‘হওয়া উচিত ছিল ক্যাপ্টেন, কিন্তু আমাকে করলেন অতিথি’
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৪৩ | আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৪৭
ঢাকা: ‘আমাকে প্রধান অতিথি সম্বোধন করায় একটু কষ্ট পেলাম’- এমনটা উল্লেখ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মনে হলো এই খেলার মাঠ থেকে আমাকে বাইরে রাখা হলো। হওয়া উচিত ছিল খেলার ক্যাপ্টেন, কিন্তু আমাকে করলেন অতিথি। আমি অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে চাই না, আমি ক্যাপ্টেন হিসেবে বক্তব্য রাখতে চাই।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
নারী ও শিশুদের রক্ষা একটি বিশেষ দায়িত্ব উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মস্ত বড় দায়িত্ব হলো সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা। এ বিষয়ে সারা পৃথিবী আমাদের ওপর নজর রাখে। একটা ছোট্ট ঘটনা সারা দুনিয়ায় বিশাল হয়ে যায়। সরকারের দায়িত্ব সব নাগরিকের সুরক্ষা দেওয়া।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘কে কোন ধর্মের, সেটা বিবেচনায় না নিয়ে নাগরিক হিসেবে আমরা রক্ষা করব। এই সরকার তাদেরও (সংখ্যালঘু) সরকার, সুতরাং আমি সেবা করতে প্রস্তুত। আমরা সামনে যেসব কর্মসূচি নেব, সেখানে এটি সবচেয়ে ওপরে থাকবে।’
বাজারদর বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সমসাময়িক বিষয় যেমন- বাজারদর, এটি নিয়ে বহু কথা হয়। সেটারও একটা প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা করতে পারি। জেলায় বাজারদর, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিযোগিতা হতে পারে। আনন্দ, কাজ ও তার স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কৃত করা যেতে পারে যেসব জেলা ছয় মাস ভালো করবে।’
জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নিজের কাজ, সৃজনশীলতা প্রকাশ করার এটাই সুযোগ। গদবাধা কাজ তো আছেই। কিন্তু তারমধ্যেও ওই সৃজনশীলতা আছে। যত আইন আছে সবার মধ্যেই কাজ করা যায়। জেলার মধ্যে সময় যতটুকু হোক, সেটিকে স্মরণীয় করে রাখা। এটা একটা স্মরণীয় অধ্যায় হতে পারে, যদি আমরা করতে চাই।’
জেলা প্রশাসক সম্মেলনকে মহাশক্তিধর সমাবেশ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা আজ যারা এখানে বসে আছি, তারাই সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশ সরকার। এটা মহাশক্তিধর একটি সমাবেশ। আমরা যা করি, চিন্তা করি, পরিকল্পনা করি, সেটিই সরকার, সরকারের চিন্তা ভাবনা, কর্তব্য। এই মহাশক্তি নিয়ে আমরা কী কাজ করব, কী কাজের জন্য তৈরি, সফল-বিফল, সেগুলো আজকের সমাবেশের আলোচ্য বিষয়। এখানে কাউকে স্তুতি দিয়ে সময় নষ্টের সুযোগ নেই। এই স্তুতিবাক্য পরিহারে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিলাম, যেকোনো সভায় স্তুতিবাক্য অগ্রহণযোগ্য জিনিস বলে আমরা গ্রহণ করব, আমরা চালু করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে যা কিছু করণীয় তার দায়িত্বে আমরা সবাই আছি। যদি সবাই মিলে বাংলাদেশ সরকার হয়ে থাকে তাহলে একটা টিম হতে হবে। এটা টিম ওয়ার্ক, যে যার মতো করলে হয় না। টিম যখন একত্রিত হয়, তখন টিমের কী করণীয়, তা নিয়ে আলোচনা হয়। একজনের ভুলে পুরো টিম সাফল্য থেকে বঞ্চিত হয়। কাজেই আমরা কেউ যেন এমন ভুল না করি, যাতে করে পুরো টিমের সাফল্য ব্যাহত হয়, আমাদের গন্তব্যে পৌঁছানো ব্যাহত হয়।’
সরকার গঠনের পর ছয় মাস চলে গেল উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা আমাদের প্রথম পর্ব বলছি। অনেক ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে আয়োজনের সময়। এখন সেগুলো ঠিকঠাক করে পুরো খেলার জন্য প্রস্তুত।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কাজগুলো আমাদের হাতে মাপা জিনিস। একই জিনিস ঘুরে ফিরে বারবার আসছে। আমার এমন অবস্থায় আছি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা মস্ত বড় ইস্যু হয়ে গেল। এটাতে আমরা কে কী পরিমাণ অগ্রসর হলাম, কী করণীয়। এক নম্বর বিবেচ্য বিষয় আইন-শৃঙ্খলা। এটাতে আমরা যেন বিফল না হই। কারণ, এটাতে আমাদের অর্জন, সফল হতে পারে, বিফল হতে পারে। সেটাতে কী সমন্বয় হতে পারে তা নিয়েই আলোচনা হোক।’
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম