Saturday 22 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সময়ের পালা বদলেও কমেনি বইমেলার আবেদন

ফারহানা নীলা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:৩০ | আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:০১

আশির দশকে যেমন ছিল ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’

ঢাকা: বইমেলা আর বাঙালি একই সূত্রে গাঁথা। তাইতো নাড়ির টানে সববয়সী মানুষ ছুটে আসে এই প্রাণের মেলায়। বইপ্রেমি, পাঠক, লেখক, দর্শনার্থী সবার পদচারণায় মূখর হয়ে উঠে বাঙালির প্রাণের মেলা ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’।

কিন্তু এই বইমেলার ইতিহাসটা কি আমরা জানি? কিভাবে ‘বইমেলা’ বাংলার কৃষ্টি-কালচারে পরিণত হয়েছে। সেটাই জানবো আজ।

এই মেলার ইতিহাসটা যেন বাংলাদেশের অনেক কৃষ্টি-কালচারের মতোই সনাতন।

১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারির কথা। শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের সামনের বটতলায় এ কটুকরো চটের ওপর ৩২টি বই নিয়ে বসেন। এই ৩২টি বই ছিলো মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা বই এবং খুব আশ্চর্যজনকভাবে, প্রতিটি বই’ই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল।

১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত এভাবেই মেলায় বই বিক্রির চর্চা একাই চালিয়ে যান তিনি। পরবর্তীতে তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে, অন্যান্য প্রকাশনীরাও এখানে বই সাজানোতে যুক্ত হন।

শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহা, যার হাত ধরেই শুরু হয় বইমেলার যাত্রা

১৯৭৬ সালে কিছু প্রকাশক এসে একাত্ম হন চিত্তরঞ্জন সাহার সঙ্গে। এরও দুই বছর পর ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি এর সঙ্গে যুক্ত হয়। সে সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন আশরাফ সিদ্দিকী। বাংলা একাডেমির সক্রিয়তায় সেই বইমেলা আজকের এই গৌরবময় অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে।

১৯৭৯ সালে ‘বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি’ও এ মেলার সঙ্গে যুক্ত হয়। এই সমিতির প্রতিষ্ঠাতাও চিত্তরঞ্জন সাহা। তাই বইমেলার স্বত্তাধিকার হিসেবে চিত্তরঞ্জন সাহাকে ধরা হয়। তারই হাত ধরেই শুরু এই গর্বের মেলা।

বিজ্ঞাপন

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমি মেলা উপলক্ষে ১৫ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশেষ হ্রাসকৃত মূল্যে একাডেমি থেকে প্রকাশিত বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এর পাশাপাশি মুক্তধারা, স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্স ও তাদের দেখাদেখি আরও অনেকে বাংলা একাডেমির মাঠে নিজেদের বই বিক্রির উদ্যোগ নেয়।

১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রথম অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন করেন। মূলত ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্য আত্মত্যাগ দেওয়া শহিদদের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই মেলার নামকরণ হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’।

১৯৮১ সালে বইমেলার মেয়াদ ২১ দিনের পরিবর্তে ১৪ দিন করা হয়। এরপর প্রকাশকদের দাবির মুখে ১৯৮২ সালে মেলার মেয়াদ আবার ২১ দিনে বৃদ্ধি করা হয়। এরপর ক্রেতা, দর্শক ও বিক্রেতাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৪ সাল থেকে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে এই মেলা নিয়মিতভাবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

১৯৮৪ সাল থেকেই পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে নিয়মিত হয়ে আসছে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’

যুগ বদলের সময় ধরে, ডিজিটাল যুগে অনেক কিছু বদলে গেলেও, বইমেলার চাহিদা বিন্দুমাত্র কমেনি। বরং দিনকে দিন, এই মেলার চাহিদা আরও বাড়তে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায়,বইপ্রেমীদের পদচারণা আর প্রকাশকের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে স্থান সংকুলানের অভাবে ২০১৪ সাল থেকে অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূল আয়োজন বাংলা একাডেমির মুখোমুখি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেওয়া হয়।

একটু চটের ওপর চিত্তরঞ্জন সাহার মেলে ধরা সেই ৩২টি বইয়ের গল্পই আজ এতটা বিস্তৃত।

বিজ্ঞাপন

সেই বই মেলা এখন মানুষের প্রাণের মেলা। যেখানে বসন্তের আবহ রয়েছে, আছে একুশের চেতনা। যতদিন বাংলা থাকবে। প্রাণের এই বইমেলা থাকবে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। এমনটাই চাওয়া বাঙালির।

সারাবাংলা/এফএন/এসডব্লিউ

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ইতিহাস বইমেলা ২০২৫ সাহিত্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর