Tuesday 04 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের স্টল আবেগপ্রবণ করে তুলছে দর্শনার্থীদের

ফারহানা নীলা
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:০৯ | আপডেট: ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০০:২৩

জুলাই চত্বর প্রাঙ্গণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্টল। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’- এই প্রতিপাদ্যে চলছে, মাসব্যাপী ‘অমর একুশে বইমেলা’। এ মেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। মেলার মূল চেতনা ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনকে ধারণ করে। এবার সেইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে এবারের বইমেলার আয়োজন।

বইমেলায় যুক্ত হয়েছে ‘জুলাই চত্বর’। বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণ জুড়ে দেখা যায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন ব্যানার। জুলাইয়ের স্লোগান সম্বলিত পোস্টার টানানো হয়েছে চতুর্দিকে। ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘যখন জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়, ইতিহাস নতুন পথ তৈরি করে’, ‘আমার ভাইয়ের কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তুমিই বাংলাদেশ’, ‘আমার বেটাক মারলি ক্যানে?’- এসব স্লোগান সম্বলিত প্লাকার্ড আছে চারদিকে।

বিজ্ঞাপন

এবারের মেলায় বেশিরভাগ স্টল সাজানোর রং হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে লাল, কালো ও সাদা। এ বিষয়ে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য আবুল বাসার ফিরোজ সারাবাংলাকে জানান, ‘এবারের মেলায় পাঠক ও দর্শনার্থীরা মেলার জন্য বিশেষ তিনটি রং পাবে। বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে লাল, শোকের প্রতীক হিসেবে কালো ও আশার প্রদীপ হিসেবে সাদা রং ব্যবহার করা হয়েছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও চব্বিশের গণআন্দোলনকে কেন্দ্র করে এই তিনটি রং বেছে নেওয়া হয়েছে।’

স্টলের সামনেই ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম-সংগ্রাম’ স্লোগান সম্বলিত ব্যানার। ছবি: সারাবাংলা

স্টলের সামনেই ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম-সংগ্রাম’ স্লোগান সম্বলিত ব্যানার। ছবি: সারাবাংলা

জুলাই চত্বর প্রাঙ্গণে স্টল বরাদ্দ নিয়েছে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। জুলাই আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ের ছবিসহ প্ল্যাকার্ড দিয়ে সাজানো হয়েছে তাদের স্টলের আশপাশ। সেখানে দেখা যায়, আবু সাঈদ, মুগ্ধ, নাঈমাসহ আন্দোলনে শহিদ অনেকের ছবি। রয়েছে জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস সম্বলিত বই।

বিজ্ঞাপন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সাদিয়া বিনতে রহমান সারাবাংলাকে, ‘জুলাই অভ্যুত্থানকে স্মরণ করিয়ে দিতেই স্টল ও সংলগ্ন এলাকা এভাবে সাজানো হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল জুলাই অভ্যুত্থানে কী কী হয়েছে, কারা কারা শহিদ হয়েছেন- এই সংক্রান্ত তথ্য পাঠক ও দর্শনার্থীদের কাছে তুলে ধরা। সেজন্য জুলাই তথ্যসম্বলিত কিছু বই ও ছবি আমরা এখানে প্রদর্শন করছি। আমাদের বইমেলার এই আয়োজন সফল হয়েছে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন স্টলে দেখা মিলল জুলাই আন্দোলনকারী একজন শিক্ষার্থী ফাহিম ফয়সাল তামিমের সঙ্গে। সেদিনের ছবি আর ইতিহাস আবেগ প্রবণ করে তোলে তাকে। ফাহিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিজেকে খুব ভাগ্যবান বলে মনে হয় এই জন্য যে, জুলাই আন্দোলনকে এত কাছে থেকে দেখতে পেরেছি। একটা সময় রাতে বের হতেই ভয় লাগতো। বাড়ির দারওয়ানকে বলে দিতাম, রাতে অপরিচিত কাউকে ঢুকতে দিও না। কিন্তু এই আন্দোলনে দিন রাত কিছু ছিল না। ভয় বলে কিছু ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল, দেশকে স্বৈরাচারীর হাত থেকে রক্ষা করা। এখন এখানে এই ছবিগুলো দেখে লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।’

স্টলের সামনে আর রয়েছে ‘হামার ব্যাটাক মারুল ক্যানে’ স্লোগান সম্বলিত ব্যানার। ছবি: সারাবাংলা

স্টলের সামনে আর রয়েছে ‘হামার ব্যাটাক মারুল ক্যানে’ স্লোগান সম্বলিত ব্যানার। ছবি: সারাবাংলা

পাঠকদেরও চোখ যেন সরছে না ছবিগুলো থেকে। মুগ্ধ হয়ে দেখছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সেই ছবিগুলো। কতটা সাহস নিয়ে লড়াই করেছে বাংলার তরুণ ও কিশোর শিক্ষার্থীরা। ২৪-এর চেতনাকে ধারণ করে তাই সেই যোদ্ধাদের স্মরণ করছেন দর্শনার্থীরা। তানভীর রহমান নামে এক পাঠক ‘স্বাধীনতা ২৪’ নামক একটি বই কিনেছেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি এবার বইমেলায় এসেছি জুলাই স্বাধীনতার কিছু বই নিজ সংগ্রহে রাখার জন্য। সে সময় শাটডাউন ছিল দেশ, ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। তাই হয়তো অনেক তথ্যই অজানা রয়ে গেছে। সেগুলো সব আমি জানতে চাই। ভবিষ্যত প্রজন্মকে জানানোর জন্য, এই ইতিহাস গুলো তুলে রাখা প্রয়োজন।’

স্টলে ব্যবস্থা করা হয়েছে ভিজ্যুয়াল প্রদর্শনীরও। সেখানে গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলন সম্বলিত অনেক ভিডিও ছবি ও ডকুমেন্টরি দেখানো হচ্ছে। দর্শনার্থীরা কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে সেই ভিডিওগুলো দেখছেন। স্টলের পাশেই বানানো হয়েছে একটি ডাস্টবিন। সেই ডাস্টবিনে লাগানো হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসংলগ্ন মেট্রোরেলের পিলারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ঘৃণা স্তম্ভে’র ছবি। দর্শাানার্থীরা সেখানে আবর্জনা ফেলে নিজেদের ঘৃণা ও ক্ষোাভ প্রকাশ করছেন।

এ ছাড়া, স্টলে রাখা আছে একটি ডায়েরি। সেদিন গণঅভ্যুত্থানে যুক্ত থাকা ব্যক্তিরা তাদের মনের আবেগ ও কথা লিখে রাখতে পারবেন এই ডায়েরিতে। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেকের ঘটনা সবার জানা নেই। তাই দর্শনার্থীরাও তাদের কথা ও আবেগ নিয়ে লিখে যেতে পারছেন এই ডায়েরিতে। সবকিছু মিলিয়ে জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি নিয়ে জমে উঠেছে বাঙালির প্রাণের মেলা, বইমেলা।

সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর