গৃহবধূদের হাঁসে জীবন হাসে
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:৩৫
নওগাঁ: বাড়ির উঠানে মাচায় আর খাঁচায় হাঁস পালন করছেন গ্রামের গৃহবধূরা। সংসারের কাজের ফাঁকে হাঁস পালনে স্বাবলম্বী হচ্ছেন তারা। পারিবারিক এমন খামারে ভাগ্য বদলেছে শতাধিক নারীর। হাঁস পালন করে সংসারে স্বচ্ছলতায় আসায় এখন তাদের মুখে হাসি।
নওগাঁ সদর ও বদলগাছী উপজেলার শতাধিক গৃহবধূ আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে চীনের বেইজিং বা পেকিন জাতের হাঁস পালন করে সফলতা পেয়েছেন। দ্রুত বর্ধনশীল জাতের এ হাঁস পালন জনপ্রিয় উঠছে। দিনদিন বাড়ছে বধূদের খামার।
সঠিক পরিচর্যা এবং সুষম খাবারের মাধ্যমে মাত্র ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যেই প্রতিটি হাঁস আড়াই থেকে তিন কেজি ওজন হয়। এতেই আসতে থাকে গৃহবধূদের সাফল্য। বাড়তে থাকে হাঁস পালনে আগ্রহ।
২০২০ সালে পিকেএসএফ-এর অর্থায়নে এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘মৌসুমী’র’ সহায়তায় নওগাঁ সদর ও বদলগাছি উপজেলায় একশতাধিক গ্রামীণ গৃহবধূদের মাঝে বিনামূল্যে পেকিন হাঁস বিতরণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের একডালা গ্রামে বাসন্তী সমিতির আওতায় দশটি পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে পেকিন হাঁস, মাচার উপকরণ, খাবার এবং ভ্যাকসিন বিতরণ করা হয়েছে।
সদর উপজেলার একডালা গ্রামের শেফালী বেগম বলেন, সংসারের কাজের ফাঁকে পেকিন হাঁস পালন করে তিনি অনেক লাভবান হচ্ছেন। এক-একটি হাঁস আড়াই থেকে তিন কেজি ওজন হয়। প্রতিটি হাঁস বিক্রি করা যায় ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়। এতে অর্ধেক লাভ হচ্ছে। হাঁস পালনের আয়ের টাকায় তিনি সংসারের টুকিটাকি খরচের পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখায়ও খরচ করতে পারছেন।
তিনি আরও বলেন, হাঁস পালনে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন; সংসারের অভাবও দূর হয়েছে। আগামীতে তিনি বড় আকারে খামার গড়বেন।
শৈলগাছী গ্রামের ঝর্ণা বেগম বলেন,পেকিন হাঁস পালন সহজ। এ জাতের হাঁস পালনে মাসে ৪ থেকে ৫ হাঁজার টাকা আয় হচ্ছে তার।
বদলগাছী উপজেলার ভান্ডারপুর গ্রামের জরিনা বেগম জানান, আগে দেশি হাঁস পালন করতাম এখন পেকিন হাঁস পালন করে ২ থেকে ৩ গুন বেশি লাভ হচ্ছে। সংসারে আগের চেয়ে বেশি উন্নতি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, ১০০টি পেকিন হাঁস পালন করতে খরচ হয় প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে প্রতি ধাপে খামার থেকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ হয়। একডালা গ্রামের নারীরা পেকিন হাঁস পালন করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে।
উন্নয়ন সংস্থা ‘মৌসুমীর’ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নুর হোসেন বলেন, ‘চীনের পেকিন জাতের হাঁস মূলত মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। এসব হাঁস পালনে নারীদের প্রশিক্ষণের দেওয়া হয়েছে। এই জাতের হাঁস দেখতে আকর্ষণীয় ও অত্যন্ত দ্রুত বর্ধনশীল। খামারিদের উৎপাদিত হাঁসের সঠিক দাম নিশ্চিত করতে কাজ করা হচ্ছে। নারীরা হাঁস পালনে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। এখন অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে পেকিন জাতের হাঁস পালনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আমিনুল ইসলাম বলেন দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘মৌসুমী’ ভূমিকা রেখে চলেছে। নওগাঁয় বিদেশী জাতের হাঁস পালনে গ্রামের গৃহবধূদের উদ্বুদ্ধ করে আসছে মৌসুমীর প্রাণিসম্পদ বিভাগ। আমরা এমন কর্মকান্ডকে শতভাগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ গৃহবধূদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে আসছি। দেশের প্রাণিসম্পদ খাতকে এগিয়ে নিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে এমন সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে বলেও তিনি জানান।
সারাবাংলা/এসআর
গৃহবধূদের স্বচ্ছলতা নওগাঁ পেকিন জাতের হাঁস হাঁস পালন হাঁসে গৃহবধূরা হাসে