পুঞ্জিভূত বৈদেশিক ঋণ
অর্থ বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে পার্থক্য ১৫১৫ কোটি ডলার
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০২:৫০
ঢাকা: সরকারের পুঞ্জিভূত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে গরমিল দেখা দিয়েছে। দুই হিসাবের মধ্যে পার্থক্য প্রায় ১ হাজার ৫১৫ কোটি ২৮ লাখ ডলার। আর জিডিপি’র হিসাবে পার্থক্য ১ শতাংশের বেশি।
অর্থ বিভাগের হিসাব বলছে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুন শেষে সরকারের পুঞ্জিভূত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ১২ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রায় ৬ হাজার ৭৬৭ কোটি ৩০ লাখ ৮৩ হাজার ডলার (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসেবে)। এটি জিডিপি’র ১৬ দশমিক ০৯ শতাংশ।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব বলছে, গত জুন শেষে সরকারের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি হচ্ছে ৮ হাজার ২৮২ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৯ লাখ ৯৩ হাজার ৯০৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসেবে)। এটি জিডিপি’র ১৮ দশমিক ১ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, গত অর্থবছর শেষে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০৪ দশমিক ৮৭ ডলার। আর অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের হিসাবে পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও ক্রমশ বেড়েই চলেছে সরকারের ঋণ।
অর্থ বিভাগের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত ২০২৪ সালের জুন শেষে সরকারের মোট পুঞ্জিভূত (অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক) ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। এটি জিডিপি’র ৩৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১০ লাখ ২০ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। টাকার অংকে মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৮ লাখ ১২ হাজার ৭৭ কোটি টাকা।
এর আগের অর্থবছর (২০২২-২৩) শেষে সরকারের মোট (অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক) পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সরকারের মোট পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ বেড়েছে ৮৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। টাকার অংকে বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৯৯ কোটি টাকা।
সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমানে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের গৃহীত পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এর পরিমাণ ৫ লাখ ৭ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে ব্যাংক-বহির্ভূত খাতে পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু সঞ্চয়পত্র খাতেই ঋণের পরিমাণ ৩ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, উল্লিখিত মোট পুঞ্জিভূত ঋণের বাইরে সরকার প্রদত্ত কিছু আর্থিক গ্যারান্টি বা ব্যাংক গ্যারান্টি রয়েছে। গত ২০২৪ সালের জুন শেষে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিকসহ সরকারের মোট এ ধরনের আর্থিক গ্যারান্টির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণে গ্যারান্টির পরিমাণ ৭১ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ ঋণে গ্যারান্টির পরিমাণ ৪৪ হাজার ৫০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের মতে, সরকারের সার্বিক ঋণ স্থিতি বাড়লেও এটি এখনো ঝুঁকিসীমার অনেক নিচে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ‘টেকসই ঋণ কাঠামো’ (ডেট সাসটেইনেবল ফ্রেমওয়ার্ক-ডিএসএফ)-এর মানদণ্ড অনুযায়ী, জিডিপি’র ৭০ শতাংশ ঋণকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সারাবাংলা/আরএস