাত-আট টাকা এবং মোটা ও মাঝারি চালের দাম আট-দশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া আগের কেনা মজুতকৃত চালের কেজিতেও আট-দশ দাম বাড়িয়েছেন আড়তদাররা।

বিজ্ঞাপন

এদিকে মিল মালিকরা বলছেন, ‘বেশি দামে ধান কিনে চাল করতে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ায় প্রতি বস্তায় ২৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছেন তারা। সেটি খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা ৩৫০-৪০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। ফলে খুচরাতেও দাম বেড়েছে।

বিভাগের অন্যতম বড় চালের মোকাম রংপুর সিটি বাজার ও মাহিগঞ্জ মোকামে গিয়ে দেখা গেছে, ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালে ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে পাইকারিতে ১৫ দিনের আগের ৪২ টাকার মোটা চাল এখন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ৭০ টাকার নাজিরশাইল বেড়ে ৮০, কাটারিভোগ ৭২ থেকে ৮২, মিনিকেট ৭০ থেকে ৭৮, জিরাশাইল ৬৪ থেকে ৬৮, বিআর ৫৬ থেকে ৬৪, গুটি স্বর্ণা ৫০ থেকে বেড়ে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই হিসাবে নাজিরশাইলের বস্তায় বেড়েছে ৫০০ টাকা। এই দামে দুই মোকাম থেকে পাঁচ-দশ কেজি করে চাল কেনা যাচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে কেজিতে দুই টাকা করে বেড়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অটোরাইস মিলের এক স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘বেশি লাভের আশায় এখন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ধান মজুত করে রেখেছেন তাই বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। মিল মালিকদেরও অনেক খরচ এ কারণে বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে মিল মালিকরা বস্তায় ২৫০-৩০০ টাকা বাড়ালেও আড়তদার ও পাইকারি বিক্রেতারা ৩৫০-৪০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। সেটি আবার খুচরা বাজারে দুই-তিন টাকা কেজিতে বেড়ে যাচ্ছে।’

আর আড়তদাররা বলছেন, ‘মিল মালিকরা চাল মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে চালের দাম বাড়ানোর কারণে দাম বাড়িয়েছেন তারা। ফলে তাদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনে বেশিতে বিক্রি করছেন আড়তদাররা।’

পাইকারি ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা দাম বাড়ানোর কারণ দেখালেও বাস্তবতা হলো চালের দাম বৃদ্ধির ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। চাল কিনতে বাজারে আসা সাধারণ মানুষজন বলছেন, মিল মালিক ও আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে গত ২০ দিনে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

দিনমজুর তোহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য খাদ্যপণ্যের তো দাম আকাশ্চুম্বী এদিকে চালের দাম বাড়ায় স্বল্পআয়ের মানুষ বিশেষ করে আমরা যারা হতদরিদ্র তারা ভোগান্তিতে পড়েছি। আমাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে দাম। এখন মোটা চাল কিনতেও কষ্ট হচ্ছে।’

একই কষ্টের কথা উল্লেখ করে নরসুন্দরের কাজ করা পার্কের মোড়ের বুলবুল ইসলাম বলেন, ‘আয় তো বাড়েইনি উলটো চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। তিন বেলার পরিবর্তে দুই বেলা খাবার খাওয়া ছাড়া আর উপায় নাই। সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে উঠেছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।’

চালের সংকটকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘ভরা মৌসুমে রংপুরে চালের দাম বাড়ানোর কোনও কারণ দেখছি না। এটি সিন্ডিকেটের কারসাজি। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর রংপুরের সহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন বলেন, হঠাৎ করে বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়ে গেছে। এ ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে জোর মনিটরিং করা হচ্ছে।

সারাবাংলা/এসআর

চালের দাম বেড়েছে রংপুর সিন্ডিকেটের থাবা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর