প্রতিবন্ধীদের প্রশংসায় ভাসছেন নারায়ণগঞ্জের ডিসি জাহিদুল ইসলাম
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:১৯
ঢাকা: সারা দেশে ‘মানবিক ডিসি‘ পরিচিত মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসাবে যোগদানের পর থেকেই প্রতিবন্ধীদের জন্য একের পর সহায়তার হাত বাড়িয়েই চলেছেন। দায়িত্ব নেওয়ার দুইদিনের মাথায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কলেজ ছাত্র সোহাগকে পড়াশোনার জন্য স্মার্ট ফোন উপহার দেওয়ার খবরে জেলার শারীরিক প্রতিবন্ধীদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার হয়। জেলা প্রশাসক ঘোষণা দেন প্রতিবন্ধীদের কোনো ফাইল এক দিনও আটকে রাখা যাবে না। প্রতিবন্ধীদের কাছে থেকে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথাও বলে সতর্ক করেন সংশ্লিষ্টদের।
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করেন এমন সংগঠনগুলোও তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে একের পর এক হাজির হয় জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলামের কাছে। তারই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ রোববার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে জেলার প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও শিশুদের মাঝে হুইল চেয়ার ও শিক্ষা সহায়তা উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহী হুসনে আরা বেগম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ জেলার পাঁচ উপজেলার ২০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মাঝে হুইল চেয়ার, একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে একটি ইলেকট্রিক চেয়ার, একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে একটি কৃত্তিম বেইস (পায়ের ডিভাইস), বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে আহত ২ জন ছাত্রকে ওয়াকিং স্ট্যান্ড এবং নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলাধীন কিডস ক্যাম্পাস স্কুল অ্যান্ড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ও সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক স্কুলের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের মাঝে শিক্ষা সহায়তা উপকরণ বিতরণ করা হয়।
এই সময় জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সূর্যের সৌন্দর্য তাপ, সমুদ্রের সৌন্দর্য ঢেউ ঠিক তেমনিভাবে মানুষের সৌন্দর্য মানবিকতা। যারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, তাদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য সবাইকে নিয়ে জেলা প্রশাসন কাজ করবে। কারণ তাদের স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হবার সুযোগ করে দিতে হবে।’
প্রতিবন্ধী ফারুক আহমেদ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলামের কাছে থেকে পায়ের আর্টিফিশিয়াল বেইস কেনার জন্য আর্থিক সহয়তা পেয়ে তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এই ডিসি স্যার নারায়ণগঞ্জের মাটিতে পা রেখেই সর্বপ্রথম নজর দিয়েছেন আমাদের প্রতিবন্ধীদের দিকে। তাই বুঝতে বাকি থাকে না ডিসি মহোদয় কতটা দূরদর্শী, কতটা মানবহিতৈষী, কল্যাণকামী ও উত্তম জনসেবক।‘
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ডিসি মহোদয়ের পক্ষ থেকে আমাকে ২৬ হাজার টাকা প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে ডেকে এনে দেওয়া হয়। পরে আমি পুরো টাকাটা ব্র্যাক লিম্ব সেন্টারে গিয়ে পায়ের মাপ দিয়ে অর্ডার কনফার্ম করে আসি। আগামীকাল মঙ্গলবার দিন আমার কাঙ্ক্ষিত কৃত্রিম ব্রেইসটি হাতে পাবো। আমরা ভাগ্যবান এমন ডিসিকে জেলায় পেয়ে। আশা করছি আমাদের আগামী দিনগুলোতেও যেকোনো সমস্যায় আমাদের পাশে পাবো ‘
কিডস ক্যাম্পাস স্কুল অ্যান্ড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের প্রিন্সিপাল রেনু আক্তার তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, ‘আমাদের নতুন ডিসি মহোদয় নারায়ণগঞ্জ জেলায় আসার পর থেকেই এই দুস্থ ও প্রতিবন্ধী জনগণের প্রতি সদয় হয়েছেন এবং বিভিন্ন দুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের সাহায্য করে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে আমাদের স্কুলের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের হাতে শিক্ষা উপকরণ তুলে দেন। এই উপকরণ গুলো হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত হয়েছে। তার এই সহানুভূতিশীল উদ্যোগ এই সকল শিশু ও ব্যক্তিদের চলার পথকে সুগম ও অনুপ্রাণিত করবে এবং সমাজে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব বাড়িয়ে দিবে।’
সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক বলেন, ‘জেলা প্রশাসক স্যার আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উপকরণ দিয়েছেন। এতে আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি। শিক্ষার্থীরা এর মাধ্যমে তাদের প্রতিভার বিকাশ সাধন করতে পারবে।’
জেলা জেলার প্রতিবন্ধী সেবাও সাহায্য কেন্দ্রের প্রতিবন্ধী বিষয় কর্মকর্তা জনাব মো. সোহাইলকে প্রতিবন্ধীবান্ধব কর্মকর্তা হিসেবে আখ্যায়িত করেন ফজলুল হক।
শেখ জামাল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দেওয়ান মুহম্মদ মাহমুদুর রহমান ইলেক্ট্রিক হুইল চেয়ার পেয়ে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক আমাকে একটি ব্যাটারিচালিত ইলেকট্রিক হুইলচেয়ার উপহার দিয়েছেন, যা শুধু চলাচলের উপকরণ নয়, এটি আমার স্বাধীনতা, আত্মবিশ্বাস ও কর্মদক্ষতার প্রতীক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি একজন শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী শিক্ষক। ৩৬তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগ পাওয়া একজন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমি আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করি। তবে চলাচলের অসুবিধা আমাকে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক আমার এই সমস্যা জেনে আমাকে এই উপহার দেন। যা আমাকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে সক্ষম করবে।’
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম শুধুমাত্র দক্ষ প্রশাসক নন, তিনি তার সহানুভূতি এবং দায়িত্ববোধ দিয়ে প্রমাণ করেছেন, সহানুভূতি শুধু কথায় নয়, বাস্তবায়নে তাকে রূপান্তরিত করতে হবে- তিনি আরও যোগ করেন।
সারাবাংলা/ইউজে/এইচআই