ইসির বৈঠকে ২৩ দফা দাবি, সংস্কারে সময় দিতে প্রস্তুত জামায়াত: গোলাম পরওয়ার
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:২৮ | আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:২৬
ঢাকা: ‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করলে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না’- বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
একইসঙ্গে ‘নির্বাচনে নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে জামায়াতে ইসলামী সমর্থন করে না’- বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীনসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। বৈঠকে তার নেতৃত্বে জামায়াতের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘ইসির সঙ্গে নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার বিষয়ে মতবিনিময় হয়েছে। সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আমরা ২৩ দফা দাবি জানিয়েছি। বিশেষ করে সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করলে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সেই সময় দিতে জামায়াত প্রস্তুত।’
স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জনগণ চায় স্থানীয় সরকার সচল হোক, আমরাও চাই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হোক। এছাড়া আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের পক্ষে বলেছি। বাংলাদেশের জন্য এটি প্রয়োজন, সংসদ কার্যকরের জন্য প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রবাসী ভোটারদের ভোট দেয়ার সুযোগ করে দিতে হবে বলেছি।’
এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন বিধি কঠোর, তা বাতিল করা উচিত। সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, ৩০০ আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত। প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ জামায়াতের নিবন্ধনের বিষয় আদালতে পেন্ডিং আছে। আমরা আশা করি যে, ন্যয় বিচার পাব এবং ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক পাব।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতিসংঘের সকল মেইলের রেসপন্স করেছে জামায়াতে ইসলামী।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা গুম, খুন নিয়ে যে তদন্ত করেছে সেখানে জামায়াতের পক্ষ থেকে তারা কোনো সহযোগিতা পায়নি। এই বিষয়ে আপনাদের দলের অবস্থান কি?
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি নিয়ে বুধবারকে আমরা গণমাধ্যমে কথা বলেছি। এই তথ্য সঠিক নয়। আমরা চেক করে দেখেছি। আমরা জাতি সংঘ হিউম্যান রাইটস কমিশনের সঙ্গে তথ্য, যত ফ্যাক্স, যত মেইল সব আমরা রেসপন্স করেছি। এই তথ্যটা কিভাবে এসেছে আমরা চেক করবো। আমরা তথ্য যাচাই করেছি, তথ্যটা সঠিক নয়।
এর আগে, অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন। সেইসঙ্গে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব ছিলেন। আর জামায়াতের প্রতিনিধি দলে ছিলেন, এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল, এডভোকেট মো. জসীম উদ্দীন সরকার সভাপতি, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, এডভোকেট এস. এম. কামাল উদ্দীন, কর্মপরিষদ সদস্য, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ঢাকা মহানগর দক্ষিন, এডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, ডেপুটি এ্যাটর্নী জেনারেল, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে নিবন্ধন বাতিলের পর ইসির সঙ্গে জামায়াতের প্রথম বৈঠক করলো। এর আগে, দলটির নিবন্ধন থাকাবস্থায় বার্ষিক অডিট রিপোর্ট দিতে ইসি সচিবালয়ে গিয়েছিলেন জামায়াত প্রতিনিধিরা।
প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কে এম নূরুল হুদার কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তৎকালীন ইসি সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমদের ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর দলটিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল। দলটি নিবন্ধন নম্বর পেয়েছিল ১৪। কিন্তু একটি মামলার রায়ে হাইকোর্ট ২০১৩ সালে দলটির নিবন্ধন প্রক্রিয়া অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে। তাই নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে।
২০০৯ সালের জননুয়ারিতে জামায়াতকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট আবেদন হয়। ওই রিটের প্রেক্ষিতে জারি করা রুলের ওপর শুনানি শেষে হাই কোর্ট ২০১৩ সালের ১ অগাস্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। ফলে এই দলটির নির্বাচনে অংশ নেয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়।
এর ফলে জামায়াত দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে নি। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনেও দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে পারেননি জামায়াত নেতারা।
এরপর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৭ সালের মার্চে জামায়াতের জন্য বরাদ্দ মার্কা দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট জারি করে নির্বাচন কমিশন।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। শুনানিতে জামায়াতের মূল আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চ ওই আপিল খারিজ করে দেয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই আপিল পুনরুজ্জীবনের আবেদন করা হয় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে।
রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতে ইসলামীর পুনরুজ্জীবিত করা আপিলের শুনানি শুরু হয়। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে ৪৯টি নিবন্ধিত দল রয়েছে। এ পর্যন্ত ৫৪টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপার নিবন্ধন বাতিল রয়েছে।তিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপার নিবন্ধন বাতিল রয়েছে।
সারাবাংলা/এনএল/ইআ/আরএস