পুলিশ হেফাজতে ট্রাকচালককে নির্যাতন, ওসিসহ ১৫ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা
২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:২৩ | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৫১
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় পুলিশ হেফাজতে রেখে রোকন মোল্লা (৩৬) নামে এক ট্রাক চালককে নির্যাতনের অভিযোগে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম ও এনামুল হকসহ ১৫ পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ জানুয়ারি) সিরাজগঞ্জ আমলী আদালতে ট্রাক চালক রোকন মোল্লা নিজেই বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন।
রোকন পাবনা জেলার ফরিদপুর থানার নেছরাপাড়া এলাকার রহমত মোল্লার ছেলে।
এই মামলায় অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন, সলঙ্গা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) শেখ তাজউদ্দিন আহমেদ, উল্লাপাড়া থানার সাবেক সাব-ইন্সপেক্টর আব্দুস ছালাম, সাব-ইন্সপেক্টর (সলঙ্গা থানা) মুনসুর রহমান, সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর (সলঙ্গা) আব্দুল কুদ্দুসসহ ১৫ জন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৫ মে ২০২৪ এ ট্রাক নিয়ে রোকন মোল্লা বগুড়া থেকে পাবনা যাওয়ার সময় রাত ১টায় ঢাকা-নগরবাড়ি মহাসড়কের কাওয়াক মোড়ে রাত্রিকালীন ডিউটিরত পুলিশের পিক-আপের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানার সাবেক ওসি আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম ড্রাইভার রোকন মোল্লার দিকে রিভলভার তাক করে। ট্রাক চালক ভয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে সিরাজগঞ্জ রোডের দিকে দ্রুত ছুটতে থাকলে পুলিশের গাড়িও পিছু নেয়। খবর পেয়ে সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক ওই ট্রাকটি ধরতে পিছু নেয়। পরে সলঙ্গা থানার রাজশাহী-পাবনা মহাসড়কের হরিণচড়ায় ট্রাক চালক রোকন মোল্লাকে আটক করে মারধর করে ও বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে রাস্তার পাশে পুকুরে নামিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে পুকুর থেকে তুলে অভিযুক্ত আসামী সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক উল্লাপাড়া মডেল থানার সাবেক ওসি আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম ট্রাক ড্রাইভার রোকন মোল্লাকে গুলি করে মেরে ফেলতে বলে।
পরে আসিফ তার ডান পায়ে গুলি করে সলঙ্গা থানায় নিয়ে ৩টি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তী অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা অর্থপেডিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এতে ট্রাক চালক রোকন মোল্লার ডান পা কেটে ফেলা হয়।
এ বিষয়ে মামলার বাদি রোকন মোল্লা বলেন, ‘উল্লাপাড়া থানার সাবেক ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম পিস্তল দিয়ে তাকে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছে। তার একটি পা নেই। তিনি দাবি করেন দীর্ঘদিন মিথ্যা মামলায় কারাগারে থাকার কারণে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে মামলা করতে দেরি হয়েছে। দীর্ঘদিন পর কারাভোগ শেষ করে জামিনে বেড়িয়ে এসে তিনি মামলা করেছেন।’
ট্রাক চালক রোকন মোল্লা তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবি করেন।
অভিযুক্ত উল্লাপাড়া থানার সাবেক ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম (বর্তমানে রাজবাড়ী জেলায় রেলওয়ে পুলিশে কর্মরত) বলেন, ‘মামলার বিষয়টি শুনেছি। বাদী নিজেই একজন আন্তঃজেলা ডাকাত দলের শীর্ষ নেতা। তার বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছয় জেলায় কমপক্ষে ২৮টি মামলা রয়েছে। ওইদিন ডাকাতের ঘটনায় তাকে ধরতে পায়ে গুলি করা হয়।’
সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক (বর্তমান পাবনা জেলার সিআইডি শাখায় কর্মরত) জানান, ওইদিন রোকন মোল্লা দলবল নিয়ে ডাকাতি করতে এসেছিল। রোকন একজন ডাকাত। ঘটনার দিন ডাকাতি করার সময় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। একদল পুলিশকে ট্রাকের নিচে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন রোকন মোল্লা। পরে পুলিশ বাধ্য হয়ে তাকে ধরতে পায়ের গুলি করে।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘আদালত বরাবর রোকন মোল্লার এজাহার জমা দেওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সারাবাংলা/এমপি