ড. ইউনূসের সঙ্গে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাক্ষাতের দাবি প্রবাস ফেরতদের
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৫৭ | আপডেট: ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫৮
ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে আন্দোলন করে গ্রেফতার ও দণ্ডের শিকার হয়ে আরব আমিরাত এবং অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশে ফেরত ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীরা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের দাবি জানিয়েছে।
সেইসঙ্গে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও পাসপোর্ট থেকে নো-এন্ট্রি তুলে নেওয়াসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন প্রবাসীরা। দাবি না মানা হলে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারির পর রেমিটেন্স শাটডাউন করা হবে বলেও জানান তারা।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীরা।
সংবাদ সম্মেলনে আমিরাত ফেরত প্রবাসীরা বলেন, জুলাই বিপ্লবের সময় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে মিছিল করেন তারা। আরব আমিরাতসহ অন্যান্য দেশে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মিছিলের সঙ্গে সম্পৃক্ত অথবা সম্পৃক্ত নয় অনেকের নামের তালিকা তৎকালীন কনস্যুলার জামালের মাধ্যমে সে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে জমা দেন।
আরব আমিরাত ফেরত প্রবাসী খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বসে আমাদের দাবি তুলে ধরতে চাই। অতিদ্রুত প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ চাই। আমরা তো দেশের মানুষের সঙ্গে একাত্মতা করে ওখানে আন্দোলন করেছি। আজ দেশে এসে আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাদের কেউ ছয় মাস, কেউ দুই বছর, কেউ ২০ বছর সেখানে থেকে এসেছি। আমাদের যারা ওখানে আন্দোলন করেছেন তাদের নামও ইতিহাসে লেখা হোক।’
প্রবাসী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের যখন ফেরত পাঠানো হয় বিমানবন্দরে এসে এক গ্লাস পানি পাইনি। তারা আমাদের ফুল দিচ্ছে, ফটোসেশন করছে, কিন্তু আমরা কতটা কষ্ট করে এসেছি সে খবর তারা শোনেনি। প্রবাসীরা হাইকমিশনের কোনো সাহায্য পায় না। কোনো দেশেই পায় না। হাইকমিশন আর ওখানকার স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের তথ্যে আমরা গ্রেফতার হয়েছি।’
বিদেশ ফেরৎ প্রবাসীরা তখন ৬ দফা দাবির কথা বলে। প্রবাসীদের ছয় দফা দাবিগুলো হলো –
১. আরব আমিরাতসহ ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এর মধ্যে, যারা বিদেশ যেতে চায় সরকারি উদ্যোগে বিনা খরচে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থ্য করা। যাদের দেশে চাকরি দেওয়ার সুযোগ আছে যোগ্যতা অনুসারে তাদের চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করা। সেসব দেশে যারা ব্যবসায়ী ছিলেন ও নতুন করে যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের ব্যাংক বা কোনো সংস্থার মাধ্যমে বিনা সুদে প্রয়োজনীয় লোন দেওয়ার ব্যবস্থা করা, যারা বয়স্ক তাদের বিভিন্ন প্রকার সরকারি ভাতার আওতায় নিয়ে আসা।
২. বাংলাদেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের সংযুক্ত আরব আমিরাত নো-এন্ট্রি দিয়েছে, নো-এন্ট্রি তুলে নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেওয়া।
৩. একই মামলায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে এখনো গ্রেফতার চলছে, কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে অতিদ্রুত গ্রেফতার প্রক্রিয়া বন্ধ করা তথা মামলাটি শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া ও আমিরাতের কারাগারে যেসব বাংলাদেশি আছেন তাদের অতিদ্রুত মুক্ত করা।
৪. আমিরাতের সে সময়ের কনসাল জেনারেল বিএম জামালসহ জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে অতিদ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার করা।
৫. ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের জন্য জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশননের মতো একটি ট্রাস্ট গঠন করা, যাতে দেশের স্বার্থে ক্ষতিগ্রস্ত যে কোনো প্রবাসী একটি ক্ষতিপূরণ পেতে পারে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমর্থনের কারণে নির্যাতিত হয়ে দেশে আসা প্রবাসীদের জুলাই বিপ্লবের বীর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।
৬. বিপদগ্রস্ত প্রবাসীদের মুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার লক্ষ্যে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চাই। সে জন্য ৭ জনের প্রতিনিধিদলকে সাক্ষাৎকারের অনুমতি দেওয়া।
সারাবাংলা/এমএইচ/এমপি