Saturday 01 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মেলার প্রথম দিনেই ভালো’র আভাস

আসাদ জামান
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪০ | আপডেট: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:৫৩

‘অন্যধারা’র প্যাভিলিয়ন তৈরি করা হয়েছে জাতীয় সংসদ ভবনের আদলে। ছবি: সারাবাংলা

সাধারণত অমর একুশে বইমেলার প্রথম দিনটা বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে বই এবং বইয়ের লেখক, প্রকাশক, পাঠক দর্শনার্থীর চেয়ে মেলাজুড়ে ইট, কাঠ, বালু, সিমেন্ট, টিন, রড, কাগজ, লোহা, তারকাটা, কস্টেপ, পাইপ, ককশিট, রংয়ের ডিব্বা, পলিথিন, দড়ি, সুতা, ঝুড়ি, কোদাল, বেলচা, কাপড়, পাইপ, পানির বোতল, লাঠি, পেরেক, বালতি, সোলা, বাঁশ, কাঁচের টুকরা, হাডবোর্ডসহ অন্যান্যা আবর্জনার দখলে থাকে। ফলে পরিপাটি, সুন্দর, সুশ্রী, সুষম, আরামদায়ক মেলার যে আকাঙ্ক্ষা তার ছিটে-ফোটাও চোখে পড়ে না। প্রচণ্ড সাইক্লোন শেষে একটা বিধ্বস্ত জনপদের ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেত-খামার, উঠান-বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট-মেঠো পথের যে অবস্থা হয়, মেলার প্রথম দিনটার পরিবেশ ঠিক তেমনটাই থাকে।

বিজ্ঞাপন

তবে এবার একটু ব্যতিক্রম। উপরের অনুষঙ্গের প্রায় সবগুলো বিদ্যমান থাকলেও বিগত বছরের তুলনায় তা সহনীয় পর্যায়ে আছে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর মেলায় ঢুকে দেখা যায় বেশিরভাগ স্টল-প্যাভিলিয়নের নির্মাণ কাজ শেষের দিকে। আর যারা নির্মাণকাজ শেষ করে ফেলেছেন, তাদের নির্মাণবর্জ্যও দ্রুততার সঙ্গে সরানোর ব্যবস্থা করছেন বাংলা একাডেমির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা।

শুধু তাই নয়, যেসব স্টল ও প্যাভিলিয়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলোর নান্দনিক চেহারা প্রথম দিনেই ভালো কিছুর আভাস দিচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের ৩৬টি প্যাভিলিয়নের প্রত্যেকটির সত্ত্বাধিকারী নিজস্ব চিন্তা, রুচি ও সাধ্য অনুযায়ী ডিজাইন করেছেন। এনেছেন নতুনত্ব। বাংলাদেশের আইকনিক স্থাপনার আদলে কেউ কেউ প্যাভিলিয়ন সাজিয়েছেন। ‘অন্যধারা’র প্যাভিলিয়ন তৈরি করা হয়েছে জাতীয় সংসদ ভবনের আদলে।

প্রথম দিনেই বিপুল সংখ্যক পাঠক ও দর্শনার্থীকে মেলায় ভিড় করতে দেখা গেছে। ছবি: সারাবাংলা

প্রথম দিনেই বিপুল সংখ্যক পাঠক ও দর্শনার্থীকে মেলায় ভিড় করতে দেখা গেছে। ছবি: সারাবাংলা

ঐতিহ্য প্রকাশনীর ম্যানেজার মো. আমজাদ হোসেন খান কাজল সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবছর সাধারণত মেলার প্রথম দিনটা শ্রীহীন অবস্থা থাকে। পরে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। এবার সেই তুলনায় অনেক বেটার। আশা করছি, অন্যবারের চেয় এবারের মেলাটা ভালো যাবে।’

এদিকে প্রথম দিনেই বিপুল সংখ্যক পাঠক ও দর্শনার্থীকে মেলায় ভিড় করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে মেলায় এসেছেন। মেলার বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে দেখেছেন তারা। কেউ কেউ মেলার প্রথম দিনেই বই কিনেছেন। কেউ আবার সেলফি ও ফটোশুটের মাধ্যমে মেলার প্রথম দিনটাকে স্মৃতির ফ্রেমে বন্দি করেছেন।

বিজ্ঞাপন

মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে কথা হয় রওশনারা ইসলাম রুমার সঙ্গে। বন্ধুকে নিয়ে মেলায় আসা রুমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেলার প্রথম দিনটা একটু অগোছালো থাকে। তবে, অন্যবারের চেয়ে এবারের প্রথম দিনটা একটু সাজানো-গোছানোই মনে হচ্ছে। যেটুকু এলোমেলো দেখাচ্ছে, আশা করি দুয়েকদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।’

স্টল-প্যাভিলিয়নের পাশাপাশি বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে নান্দনিক তোরণ এবং ডিসপ্লে বোর্ড বসানোর কাজও সেরে ফেলেছে আয়োজকরা। টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত মেট্রোরেলের প্রতিটি পিলারে ৫২’র ভাষা আন্দোলন এবং ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের থিম সম্বলিত ডিসপ্লে বোর্ড সাঁটিয়ে সড়ক জুড়ে মেলার আবহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কালীমন্দির গেটের তোরণে টেরাকোটা নকশার প্রিন্টে ৫২’র ভাষা আন্দোলনের থিম ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

প্রতিবছর সাধারণত মেলার প্রথম দিনটা শ্রীহীন থাকে। এবার সেই তুলনায় অনেক ভালো। ছবি: সারাবাংলা

প্রতিবছর সাধারণত মেলার প্রথম দিনটা শ্রীহীন থাকে। এবার সেই তুলনায় অনেক ভালো। ছবি: সারাবাংলা

তবে, মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের পশ্চিম উত্তর কোণে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চের ডিজাইন, সামিয়ানার কাপড় ও মঞ্চের অভিমুখ নির্মাণ শৈলী খুব একটা বেশি ভালো হয়নি। গত বছরের মতো এবারও পুরোনো লাল-সবুজ কাপড় দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ। এ মঞ্চটি পুরো মেলার ‘দুঃখ’ হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া লেখক বলছি মঞ্চ এখনো তৈরি হয়নি। লিটল ম্যাগাজিন চত্বরটির কাজও পুরোপুরি শেষ হয়নি। জরুরি আশ্রয় কেন্দ্র, স্বাস্থ্যসেবা জোন, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, খাবারের দোকানসহ অনেক কিছুর কাজ এখনো বাকি। এ কাজগুলো শেষ হলে একটা প্রাণবন্ত, আনন্দময় মেলা পাবে বইপ্রেমীরা।

জানতে চাইলে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘উদ্বোধন অনুষ্ঠান নিয়ে আমরা ব্যস্ত ছিলাম। সেটা সুন্দর ও সুচারুরূপে শেষ করতে পেরেছি। এখন আমাদের পুরো মনোযোগ বইমেলার দিকে দিতে পারব। যতটুকু ত্রুটি-বিচ্যুতি আপনাদের চোখে ধরা পড়ছে, এটা দূর করার আপ্রাণ চেষ্টা আমাদের আছে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা চাই।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

অমর একুশে বইমেলা ২০২৫

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর