Tuesday 28 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জনশক্তি রফতানিতে সিন্ডিকেট ভাঙার দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:২৫ | আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৩০

টিকেট সিন্ডিকেট বন্ধ এবং সৌদি আরবে একক ভিসার ছাড়পত্র সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন

ঢাকা: দেশের জনশক্তি রফতানিতে সিন্ডিকেট ভাঙার পাশাপাশি টিকেট সিন্ডিকেট বন্ধ এবং সৌদি আরবে একক ভিসার ছাড়পত্রের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন জনশক্তি রফতানিকারকরে সংগঠন বায়রা’র একাংশের নেতারা। অন্যথায়  বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন বলে জানা তারা।

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) এর সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্টের উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

জনশক্তি রফতানি খাতে বিভিন্ন অনিয়ম ও বৈষম্যমূলক নীতি, ফ্যাসিস্ট সরকার কর্তৃক বিভিন্ন নিয়ম-কানুন, মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জনশক্তি রফতানি ও সৌদি আরবে একক ভিসায় সত্যায়নবিহীন ডিমান্ডের অনুকূলে বর্হিগমন ছাড়পত্র বন্ধ এবং কতিপয় ট্রাভেল এজেন্সি কর্তৃক টিকেট সিন্ডিকেট করে টিকেটের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্টের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বায়রার সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এএইচ সেলিম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বিগত স্বৈরাচারী ও বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কিছু ভুল নীতি ও কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী, লোভী, অপরাধী ও ষড়ষন্ত্রকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, গত ২০১৭-১৮ ও ২০২২-২৪ সালে সিন্ডিকেটের মাস্টারমাইন্ড শ্রী মোহাম্মদ আমিন, রহুল আমিন স্বপন, মোহাম্মদ নুর আলী মিলে প্রথমে ১০টি পরে ১০০ টি রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়ে একটি সিন্ডিকেট প্রতিষ্ঠা করে। এই সিন্ডিকেট সদস্যদের বাহিরে অন্য কোন রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়াতে কর্মী রফতানি করতে পারতো না। দুই পিরিয়ডে সিন্ডিকেটের মাস্টারমাইন্ড ও তাদের সদস্যরা এই সেক্টর থেকে অতিরিক্ত আদায় করেছে প্রায় ১১ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। স্বৈরাচারী সরকার এদের কোন বিচার করেনি, কারণ তাদের আশ্রয়ে, প্রশ্রয়ে ও প্রত্যক্ষ সমর্থনে সিন্ডিকেট হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারও তাদের কোন বিচার করেনি। এই বিচারহীনতার কারণে সিন্ডিকেটের মাস্টারমাইন্ড আমিন, স্বপনেরা পুনরায় মালয়েশিয়াতে সিন্ডিকেট করে অভিবাসী কর্মী রফতানি করার চেষ্টা করছে।

বিজ্ঞাপন

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ঘুষ বাণিজ্য ও স্বৈরাচারী সরকারের রাজনৈতিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থে সিন্ডিকেট করে মালয়েশিয়ান শ্রমবাজার দখল করে নেন। ফলশ্রুতিতে অভিবাসন ব্যয় পূর্বে তুলনায় কয়ে গুন বেড়ে যায়, অধিকাংশ জনশক্তি রফতানিকারক ব্যবসা বঞ্চিত হয়, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়, দেশে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়, হাজার হাজার কর্মী আটকা পড়ে যায় এবং আঁতুরঘরে বাজারটি বন্ধ হয়ে যায়।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে, দেশপ্রেমিক অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে কিন্তু মন্ত্রনালয় ও বিএমইটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মকান্ডে কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং মনে হচ্ছে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের প্রেতাত্মা এখনো মন্ত্রনালয় ও বিএমইটির প্রতিটি টেবিলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা শুনতে পাচ্ছি ঐ চিহ্নিত চক্রটি পুনরায় সিন্ডিকেট করে মালয়েশিয়াতে জনশক্তি রফতানি করার পাঁয়তারা করছে এবং তাদেরকে নাকি আমাদের মন্ত্রনালয়ের কেউ কেউ সহযোগিতা ও করছেন।

লিখিত বক্তব্যে এমএএইচ সেলিম বলেন, ‘২০১৭-১৮ ও ২০২২-২৪ সালে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী রফোনির যে তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে, তা সরকার ভালভাবেই জানে। আশা করি, সরকার সিন্ডিকেট ফাঁদে পা দেবে না এবং বাজারটি সকলের বৈধ রফতানিকারকদের জন্য উন্মুক্ত রাখবে, সেই সাথে যে বা যারা সিন্ডিকেট করে জনশক্তি রফতানির চেষ্টা করবে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে। যদি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়া বা অন্য কোন দেশে অভিবাসী কর্মী পাঠানোর চেষ্টা করা হয়, তবে তাহলে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অবিলম্বে এই সিন্ডিকেট প্রথা ভেঙে দিয়ে প্রতিটি রুটে যৌক্তিক ভাড়া ও অভিবাসী কর্মীদের জন্য লেবার ফেয়ার চালু করার দাবি জানাচ্ছি। টিকেটের মূল্য বৃদ্ধি অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধি অন্যতম কারণ।’

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘আমরা বিশ্বাস করি বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার অভিবাসী কর্মীবান্ধব। বিমানবন্দরে অভিবাসী কর্মীদের জন্য ভিআইপি লাউঞ্জ খোলা, বিমানবন্দরে তাদের হয়রানি বন্ধ করা, রেমিটেন্স বিপরীতে প্রণোদনা দেওয়া, ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ দেয়া ও পেনশন স্কিম চালু করার সহ অনেকগুলো উদ্যোগ গ্রহন করেছে। আমরা এই সব উদ্যোগ গ্রহন করার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো কম সময়ে, কম খরচে অধিক সংখ্যায় কর্মী প্রেরণ করা এবং সাথে তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা। খরচ এবং কল্যাণ নিশ্চিত করতে হলে সকল প্রকার প্রকাশ্য ও অপকাশ্য সিন্ডিকেট বিলুপ্ত করতে হবে ও কম সময়ে পাঠাতে হলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতা দুর করতে হবে।

এ খাতে আরও অনেক সমস্যা আছে, যেমন- লাইসেন্সের শ্রেণীবিন্যাস, সাব এজেন্ট প্রথা বৈধ কারণ, জামানতের লভ্যাংশ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিককে না দিয়ে সরকার নিয়ে যাওয়া, বিএমইটি ও মন্ত্রনালয়ের দুর্নীতি তো আছে। সরকারের পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু সরকারের কাজের ও নীতির পরিবর্তন এখনো হয়নি। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক। এসব দাবিগুলো দ্রুত মেনে নেওয়ার জন্য আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

সারাবাংলা/ইএইচটি/এনজে

জনশক্তি বায়রা সম্মেলন সিন্ডিকেট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর