Thursday 30 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিন্ডিকেটের জালে দরপত্র
রাবির ৯ বাসের দাম ১৮ লাখ টাকা!

এম শামীম, রাবি করেসপন্ডেন্ট
২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:১৫ | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:১৬

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

রাজশাহী: প্রথমবার দলীয় প্রভাব থাকায় দরপত্র বাতিল করা হয়। আর দ্বিতীয়বার দরপত্র জমা দেওয়ার শর্তই পূরণ হয়নি। এমনকি প্রথমবারের চেয়ে দ্বিতীয়বার প্রস্তাবিত দামও অর্ধেক ছিল। এই সুযোগে সেই অর্ধেক দামেরও অর্ধেকের কম মূল্যে নয়টি বাস কিনে নিয়েছেন এক ব্যক্তি। অভিযোগ রয়েছে, নির্ধারিত সময়ের পর তিনি দরপত্র জমা দিয়েছিলেন। তার পরও মাত্র ১৮ লাখ টাকার চেয়ে কিছু বেশি দামে নয়টি বাস কিনে নিয়েছেন রাজশাহীর মতিহার থানার ডাঁশমারী এলাকার ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পুরোনো নয়টি বাস ও তিনটি মাইক্রোবাস বিক্রির জন্য গেল বছরের ২১ অক্টোবর প্রথম দরপত্র আহ্বান করা হয়। তবে ওই দরপত্র কিনতে বা জমা দিতে আসা একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল নিজেদের ‘বিএনপির নেতাকর্মী’ পরিচয় দেওয়া কয়েক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তারপর বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে দরপত্র বাতিল করে কর্তৃপক্ষ।

পরে দ্বিতীয়বার দরপত্র আহ্বান করা হয়। যা ক্রয়ের শেষ সময় ছিল ১৫ জানুয়ারি এবং জমার শেষ সময় নির্ধারণ করা হয় ১৯ জানুয়ারি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পর দরপত্র জমা দিয়েও বাস কেনার সুযোগ পান মতিহার থানার ডাঁসমারী এলাকার রফিকুল ইসলাম। সিন্ডিকেট করে অন্য তিনি অন্য কাউকে দরপত্র জমার সুযোগ দেননি বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া, তার অর্থনৈতিক অবস্থা অনুযায়ী এতগুলো বাস তিনি কিনতে পারেন না বলেও জানিয়েছেন একাধিক ঠিকাদার। অন্য কোনো ব্যক্তি তাকে দিয়ে দরপত্র কিনিয়েছেন বলেও জানান তারা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রফিকুল ইসলাম।

পরিবহন দফতর সূত্রে জানা গেছে, গেল বছরের ২১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো গাড়ি বিক্রির জন্য মোট ১২টি দরপত্র আহ্বান করা হয়; যা কেনার সর্বশেষ তারিখ ছিল ১৭ নভেম্বর ও জমার তারিখ ছিল ১৮ নভেম্বর। এর মধ্যে ঠিকাদাররা ৪৩টি দরপত্র দাখিল করেন। ৪৩টি দরপত্রের মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানই জমা দেয় ৩৬টি। সিন্ডিকেট করে দরপত্র দাখিল ও মূল্য কম দেওয়ার অভিযোগে বাতিল করে কর্তৃপক্ষ।

পরে ফের নতুন করে দরপত্র আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দফতর। যা কেনার শেষ সময় নির্ধারণ করা হয় ১৫ জানুয়ারি এবং জমার শেষ সময় ছিল ১৯ জানুয়ারি। আগেরবার নয়টি বাসের প্রতিটির প্রস্তাবিত দাম ১০ লাখ থাকলেও দ্বিতীয়বার তা করা হয় সাড়ে ৫ লাখ। আর মাইক্রোর দাম ধরা হয় ৩ লাখ। ১২টি পণ্যের বিপরীতে দু’টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও একজন ব্যক্তি ৩৬টি দরপত্র কিনে দাখিল করে। নিয়মানুসারে ১২টি পণ্যের জন্য কমপক্ষে ৩৬টি দরপত্রই দাখিল করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, গত ১৯ জানুয়ারি ৩টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত দরপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল। কিন্তু কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দরপত্র দাখিল করেননি। পরে ৩টা ৪৬ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের দফতরে পরিবহণ প্রশাসকের উপস্থিতিতে সিলগালাকৃত বাক্সের তালা খোলা হয়। তালা খোলার পর দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও একজন ব্যক্তি একসঙ্গে ৩৬টি দরপত্র জমা দেন। কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণও করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দরপত্র দাখিল করা দুই প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- শাহী মেটালিক হাউস ও মেসার্স শিথিল কনস্ট্রাকশন এবং ব্যক্তি হচ্ছেন মো. রফিকুল ইসলাম। দরপত্রে রফিকুল নয়টি বাসের মধ্যে প্রতিটির জন্য সর্বনিম্ন মূল্য দিয়েছেন ২ লাখ ১ হাজার ও সর্বোচ্চ মূল্য দিয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৩০০ টাকা। এ ছাড়া তিনটি মাইক্রোর প্রতিটির সর্বনিম্ন মূল্য দিয়েছেন ১৭ হাজার ৯ শত টাকা ও সর্বোচ্চ মূল্য দিয়েছেন ১৮ হাজার ৭ শত টাকা। তার মধ্যে মাইক্রো তিনটির দাম অনেক কম হওয়ায় বিক্রি করবেন না বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। তবে বাসগুলো দাখিলকৃত দামেই কিনতে পারেন রফিকুল ইসলাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও পরিবহণ দফতরসংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি ও একজন বাস মেকানিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাসগুলো অবস্থাভেদে তিন থেকে সাত লাখ টাকা দরে বিক্রয় করা সম্ভব। অধিকাংশ বাসের ইঞ্জিন ও বডি জাপানি হওয়ায় দাম একটু বেশি পাওয়া যাবে। এ ছাড়া, কয়েকটি বাসের ইঞ্জিনের অবস্থা এখনো ভালো আছে। এমনকি বাসগুলো কেজি দরে বিক্রি করলেও দুই লাখের বেশি টাকা পাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন অনেকে।

দরপত্রে সিন্ডিকেটের বিষয়ে জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি কোনো সিন্ডিকেট করে দরপত্র কিনিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দফতরে আমি নিয়মিত যাতায়াত করি। আমি এসব টেন্ডার সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজনের পরামর্শে আমি মূল্য নির্ধারণ করে দাখিল করেছি। আমার মূল্য বেশি থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হয়তো আমাকে বাসগুলো হস্তান্তর করবে।’

অর্থের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমি তৃতীয় শ্রেণির ঠিকাদার হিসেবে এর আগেও বিশ্ববিদ্যলয়ে কয়েকটি কাজ করেছি। আমার পরিবার ও আত্মীয়দের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়েছি।’ তবে ঠিকাদার হলেও কোনো ধরনের আয়কর দেন না তিনি।

বাসের টেন্ডার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘এর আগেও সিন্ডিকেট হওয়ার কারণে ও মূল্য কম থাকায় দরপত্র বাতিল করা হয়েছিল। তবে এবার সিন্ডিকেট করা হয়েছে কিনা তা জানি না। মোটামুটি মূল্যে দরপত্র দাখিল করায় বাসগুলো আমরা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তবে নির্দিষ্ট সংখ্যক দরপত্র বিক্রি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে যান।

সারাবাংলা/পিটিএম

দরপত্র বাস বিক্রি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর