‘আপনাদের পায়ের নিচে মাটি নেই, মাটি কিন্তু সরে গেছে’
১৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:২৪ | আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:১৩
ঢাকা: বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, যারা নির্বাচনের জন্য অস্থির হয়ে গেছে, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন পছন্দ করছেন না, আমি বলব- এখন বাংলাদেশের মানুষ সজাগ হয়ে গেছে। আপনারা জরিপ করে দেখেন, আপনারা হয়তো বলবেন, আপনারা অনেক বড় ‘তালগাছ’ হয়ে গেছেন।
‘আসলে আপনাদের পায়ের নিচে মাটি নেই, মাটি কিন্তু সরে গেছে। বাংলাদেশের মানুষ আর চাঁদাবাজদেরকে, জায়গা দখলকারীদেরকে, খুনিদেরকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ‘যুব-কনভেনশন’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর যুব সংগঠন ‘ইসলামী যুব-আন্দোলন বাংলাদেশ’ এ যুব-কনভেনশন আয়োজন করে।
সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘যারা নাকি হাজার হাজার মায়ের কোল খালি করেছে, তাদেরকে আবার নির্বাচনের জন্য আহ্বান করছেন, আপনারা কী ইঙ্গিত দিচ্ছেন? এখনো মায়ের কান্না বন্ধ হয় নাই, এখনো মুগ্ধর পানি পানি শব্দ আমাদের কান থেকে সরে নাই। আর আপনারা তাদেরকে (আওয়ামী লীগ) নির্বাচনে আহ্বান করবেন? আবার তাদেরকে নির্বাচনে নিয়ে এসে আপনারা ক্ষমতা দখল করবেন? এই ধোকাবাজি বাংলাদেশের জনগণ বুঝে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময় লক্ষ্য করেছি, কেউ সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করনে, আবার কেউ তাদেরকে নির্বাচনে আহ্বান করেন, এইসব ধোকাবাজি বাংলাদেশের জনগণ এখন বুঝে ফেলেছে। আপনাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। এই স্লোগানের মাধ্যমে আপনারা কাদেরকে খুশি করতে চান? এটা কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ বোঝে। আমাদের পাশের দেশ এবং তাদের দোসরদের খুশি করবেন? তাদেরকে নিয়ে ক্ষমতায় যাবেন? এটা কখনো হবে না। হতে দেওয়া যাবে না।’
সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘পিআর সিস্টেমের মাধ্যমেই বাংলাদেশে জাতীয় সরকার গঠন হবে। আপনারা কেনো চাচ্ছেন না? আপনাদের ভয় কোথায়? আবার এই নির্বাচনের মাধ্যমে এককভাবে ক্ষমতায় গিয়ে আমাদের ওপরে জুলুমের স্ট্রিম রোলার চালাবেন? এটা হবে না। এই যুব-কনভেনশন থেকে ঘোষণা করছি পিআর সিস্টেমেই নির্বাচন হতে হবে। প্রত্যেক ভোটারের ভোটাধিকার বাস্তবায়ন হতে হবে। তার জন্য আন্দোলন করার দরকার হলে আন্দোলন করব। পিআর সিস্টেমের নির্বচান বাস্তবায়ন করেই ছাড়ব ইনশাল্লাহ।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, আপনারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নন। আপনারা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাজার হাজার মায়ের কোল খালি করার বিনিময়ে ক্ষমতায় এসেছেন। কিস্তু আপনাদের কার্যক্রমগুলো অনেকাংশে প্রশ্নবিদ্ধ। আপনাদের দুর্বলতা কোথায়?’
সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘৫৩ বছর যারা দেশ পরিচালনা করেছে, বাংলাদেশের মানুষকে নতুন কিছু বলার মতো, নতুন কিছু উপহার দেওয়ার মতো তাদের কিছু নাই, তারা দিতেও পারবে না। কারণ, ৫৩ বছরে আমরা দেখে ফেলেছি। নতুনভাবে আমাদের আর ভোঁতা দা দিয়ে ভয় দেখিয়ে লাভ নাই। কত মায়ের কোল খালি হয়ে গেল। এই মায়ের কোল খালি করার রাজনীতি বাংলার মানুষ আর দেখতে চায় না। বাংলাদেশের টাকা বিদেশে পাচার করবেন, বিদেশে বেগমপাড়া তৈরি করবেন— এটা বাংলার জনগণ দেখতে চায় না। এর পরিবর্তন আমাদেরকেই করতে হবে। এই পরিবর্তনের জন্য যদি আবার প্রয়োজন হয় আমরা আবার রক্ত দেব, প্রয়োজনে জীবন দেব, তারপরও সুন্দর দেশ গড়ার জন্য রাজপথে থাকব।’
যুব-আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর ইসলামের পক্ষে যেভাবে সুযোগ তৈরি হয়েছে, ৫৩ বছরের ইতিহাসে ইসলামের পক্ষে এত সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয় নাই। এখান আমাদের কার্যক্রম যদি করার মতো করতে পারি তাহলে ‘বাতিল’ কখনো বাংলার জমিনে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবে না। বাংলার জমিনে মাথা নিচু করেই থাকতে হবে।’
সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘সামনে আমাদের জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনের মধ্যে ইসলামের নীতি-আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে হবে যুবকদের। এ জন্য আমাদের শক্তি বাড়াতে হবে। শক্তি বাড়াতে হলে মাসে কমপক্ষে চারজনকে তোমরা দাওয়াত দিবা ইসলামের পক্ষে নিয়ে আসার জন্য। প্রত্যেকে যদি আমরা মাসে চারজনকে ইসলামের পক্ষে তৈরি করতে পারি, আমরা মন বলছে- সেদিন বেশি দূরে নয়, এই বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী নীতি-আদর্শ বাস্তবায়ন হবে।’
সংগঠনটির সভাপতি মওলানা মুহাম্মদ নেছার উদ্দীনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী ও মাওলানা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/এসআর