Friday 07 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছুটির দিনে জমজমাট বইমেলা, তবে বেচা-বিক্রি কম

আসাদ জামান
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৩২ | আপডেট: ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৪৫

ছুটির দিনের বইমেলা কানায় কানায় পূর্ণ। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: ‘কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু/ছেড়ে যাইবা যদি/কেমনে রাখবি তোর মন আমার আপন ঘরে বাধিরে বন্ধু/ছেড়ে যাইবা যদি’ ছয় দিন পর বইমেলায় ঢুকে বাঁশিতে তোলা এমন সুর শোনার পর মেলায় না আসা দিনগুলোর জন্য আপসোস হওয়াটাই স্বাভাবিক! সুতরাং আপসোস ভরা হৃদয়ে কিছু সময়ের জন্য বাঁশির সুরলহরীতে হারিয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ মনে হলো বৃদ্ধ বাঁশিওয়ালা কি জীবনযুদ্ধে হেরেছেন যেমনটি হেরে যান বাংলা ভাষার বেশিরভাগ লেখক, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক; ক্ষেত্র বিশেষ পাঠকও!

বিজ্ঞাপন

হঠাৎ এই হেরে যাওয়ার বিষয়টা কেন এল? হ্যাঁ, এ প্রশ্নটা যৌক্তিক! উত্তরটা আরও বেশি যৌক্তিক! বয়সের ভাড়ে নুয়ে পড়া বাঁশিওয়ালা হঠাৎ করেই তার মনোমুগ্ধকর পরিবেশন বন্ধ করে হাঁটা শুরু করলেন। আরেকটু বাজানোর অনুরোধ উপেক্ষা করে হাঁটতে থাকলেন। কেউ একজন বললেন, আরেকটু বাজান, টাকা দেব। এবার তিনি থামলেন এবং বাজাতে শুরু করলেন।

যিনি বাঁশিতে সুর তুলতে পারেন, মানুষকে বেঁধে রাখতে পারেন সুরের মায়াজালে, তাকেও হাত পাততে হয় ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য। যেমনটি বাংলা ভাষার বেশিরভাগ লেখককে, বিশেষ করে নতুন লেখককে পকেটের টাকায় বই ছাপিয়ে পরিচিতিজনদের ডেকে ডেকে বিক্রি করতে হয়। শুধু নবীন নয়, অনেক প্রবীণ এবং আজন্ম সাধক শ্রেণির সৃজনশীল লেখককেও একই পথ বেছে নিতে হয়। এক্ষেত্রে তাদের প্রতিভা, সৃজনশীলতা এবং পরিশ্রম, সাধনা অর্থহীন, একেবারেই মূল্যহীন!

বাঁশির সুর থেমে গেলে পরের দৃশ্য কী হতে পারে, সেটা অনুমান করে মাঝপথেই কেটে পড়তে হলো। ছুটির দিনের বইমেলা কানায় কানায় পূর্ণ। যে গলিতে চোখ যায়, সেখানেই মানুষ আর মানুষ। সবাই কী যেন খুঁজছে আর উদভ্রান্তের মতো ঘুরছে। কেউ বই কিনছে বলে মনে হচ্ছে না। আবার মাঝে-মধ্যে দুয়েকজনের হাতে বই দেখা যাচ্ছে। যেসব স্টলে ইনফ্লুয়েন্সার বসেছেন, সেখানে তরুণ-তরুণীদে উপচে পড়া ভীড়! এ ভীড় বই কেনার জন্য যতটা, তারচেয়ে বেশি সেলফি তোলার জন্য!

গল্পটা একেবারেই পুরোনো। নতুন গল্প তৈরি হয় না। অথবা নতুন গল্প তৈরি করার মতো মানুষের জন্ম হয় না। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, হুমায়ূন আহমেদররা বারবার আসেন না। সময়ের ব্যবধানে মেলায় আসেন ইনফ্লুয়েন্সাররা। তাদের ঘিরে যে বলয় তৈরি হয়, তারা পাঠক নন, শিকারি! সেলফি শিকারি!

