ঢাবির ক্যালেন্ডারে ছাত্র সংসদ নির্বাচন যুক্ত করার দাবি ছাত্রসংগঠনগুলোর
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:৫৯ | আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:৫২
ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারে ছাত্র সংসদ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ডাকসুকে একাডেমিক পার্ট এবং বছরব্যাপী কাজের অংশ হিসেবে দেখতে হবে। যে বিষয়গুলোতে অধিকাংশই একমত হয়েছে সেই বিষয়গুলোর যৌক্তিক সংস্কার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে। কিন্তু অভ্যুত্থানের ছয় মাস পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এখনো কোনো অগ্রগতি নেই।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত ডাকসু সংস্কার ও নির্বাচনবিষয়ক এক সংলাপে এই মতামতগুলো উঠে আসে। সংলাপটি আয়োজন করে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল।
সংলাপে বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো ডাকসু নির্বাচন নিয়ে তাদের মতামত জানান। ছাত্র সংগঠনগুলোর বক্তব্যে অভ্যুত্থানের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন এখনো ডাকসু বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু জানাতে পারছে না সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। প্রশাসনের যথাযথ দায়িত্বহীল ভূমিকার কারণে যদি এবার ডাকসু না হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এই প্রশাসনকে পরবর্তীতে অবশ্যই দোষারোপ করা হবে- এমন কথা বলেন অনেক সংগঠনের নেতারা। ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা ছাড়াও শিক্ষক, সাবেক ডাকসু নেতা ও প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সংলাপে অংশ নেওয়া হয়।
সংলাপে ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না তার মতামত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এত বড় অভ্যুত্থান একটা চোরাবালির মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে, অথচ কেউ কিছু করতে পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি বাঁচাতে পারেন তাহলেই বাংলাদেশকে বাঁচানোর সম্ভাবনা থাকবে। এই ডাকসুটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই ডাকসুতে যারাই জয়ী হবে, দেশের মানুষ ভাববে আগামী নির্বাচনে তারা বিজয়ী হবে।’ তিনি তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘ডাকসু আমাকে সম্মান দিয়েছে। কিন্তু, প্রশাসন আমাকে অপমান করতে ছাড়েনি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির প্রকৃতি ও ধরণবিষয়ক কমিটির সদস্য অধ্যাপক শামীম রেজা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারে ছাত্র সংসদ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ডাকসুকে একাডেমিক পার্ট এবং বছরব্যাপী কাজের অংশ হিসেবে দেখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘একবার সংস্কার করে রেখে পরবর্তীতে আর সংস্কার করা লাগবে না বিষয়টি এমন নয়। বরং, প্রতি পাঁচ বছর পর পরই পর্যালোচনা করতে হবে, এটিকে সবসময় যুগোপযোগী রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচন আগামী দিনের নেতৃত্ব তৈরি করে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং, চিকিৎসা পড়ানো হয়, সেগুলোসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া দরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ডাকসুর বিষয়ে অটোনোমি হতে হবে। জাতীয় রাজনীতিতে যা-ই হোক, এর প্রভাব যেন ডাকসুর ওপর না পড়ে।’
সংলাপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহবায়ক ও ডাকসু সংস্কারবিষয়ক কমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা সব অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে চাই।’
সংলাপে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ‘আমরা একটি কার্যকর ছাত্র সংসদ চাই। সেজন্য ফৌজদারি অপরাধে যেসব ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে। অথচ ছয় মাস পার হয়ে গেলেও এখনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা আমরা জানি না।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে দাবি করেন, ছাত্রদল মনে হয় ডাকসু নির্বাচন দেরিতে চায়। কিন্তু এটি সত্য নয়। আমরা এর যৌক্তিক গঠনতন্ত্র সংস্কার করে দ্রুত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন চাই।’
সংলাপে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক মাইন আহমেদ বলেন, ‘ছাত্র সংগঠনগুলোর সংস্কার প্রস্তাবনার জন্য নির্বাচন দিতে দেরি হচ্ছে এমনটি বলার সুযোগ নেই। এতটুকু সংস্কারে এত সময়ক্ষেপণ হওয়ার কথা না।’
ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, ‘এত ফর্মালিটিজের দরকার নেই, এর মৌলিক সংস্কারটুকু করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া হোক।’ এই মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণার দাবি জানান তিনি।
সংলাপে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘নির্বাচনের ক্ষেত্রে শর্তগুলো শিথিল করা হোক। আমরা দেড় দুই মাসের মধ্যেই যেন নির্বাচন দেওয়া হয়।’
আরও মতামত উপস্থাপন করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি অর্পিতা গোলদার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী প্রমুখ।
সারাবাংলা/এআইএন/পিটিএম