দুর্বলতার সুযোগে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে পারে: উপদেষ্টা আদিলুর
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৪৪ | আপডেট: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৪৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: যে কোনো দুর্বলতার সুযোগে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে পারে বলে ছাত্র-জনতাকে সতর্ক করেছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গনে অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘বাংলাদেশকে বদলে দেওয়ার জন্য, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য যে সংগ্রাম, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম, একটি ফ্যাসিবাদি শাসনের বিরুদ্ধে যে সফল সংগ্রাম, সেটার ওপর দাঁড়িয়ে আজকের বইমেলা। আমরা আশা করি, এ সংগ্রামে অংশ নেওয়া সব ছাত্র এবং ছাত্রী তাদের কথাগুলো লিখবে। আমরা আশা করি, শহিদদের কথা লেখা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের একথা যেন প্রতিনিয়ত মনে থাকে যে, রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা আজ বেঁচে আছি। যে ঐক্য রচিত হয়েছিল ৫ আগস্ট, সেই ঐক্য যেন কোনো শক্তি ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা না করতে পারে। আমাদের যেন একথা মনে থাকে- যে কোনো দুর্বলতার সুযোগে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আগ্রাসন এবং বিভিন্ন ধরনের আক্রমণ থেকে কিন্তু আমরা মুক্ত নই।’
‘জনতার ঐক্য, ছাত্রসমাজের ঐক্য, গণমানুষের ঐক্য বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, একুশ মানে মাথানত না করা, এবারের একুশে ফেব্রুয়ারি যেন সেটা মনে রেখেই করা হয়,’ – বলেন উপদেষ্টা আদিলুর।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার ড. মো.জিয়াউদ্দীন, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীবসহ চসিক ও সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম একুশের বইমেলার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছে। তবে এখনও স্টলগুলো পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে।
প্রতি বছরের মতো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে এ বইমেলার আয়োজনে সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে ‘চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ’। চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকার অভিজাত প্রকাশনী সংস্থাগুলো মেলায় অংশ নিচ্ছে। এক লাখ বর্গফুটের মাঠ জুড়ে ১৪০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামের স্টল সংখ্যা ৭৪টি এবং ঢাকার স্টল সংখ্যা ৪৪টি।
চসিক জানিয়েছে, প্রতিবারের মতো এবারও মেলার মঞ্চে প্রতিদিন থাকছে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজন। শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, রবীন্দ্র-নজরুল ও লোক সংগীত, সাধারণ নৃত্য, লোক নৃত্য, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা ও দেশের গানের আয়োজন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের জাগরণী গান ও দেশাত্মবোধক গানও থাকছে। এছাড়া মেলায় মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
মেলায় প্রতিদিনের বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় দেশের প্রথিতযশা লেখক-কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিরা অংশ নেবেন। প্রতিবারের মতো এবারও মেলায় নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ ও সেলফি কর্ণার করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ২০১৯ সাল থেকে বড় পরিসরে এ বইমেলার আয়োজন করে আসছে। চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদসহ আরও বিভিন্ন নাগরিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এতে সহযোগিতা দেয়। প্রতিবছর নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গনে বইমেলার আয়োজন করা হলেও গতবছর জেলা প্রশাসনের আপত্তিতে সেখানে হয়নি। এর পরিবর্তে সিটি করপোরেশন গতবার সিআরবিতে বইমেলার আয়োজন করেছিল। এবার মেয়র শাহাদাত হোসেনের প্রচেষ্টায় বইমেলা আবারও জিমনেশিয়ামে ফিরেছে।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