ভিক্ষুক, রিকশা আর টোকাইয়ের আবাসস্থল মতিঝিল মেট্রো স্টেশনের চারপাশ
১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৪০ | আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:০৬
ঢাকা: স্টেশনের প্রবেশ পথে রিকশার জটলা, এই পরিস্থিতির মধ্যেই শুরু হয় ভিক্ষুকের উৎপাত। রিকশাভাড়া মেটাতে গিয়ে খুচরা টাকা পকেটে নিতে পারেন এমন যাত্রীর সংখ্যা কম। এখানেই শেষ নয়, চলন্ত সিঁড়ির পাশে সড়কের মধ্যে এক রকম ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এর পাশেই ভবঘুরেরা বাসস্থান বানিয়ে নিয়েছে। রাজধানীর ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ মতিঝিল মেট্রো স্টেশনের চারপাশে এমন চিত্রই দেখা যায়।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) মতিঝিল মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, উত্তরা-উত্তরমুখী ট্রেনে উঠতে যে প্রবেশ পথ রয়েছে, সেখানে প্রচুর রিকশা। রাস্তা থেকে স্টেশনের প্রবেশ দ্বারে পৌঁছানোর রাস্তাটুকুও বাদ রাখেনি রিকশাচালকরা। তাদের সঙ্গে রয়েছে ভিক্ষুক। বয়স্ক মহিলারা যাত্রী নামার আগে হাত পেতে দাঁড়িয়ে থাকে। রিকশাওয়ালা ভাড়া রেখে খুচরা টাকা দিতেই ধরে টান দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে সেখানকার দোকানদাররা বলেন।
ফুটপাতে বাদামের দোকানদার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে শুরু হয় এই অবস্থা। অন্যদিন পুলিশ থাকলে সরিয়ে দেয়, আবার আসে। আজ দুপুর পর্যন্ত পুলিশ দেখিনি তাই এরাও সব একসঙ্গে রয়েছে।’
স্টেশনে প্রবেশের এই দিকটায় সিঁড়ি রয়েছে। মুখোমুখি দিকে স্কেলেটার বা চলন্ত সিঁড়ি। সেই সিঁড়ির ঠিক প্রবেশ মুখেই ভিক্ষুক। সিঁড়িতে প্রবেশের দিকে মূল সড়কের পাশে নোংরা হয়ে গেছে। স্কেলেটারের পাশে জায়গাটুকুতে কাঁথা, কম্বল বালিশ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখানে রাত্রি হলে মানুষ ঘুমায়। এই প্রবেশ পথ খুব কম যাত্রীরা ব্যবহার করেন। কারণ নোংরা পরিবেশ ও দুর্গন্ধে এই পথে চলাচল মুশকিল।
এ বিষয়টি নিয়ে কথা হয় উত্তরা পথের এক যাত্রীর সঙ্গে। সুজানা আহমেদ নামের ওই যাত্রী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগে তবু কিছুটা কম দুর্গন্ধ ছিল। ইদানিং খুব খারাপ অবস্থা। পায়ে ব্যাথা তাই সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে উঠতে পারছি না। তাই স্কেলেটার ব্যবহার করছি।’ এমন অভিযোগ অনেক যাত্রীরই।
মিরপুরের এক যাত্রী আনিসুর রহমান বলেন, ‘দিন দিন এই স্টেশনের পরিবেশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। বাইরে ভিক্ষুকের যন্ত্রণা, আর ভেতরেও এমন কিছু মানুষ যাতায়ত করেন যাদের ন্যুনতম ভদ্রতা, শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। লাইনে দাঁড়িয়ে প্রবেশের সময় ধাক্কা মেরে চলে যায়। সিটে বসার জন্য আরেকজনকে ধাক্কা দেয়। ন্যুনতম ভদ্রতা দেখায় না। যেন এটাই নিয়ম।’
তিনি আরও বলেন, ট্রেনের অপেক্ষারত যাত্রীদের বলা হয় লাইনের কাছে যেন না যায়, কিছু কিছু যাত্রী পারলে লাইনে নেমে গিয়ে দাঁড়ায়। কখনো কখনো আনসার ও পুলিশ সদস্যরা এসে সরিয়ে দেয়।
এই স্টেশনের উলটো দিকের বাহির হওয়া ও প্রবেশ পথগুলোর অবস্থাও এমন যে নামতেই রিকশার জটলা। সেই সঙ্গে ভিক্ষুক। যেখানে সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার কথা ছিল। মতিঝিল থেকে উত্তরা-উত্তর পর্যন্ত পথে মোট ১৬টি স্টেশন রয়েছে। এ সকল স্টেশন ও এর চারপাশ রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা থাকলেও এখন আর সেসব দেখা যায় না।
এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ফ্লাইওভার, ইউটার্ন, একমুখী চলাচলসহ নানা সময় নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও যানজট বেড়ে চলার বাস্তবতায় রাজধানীবাসীর স্বস্তি মেট্রোরেলে। এই গণপনিবহণে প্রতিদিন এক লাখের বেশি যাত্রী যাতায়াত করেন।
সারাবাংলা/জেআর/এমপি