ছাত্রীদের বেত্রাঘাত, প্রধান শিক্ষককে বেধড়ক পিটিয়ে পদত্যাগ
১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:০১
বরিশাল: ঝালকাঠি সদর উপজেলার নথুল্লাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের বেত্রাঘাত করার অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে বেধড়ক পিটিয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর আদায় করেছেন উত্তেজিত জনতা।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে। আহত প্রধান শিক্ষক মো. তোফাজ্জেল হোসনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানায়, সম্প্রতি বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন নিয়ে স্থানীয় বিএনপি সমর্থিত নেতাকর্মীর সঙ্গে প্রধান শিক্ষক মো. তোফাজ্জেল হোসনের বিরোধ চলছিল। কমিটির সাবেক সদস্যরা আওয়ামীপন্থী থাকায় তারা এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেন। তাই জেলা প্রশাসন ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস নতুন করে কমিটি করার নির্দেশনা দেয়। প্রধান শিক্ষক আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে সভাপতির নাম প্রস্তাব করে জেলা প্রশাসকের কাছে সম্প্রতি কমিটি দাখিল করে বলে অভিযোগ।
বুধবার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমানের কাছে ছাত্র ও অভিভাবকেরা একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এতে প্রধান শিক্ষক কিছুটা ক্ষুব্ধ হন।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান উপলক্ষে ছাত্রীদের অংশগ্রহণে নাচ-গানের মহড়া চলছিল। দুপুরে প্রধান শিক্ষক মো. তোফাজ্জেল হোসেন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে নাচের মহড়ায় ভুল করার অজুহাতে আটজন ছাত্রীকে বেত দিয়ে পেটান। এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে কয়েকজন ছাত্রী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরিস্থিতি খারাপ দেখে প্রধান শিক্ষক নিজের কক্ষ বন্ধ করে বসে থাকেন। পরে শিক্ষার্থীদের চিৎকার শুনে অভিভাবক ও এলাকাবাসী ছুটে আসেন।
ঘটনা জানতে পেরে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম ও পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে প্রধান শিক্ষক নিজ কক্ষ থেকে বের হতেই উপস্থিত লোকজন তাকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম তাকে নিজের গাড়িতে তুলে নেন। পরে জনতা তার গাড়ি অবরুদ্ধ করে প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন।
এদিকে আহত সাত শিক্ষার্থী ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। তারা সবাই সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির ছাত্রী।
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির আহত ছাত্রী জান্নাতী বলেন, আমাদের নাচের মহড়া চলমান অবস্থায় প্রধান শিক্ষক ভুল হওয়ার অজুহাতে হঠাৎ বেত দিয়ে পেটানো শুরু করেন। এতে অনেক ছাত্রী আহত হয়। অনেকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সুলতানা সোনিয়া বলেন, শিক্ষার্থীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গেছে। ওদের প্যানিক কেটে গেলে সুস্থ হয়ে যাবে।
প্রধান শিক্ষক মো. তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, আমি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রের শিকার। আমাকে অন্যায়ভাবে লাঞ্ছিত করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।
সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ছাত্রীদের পেটানোর ঘটনায় উত্তেজিত জনতা প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করে পদত্যাগে বাধ্য করেন। এ ঘটনার তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/এসআর