বিজ্ঞাপন

বিষয়টি যে কত হতাশার, নিদারুণ বেদনার— সেটা বোঝা যায় প্রকাশক-লেখকদের মুখের দিকে তাকালে, তাদের সঙ্গে কথা বললে। এই যেমন সৃজনশীল প্রকাশনী ‘ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড’-এর সহকারী ব্যবস্থাপক এ কে এম কামরুজ্জামান বললেন, ‘‘এই যে এত ভীড় দেখছেন, এদের মধ্যে বই কেনার লোক একেবারেই কম; এবার তো আরও কম।’’

‘‘বিশেষ করে আমাদের বেচা-কেনা অন্যবারের থেকে অনেক কম। আমরা যেহেতু ননফিকশন টাইপের মনোনশীল বই, গবেষণা গ্রন্থ এবং ইতিহাসের বই বেশি করি, সেহেতু আমাদের পাঠকও একটু বোদ্ধা শ্রেণির ও প্রবীণ গোছের। এবার কেন যেন এই দুই শ্রেণির পাঠক বইমেলায় কম আসছেন’’- বলেন এ কে এম কামরুজ্জামান।

বিকেল সাড়ে ৩ টা থেকে সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত বইমেলার একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে, প্রায় প্রত্যেকটা স্টল-প্যাভিলিয়নে ঢু-মেরে কারও কাছেই বই বিক্রির সু-খবর মেলেনি। ‘মেলায় আসা বেশিরভাগ মানুষ আদতে দর্শনার্থী, বইয়ের পাঠক নন’— এই ধারণাটাই বিগত বছরগুলোর মতো এবারও ‘সত্য’ বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। তবে, আয়োজনে ত্রুটি-বিচ্যুতি গতবারের চেয়ে কম। সাজ-সজ্জায় বলতে গেলে ভালোই মুন্সিয়ানা দেখিয়েছে এবারের মেলা পরিচালনা কমিটি।

বইমেলার সপ্তম দিনে এসে ইভেন্ট থিম, ইভেন্ট নিমোনিক, ভিজ্যুয়াল আইডেন্টিটি, সাদৃশ্যপূর্ণ রঙ নির্দেশিকা বা কালার গাইডলাইন অ্যান্ড হারমনি, ক্রিয়েটিভ ভিজ্যুয়ালাইজেশন, থিমেটিক অ্যাক্সিকিউশন, ভেন্যু লেআউট ও গ্রাউন্ড প্রস্তুতি, বাংলা একাডেমির স্টল ডিজাইন, গেইট ডিজাইন, মঞ্চ ডিজাইন, গ্রাউন্ড ম্যানেজমেন্টসহ সম্পূর্ণ অবকাঠামো ডিজাইন, অ্যাক্সিকিউশন, থিমের ওপর ভিত্তি করে সৃজনশীল ইনস্টলেশন, পাবলিক ফাংশন ডিজাইন, প্রবেশ ও প্রস্থান পথের ডিজাইন, ভিজিটর অ্যানগেজমেন্ট প্ল্যানসহ সামগ্রিক দিক থেকে মেলাকে সাজানো-গোছানোই মনে হল। সবচেয়ে বড় কথা পর্যাপ্ত পানি ছিটানোয় মাত্রা অতিরিক্ত ধুলার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে এবারের বইমেলা। মেলার বড় একটা অংশজুড়ে ইট বিছিয়ে দেওয়ায় কাঁদা এবং ধুলার বাড়াবাড়ি থেকেও সুরক্ষা পেয়েছে বইমেলা। তবে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মোড়ক উন্মোচ মঞ্চ নিদারুণ দারিদ্রের স্বাক্ষর বহন করে চলছে। লাল-সবুজ কাপড়ে তৈরি প্যান্ডেল দেখ মনে হচ্ছে উলটামুখি যাত্রাপালার মঞ্চ। বাঁশগুলো মোড়ানো হয়নি সাদা কাপড়ে। ফলে সৌন্দর্যহানীর ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে।

জানতে চাইলে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বইমেলার সব কিছু ভালো করার চেষ্টা করেছি। দুয়েক জায়গায় হয়তো সফল হতে পারিনি। আপনাদের যৌক্তিক সমালোচনা ও পরামর্শকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। সামনে এ বিষয়গুলো আমরা দেখব।’

সারাবাংলা/এজেড/এইচআই

অমর একুশ বইমেলা-২০২৫ বইমেলা ২০২৫

বিজ্ঞাপন

আলিসের অভাবেই ডুবল চিটাগং কিংস?
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০১:২৭

আরো

সম্পর্কিত খবর