বাউল সম্রাট আবদুল করিমের ১০৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে
সুনামগঞ্জে দুই দিনব্যাপী লোক উৎসব শুরু
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:০৭
সুনামগঞ্জ: বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের ১০৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দুই দিনের লোক উৎসব শুরু হয়েছে।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে শাহ আবদুল করিমের জন্মস্থান ও জেলার দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামের মাঠে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া।
শাহ আবদুল করিম পরিষদের আয়োজনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পাল, অবসরপ্রাপ্ত লে. মনিরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সনজীব সরকার, পরিষদের সভাপতি শাহ আবদুল করিমের ছেলে বাউল শাহ নূর জালাল।
উৎসবে বাউল করিমের শিষ্য অনুরাগী স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গে জনপ্রিয় শিল্পীরা করিমের গান পরিবেশন করেন। উৎসবের সহযোগিতায় রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ।
উৎসবে আসা বাউল সিরাজ উদ্দিন, আব্দুর রহমান, শাহ আব্দুল তোয়াহেদ, রনেশ ঠাকুর, সূর্যলাল বলেন, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। বলেছেন,‘দিন গেলে গোলমালে, মোদের দিন গেল গোলমালে ঠেকছে বাঙাল—যারা কাঙাল লাভ হলো না মূলে’… কৃষক মজুর দিশেহারা শান্তি নাই আসলে গরিব কাঙালের পেটে ক্ষুধার আগুন জ্বলে হিতে বিপরীত ঘটাল লেজ—কাটা বানরের দলে।’
![](https://sarabangla.net/wp-content/uploads/2025/02/lok-utsob.jpg)
লোক উৎসবে বাউল করিমের শিষ্য অনুরাগী স্থানীয় শিল্পীরা
তার লিখিত প্রতিটি গানের কথায় যেমন ফুটে উঠেছে ভাটি বাংলার মানুষের সুখ—দুঃখ, আনন্দ—বেদনার কথা, তেমনি তিনি কলম ধরেছেন তৎকালীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজব্যবস্থা এবং সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে গান লিখতে গিয়ে অনেক সময় তিনি আক্রোশের শিকারও হয়েছেন। এ সময় তিনি অত্যাচারিত হয়ে গ্রাম ছেড়েছেন, কিন্তু গান ছাড়েননি। আব্দুল করিমের সঙ্গীত চর্চায় মরমী, বিচ্ছেদী গানের মাঝেও গ্রামের সাবলীল ভাষায় সমাজের বৈষম্যের কথা উচ্চারিত করেছেন।
তারা বলেন, ‘এই কি তোমার বিবেচনা কেউ যে খায় মাখন ছানা কেউর মুখে অন্ন জুটেনা ভাঙাঘরে ছানি নাই’। করিমের এ গানে কেবল সমাজের দরিদ্রতম লোকদের প্রতি তার সমবেদনা প্রকাশ করছেন। মানুষের দুঃখ বেদনার কারণের মধ্যে শোষণ বঞ্চনা হচ্ছে অন্যতম। তিনি শোষণহীন সমাজব্যবস্থার জন্য গান রচনা করেছেন। যেমন— ‘স্বাধীন বাংলায় রে বীর বাঙালি ভাই, শোষণহীন সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা চাই।’ দেশের সম্পদ রক্ষা করার জন্য সবাইকে সাবধান করে বলেছেন ‘চোরে চায় না দেশের কল্যাণ’। করিমের সমাজচেতনা নির্ভর গানগুলো একদিন সকলের মনে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সংগ্রামের প্রেরণা হয়ে দেখা দেবে, আব্দুল করিমের গান হবে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শোষণমুক্ত দেশ গড়ার আন্দোলনে সংগ্রামী হাতিয়ার।’
সারাবাংলা/এসডব্লিউ
বাউল সম্রাট আবদুল করিমের ১০৯তম জন্মবার্ষিকী লোক উৎসব সুনামগঞ্জ