Wednesday 29 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ট্রেন যাত্রায় ভোগান্তিতে যাত্রীরা, বাসে যেতে অনীহা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:১৮ | আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৫

যাত্রীদের বাস ভ্রমণে অনীহার প্রকাশ। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: খালি পরে আছে প্লাটফর্ম। ট্রেন আছে যাত্রী নেই। যাত্রী আছে তো ট্রেন ছাড়ার নাম নেই। ট্রেন কখন ছাড়বে নাকি ছাড়বে না সে তথ্যও কেউ দিতে পারছেন না। ২৭ জানুয়ারি মাঝ রাতে রেলওয়ের রানিং স্টাফরা কর্ম বিরতি শুরু করলে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যে কারনে যাত্রিরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। বেশিরভাগ যাত্রী ট্রেন চলাচল বন্ধের কথা না জেনে স্টেশনে চলে এসেছেন। ট্রেন না ছাড়ায় স্টেশনে বসে আছেন অনেকে। এসব যাত্রীদের জন্য বিআরটিসি বাসের ব্যবস্থা করলেও অনেকেই অনীহা প্রকাশ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

রেল স্টেশন পরিদর্শন করে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, আলোচনার দরজা খোলা আছে, প্রয়োজনে দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনা করা হবে, তবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের হাতে কিছু নেই।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, গন্তব্যে পৌঁছানের জন্য অনেক যাত্রী সকাল থেকে কমলাপুর স্টেশনে এসেছেন। আগে থেকে তারা টিকিটও সংগ্রহ করেছেন। তবে ছাড়ছে না ট্রেন। প্ল্যাটফর্মে বসে থাকাই তাদের ভরসা। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নারী ও শিশুরা। তবে কখন ট্রেন ছাড়বে সে বিষয়ে জানে না কেউই।

রাজশাহীর যাত্রী আশরোফা নাজনীন জানান, আগে থেকে জানলে স্টেশনে আসতাম না। মাতুয়াইল থেকে এসেছি সকালে। জরুরীভাবে যেতে হবে রাজশাহী। ট্রেন চলবেনা জানতে পারলে বাসে যেতাম। এখন বাচ্চাদের নিয়ে কি মুশকিলে পড়েছি। নুরুল ইসলাম যাবেন রংপুর। তিনি বলেন, এত বড় ঘটনা একটা নোটিশ তো দিতে পারতো রেলওয়ে। এখন কতক্ষন বসে থাকবো স্টেশনে। বিআরটিসি বাসের ব্যবস্থা করছে। এটা হাস্যকর। বাসে যাবোনা বলেই তো ট্রেনের টিকিট কেটেছি। ইফতেখার আহমেদ বলেন, যাদের হাতে ট্রেনের চাকা, তাদেরকে বঞ্চিত করলে তো এমন পরিস্থিতি হবেই।

ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে জানা গেছে, প্রতিদিন কমলাপুর থেকে ৪০ জোড়া আন্তঃনগর এবং ২৪ জোড়া মেইল ট্রেন ছেড়ে যায়। রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি যদি প্রত্যাহার না হয় তাহলে সারাদিন এসব ট্রেনের কোনটিই ছেড়ে যাবে না। আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি প্রত্যাহার না হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে ট্রেন ছাড়ছে না। যদি তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে তবেই হয়তো ট্রেন ছাড়বে। এখনই নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। ট্রেন না ছাড়লে যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। এজন্য যেকোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে কমলাপুর স্টেশনে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শন করেছেন রেলপথ উপদেষ্টা ফাওজুল কবীর খান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যাত্রীদের জিম্মি করে বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মসূচি দুঃখজনক। তিনি বলেন, এতে সাধারণ মানুষই বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। স্টাফদের দাবির বিষয়ে আমাদের আলোচনার দরজা সব সময় খোলা আছে। প্রয়োজনে আমরা তাদের সঙ্গে আবারো আলোচনা করবো এবং অর্থ বিভাগেও তাদের এই দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করবো। যদিও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার কেবল অর্থমন্ত্রণালয়ের বলে যোগ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে বিআরটিসি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। যাতে করে রেলের যে রুটগুলো আছে সেখানে যাত্রীরা যেতে পারেন।

এদিকে রেলের বিকল্প হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ রেল রুটসমূহে যাত্রী পরিবহনের জন্য বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন হতে চট্রগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, কুমিল্লা, বগুড়া ও ময়মনসিংহগামী যাত্রীগণ তাদের ক্রয়কৃত রেল টিকেটে বিআরটিসি বাস সার্ভিসের মাধ্যমে ভ্রমণ করতে পারবেন এবং এসকল স্থান হতে ঢাকাতে এই সার্ভিসের মাধ্যমে আসতে পারবেন। কিন্তু বাসে যেতে অনেক যাত্রী অনীহা প্রকাশ করেছেন। তাদেরকে টিকিটের টাকা ফেরত দিচ্ছে রেলওয়ে।

নিয়ম অনুযায়ী একজন রানিং স্টাফ (চালক, সহকারী চালক, গার্ড, টিকিট চেকার) ট্রেনে দায়িত্ব পালন শেষে তার নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় (হেডকোয়ার্টার) হলে ১২ ঘণ্টা এবং এলাকার বাইরে (আউটার স্টেশন) হলে ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পান। রেলওয়ের স্বার্থে কোনো রানিং স্টাফকে তার বিশ্রামের সময়ে কাজে যুক্ত করলে বাড়তি ভাতা-সুবিধা দেওয়া হয়। যা রেলওয়েতে ‘মাইলেজ’ সুবিধা হিসেবে পরিচিত।

২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে ওই মাইলেজ সুবিধা বাদ দিয়ে তা সর্বোচ্চ ৩০ কর্মদিবসের সমপরিমাণ করার কথা জানানো হয়। এ ছাড়া বেসামরিক কর্মচারী হিসেবে রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক ভাতায় মূল বেতনের সঙ্গে পাওয়া ভাতা যোগ করার বিষয়টিও বাদ দেওয়া হয়। এরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রানিং স্টাফরা। এই মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন রানিং স্টাফরা। কয়েক দফায় অতিরিক্ত কাজ থেকে বিরত থাকাসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। তবে বিভিন্ন সময়ে তৎকালীন রেলওয়ের মহাপরিচালক, রেলসচিব, রেলমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে তারা আন্দোলন থেকে সরে আসেন। কিন্তু দাবি আর পূরন হয়নি। ফলে আবারো তারা আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন।

সারাবাংলা/জেআর/এনজে

কমলাপুর রেলস্টেশন কর্মবিরতি বন্‌ধ বাস বিআরটিসি যাত্রী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর