আ.লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৩৫ | আপডেট: ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৫২
টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলে আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
খালাস পেয়েছেন সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা, তার ভাই সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্ত, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সানিয়াত খান বাপ্পা ও ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকনসহ ১০ জন।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মাহমুদুল হাসান এ রায় দেন। টাঙ্গাইলের রাষ্ট্রপক্ষের সহাকারী কৌশলী (এপিপি) অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান স্বপন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন— মোহাম্মদ আলী ও কবির হোসেন। তারা দুজনেই জামিনে বের হয়ে পলাতক রয়েছেন।
আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান জানান, এ মামলায় ২৭ জনের সাক্ষী রাষ্ট্রপক্ষ উপস্থাপন করেন। আসামিদের নাম কেউ প্রমাণ করতে পারিনি যে তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। ঘটনার সময় সহিদুর রহমান খান মুক্তি সস্ত্রীক ভারত ছিলেন চিকিৎসার জন্য, তার ভাই জাহিদুর রহমান কাকন মালয়েশিয়া ছিলেন, সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা ঘাটাইলে একটি অনুষ্ঠানে ছিলেন। তাদের ছোট ভাই সানিয়াত খান বাপ্পা ঢাকায় ছাত্রলীগের অফিসে ছিলেন। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিকভাবে তাদের মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছিল। এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পেয়েছি।
টাঙ্গাইলের রাষ্ট্রপক্ষের সহাকারী কৌশলী (এপিপি) সাইদুর রহমান স্বপন জানান, আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলায় দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে । এছাড়া ৫ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়। অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন। মামলার আসামি সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাইসহ ১০জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ না হওয়ায় তাদের খালাস দিয়েছে আদালত। বাদীর সঙ্গে আলোচনা করে আপিলের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
২০১৪ সালের আগস্টে হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামক দুইজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করে। তারা আদালতে জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে আওয়ামী দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার নাম বের হয়ে আসে। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওয়াহেদ, আবদুল খালেক ও সনি আদালতে জবানবন্দি দেন। এরপর চার ভাই আত্মগোপনে চলে যান। আমানুর রাহমান খান রানা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তিন বছর হাজতে থাকার পর জামিন লাভ করেন। ৫ আগস্টের পর তিনি আবার আত্মগোপনে চলে যান। অপর দুই ভাই ২০১৪ সাল থেকে বিদেশে অবস্থান করছেন বলে তাদের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন। গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মাহফীজুর রহমান ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি চার ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। বিচার চলাকালে দুই আসামি আনিছুর রহমান ওরফে রাজা ও মোহাম্মদ সমির কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন। গত ২৬ জানুয়ারি ফারুক হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক শেষে দুই জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
সারাবাংলা/এসআর