সীমান্তে বিএসএফ’র হামলার প্রতিবাদে রাবিতে বিক্ষোভ
১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৪৬ | আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৪৯
রাবি: বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী-বিএসএফ’র হামলা ও দখল চেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আগ্রাসন বিরোধী ছাত্র-জনতা।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলা চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের সামনে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ’, ‘দিল্লির আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ’, ‘বিএসএফ হামলা করে, বিজিবি কি করে’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘সীমান্তে হামলা হলে, জবাব দিবে বাংলাদেশ’, ‘চাপাইয়ে হামলা হলে, জবাব দিবে বাংলাদেশ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিজিবির প্রত্যক্ষ মদদে ভারতীয় মাফিয়া বাহিনী এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদী জনগণ আজকের এই হামলা চালিয়েছে। বর্তমান সরকার এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, যেটা ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময়েও আমরা দেখেছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে না পারে তাহলে অতিদ্রুত এই সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করা উচিত।’
সমাবেশে রাবি ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রাকিব হোসেন বলেন, ‘ভারতের আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ধারা এই দেশে ধরে রাখতে চায়। ৫ আগস্টের পর পলাতক হাসিনাকে ফিরিয়ে না দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় তারা চক্রান্ত শুরু করেছে। তারা সাম্প্রদায়িক লড়াইকে বড় করে দেখিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়। আমরা সীমান্তে জয়ন্ত, ফেলানি হত্যা দেখেছি। সে বিচার আমরা পাই নাই। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দ্রুত সময়ে ভারতীয় হাই কমিশনকে ডেকে নিয়ে এটার জবাব চাইতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে, যদি এর বিচার করতে না পারে তবে এই সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ করা উচিত। আমরা দেখছি এই সংঘর্ষে সাধারণ জনগণকেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটা সাধারণ মানুষের লড়াই না, এটা সাধারণ মানুষের জীবনকে উৎকণ্ঠায় ফেলে দিচ্ছে। সশস্ত্র বাহিনীকে সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
রাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান মারুফ বলেন, ‘আমরা মনে করি বিজিবির প্রত্যক্ষ মদদে ভারতীয় মাফিয়া বাহিনী এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদী জনগণ আজকের হামলা চালিয়েছে। আমরা ভারতকে জানিয়ে দিতে চাই আমরা কখনো দিল্লির আগ্রাসন মানবো না। আমরা বারবার দেখেছি তারা সীমান্তে হত্যা চালিয়েছে, আমার দেশের মানুষকে কিভাবে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা ফেলানিকে দেখেছি কতদিন যাবৎ তার লাশ ঝুলে ছিল। আমাদের চোখের সামনে এখনো ফেলানির লাশ ঝুলে। ফেলানির লাশের হিসাব বাংলাদেশকে দিতে হবে। তারা আমাদের সঙ্গে যে আধিপত্যবাদ শুরু করেছে, আমাদের দেশের অবিভক্ত নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিসাব তারা দিচ্ছে না। আমরা বলে দিতে চাই পিন্ডির জিঞ্জির ছেড়েছি দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাই অতিদ্রুত ভারতীয় রাষ্টদূতকে ডেকে এর জবাব চাইতে হবে।’
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি শাকিল হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ভারতের যে আধিপত্য সেটার নমুনা আমরা বারবার দেখছি। ফেলানি থেকে শুরু করে জয়ন্ত দাস হত্যা পর্যন্ত প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডে ভারত আমাদের ওপর আধিপত্যের পরিচয় দিয়েছে। আমরা ভারতীয় জনগণের শত্রু নই, আমাদের লড়াই ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে। আমরা দেখতে পাচ্ছি দেশের বর্তমান সরকার এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, যেটা ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময়ে আমরা দেখেছি। সরকারকে স্পষ্ট বলে দিতে চাই ভারতীয় হাইকমিশনে এই হত্যাকাণ্ডের জবাব চাইতে হবে।’
বিক্ষোভ সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন রাবি শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব আল শাহরিয়া শুভ। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ক্রিয়াশীল সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এইচআই