Thursday 23 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পরীক্ষা ছাড়াই পাস ছাত্রলীগ নেত্রী!
ছাত্রী-শিক্ষককে বরখাস্তের দাবি, তদন্ত কমিটি গঠন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:২৯ | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫১

নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের বেরোবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশী। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

রংপুর: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশ নেয়নি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশী। এর পরও তাকে পাস করানোর অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের অধ্যাপক ড. রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন মহলে চলছে ব্যাপক সমালোচনা।

সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশী নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের বেরোবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রথম সারিতে থাকা এই নেত্রী ছিলেন শিক্ষার্থীদের কাছে আতঙ্কের নাম। গত ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদ আবু সাইদ হত্যার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

তবে বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ২ ডিসেম্বর গণিত বিভাগের মাস্টার্স ১ম সেমিস্টারের ৫১০২ কোর্সের মিডটার্ম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেই পরীক্ষায় ছাত্রলীগ নেত্রী ঐশী অংশ নেননি। তবে ঐশীর পরীক্ষার ফলাফল আসে। তাকে ২৫ মার্কের মধ্যে অধ্যাপক ড. রুহুল আমীন ১৬ নম্বর দিয়েছেন; আর উপস্থিতিতে দিয়েছেন ৫ মার্কের মধ্যে ৫। সবমিলিয়ে ২৫ মার্কের মধ্যে ২১ পেয়েছেন।

এ বিষয়ে কোর্স শিক্ষক অধ্যাপক ড. রুহুল আমীন বলেন, ‘আমি মাস্টার্স ১ম সেমিস্টারের সব বিষয় জুলাই-আগস্টের আগেই সম্পন্ন করেছি। তখন ঐশী পরীক্ষা দিয়েছিল।’

তবে সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশীর একাধিক সহপাঠী জানান, ওই কোর্সের মিডটার্ম পরীক্ষার দিন সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশীকে পরীক্ষা দিতে দেখেননি। তবে অধ্যাপক ড. রুহুল আমীন ঐশীর পরীক্ষা অন্য সময় বা অন্য কক্ষে পরীক্ষা নিয়েছেন কিনা সহপাঠীরা তা বলতে পারছেন না।

বিজ্ঞাপন

গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. কমলেশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমি জুলাই অভ্যুত্থানের পরে ওই শিক্ষার্থীকে বিভাগে কখনো দেখিনি।’

এ বিষয়ে জানতে সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশীর মুঠোফোনে একাধিবার কল করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে গণমাধ্যমে দেওয়া তার বক্তব্যে তিনি দাবি করেছেন, ওই পরীক্ষা তিনি দিয়েছেন। তবে কবে দিয়েছেন সেই তারিখটা তার মনে নেই।

গণিত বিভাগের মাস্টার্সের পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক হান্নান মিয়া বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কোর্স টিচাররা এসব দেখাশোনা করেন। কোর্স টিচাররা আমাদের যে রেজাল্ট দেন আমি সেটা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরে পাঠাই।’

ঘটনায় তদন্তে কমিটি গঠন

নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেত্রী সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশীকে পরীক্ষা ছাড়াই উত্তীর্ণ করে দেওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তানজিউল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন— সদস্য সচিব ও গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. হান্নান মিয়া এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দফতরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াছ প্রামানিক। এই তদন্ত কমিটিকে অবিলম্বে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

ঐশীর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির পর থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে ওঠে। বিভিন্ন হলে সিট বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের হুমকি-ধামকি দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অনৈতিক সুবিধা আদায় করার মতো অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, ঐশী ছাত্রলীগের নেত্রী হওয়ায় ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সহযোগিতায় অনার্সের গণ্ডি পেরিয়েছেন। এছাড়া অনেক শিক্ষককে সরকারবিরোধী ট্যাগ দিয়ে একাডেমিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেত্রী ঐশীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী টিপু সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন তিনি। ছাত্রলীগের নেতাদের দিয়ে এমন কোনো অপরাধ নেই যে করেনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গুম খুন করার হুমকি-ধামকি দিয়েছিলেন। তাকে অনতিবিলম্বে বরখাস্ত করতে হবে।’

কে এই অধ্যাপক ড. রুহুল আমীন

আওয়ামীপন্থি শিক্ষক অধ্যাপক ড. রুহুল আমীন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন উপাচার্যের সময় প্রক্টর, হলের প্রভোস্ট, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক গুণমান নিশ্চিতকরণ সেল আইকিউএসি’র পরিচালক ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, অধ্যাপক ড. রুহুল আমীনের পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সাবেক সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যও রয়েছেন পরিবারের সদস্য। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর থেকে অধ্যাপক ড. রুহুল আমীন নিজেকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত দাবি করছেন।

এদিকে ৫ আগস্টের পর নতুন উপাচার্য যোগদানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দফতরের পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে হতে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞান অনুষদের সমন্বয়ক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অপরদিকে এসব ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে অধ্যাপক ড. রুহুল আমীনের সমালোচনা করে স্থায়ী বরখাস্তের দাবি জানিয়েছে সাবেক বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা।

গণিত বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও বেরোবি শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আল মুরসালিন মুন্না ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লিখেন— ‘বাহরে বাহ্, খুবই সৎ শিক্ষক, যিনি কোনো কারণ ছাড়াই ছাত্রদলের কারও খাতা নিয়ে বের করে দিতো, পরীক্ষা দিতে হবে না বলতো, সেই সৎ শিক্ষকই দেখি ছাত্রলীগের নেত্রীকে পরীক্ষায় বসা ছাড়াই মার্কস দেয়!!! তিনিই নাকি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ শাখার পরিচালক!!’

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী যদি পরীক্ষা না দিয়েই পাস করে তার মানে এখানে সংশ্লিষ্ট কোর্সের শিক্ষকের গাফিলতি আছে। ঐশী ছাত্রলীগের নেত্রী, আর শিক্ষক আওয়ামী লীগের মতাদর্শের- তাই বলে অনৈতিক সুবিধা দিবে? এটা একাডেমিক দুর্নীতি। অতিদ্রুত শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে।’

এ বিষয়ে ইমরান হাসান নামে গণিত বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ছাত্রলীগের দোসরদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বরখাস্ত করা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা হলে এর দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকেই নিতে হবে।’

সারাবাংলা/পিটিএম

ছাত্রলীগ নেত্রী নিষিদ্ধ ঘোষিত পরীক্ষা পাস বেরোবি

বিজ্ঞাপন

'জানালা বাংলাদেশ'র ২৪ বছর পূর্তি
২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:২৯

আরো

সম্পর্কিত খবর