শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ফিরিয়ে নিচ্ছে চসিক
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:৪৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চার বছর পর চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এবার শহিদ দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করতে যাচ্ছে সিটি করপোরেশন। সংস্কারের মাধ্যমে নতুনভাবে নির্মিত শহিদ মিনার এবং এর সঙ্গে যুক্ত নানা স্থাপনা নিয়ে আপত্তি আছে চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে। তাদের আপত্তির কারণে ২০২৩ সালে সংস্কারকাজ শেষ হলেও সেখানে শ্রদ্ধা জানানোর উদ্যোগ নেয়নি চসিক।
তবে এবার চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ‘সংস্কৃতিকর্মীদের আপত্তির বিষয়টি মাথায় রেখে’ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আবারও কিছু প্রয়োজনীয় সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নগরীর কে সি দে রোডে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার পরিদর্শনে গিয়ে এ ঘোষণা দেন সিটি মেয়র।

নগরীর কে সি দে রোডে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার পরিদর্শনে গিয়েছিলেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন
মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে চট্টগ্রামের মানুষ এ শহিদ মিনারে ফুল দিতে পারেননি। অস্থায়ী হিসেবে মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুলের শহিদ মিনারে আমরা ফুল দিয়েছি। সেটাও সিটি করপোরেশনের একটি স্কুল। এবার আমরা আশা করছি চট্টগ্রামের মানুষ ২০২৫ সালে এসে ২১শে ফেব্রুয়ারির ফুল আগের যে ঐতিহ্যবাহী জায়গা, সেটার নতুন স্থাপনায় শ্রদ্ধা জানাবে। এটা উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সার্বিকভাবে সিটি করপোরেশন যেহেতু আগে থেকেই এটার ব্যবস্থাপনায় ছিল, আর পুলিশ আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করবে।’
তিনি বলেন, ‘আশা করছি এবার আলাদা একটি আমেজে চট্টগ্রামের মানুষ শ্রদ্ধা জানাবে। চট্টগ্রামের মানুষ অতীব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে নতুন শহিদ মিনার দেখার জন্য। এটার জন্য আলাদা একটি আগ্রহ জম্ম নিয়েছে চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে।’
সংস্কৃতিকর্মীদের আপত্তির বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র শাহাদাত বলেন, ‘এটা যিনি নকশা করেছেন তিনি এখন আমেরিকায় আছেন। তবুও আমি গণপুর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এখানে মিনার যেগুলো আছে সেগুলো আরও লম্বা করা হবে। কিন্তু আমরা কাজ শুরু করিনি। উনি যদি আসেন, বাড়ানোর কাজ বেশি সময় লাগবে না। সেটার জন্য ডিও লেটার দিয়েছি। আলটিমেটলি সেটার কাজও হবে।’
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, মুসলিম ইনস্টিটিউট হল এবং স্টুডিও থিয়েটার মিলিয়ে একটি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স বা সাংস্কৃতিক বলয় নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। ২০২৩ সালে এর কাজ শেষ হয়। এতে ব্যয় হয়েছে ২৮১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে গণপূর্ত বিভাগ।
প্রকল্পের অধীনে আছে, মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ও পাবলিক লাইব্রেরির অংশের পুরনো স্থাপনা ভেঙে ১৫ তলা গণগ্রন্থাগার ও আটতলা অডিটরিয়াম ভবন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার সংস্কার, ২৫০ জন ধারণক্ষমতার একটি উন্মুক্ত গ্যালারিসহ মুক্তমঞ্চ এবং ক্যাফে ও মিনি মিউজিয়াম।
২০২১ সালের অক্টোবরে পুরনো শহিদ মিনারটি সংস্কারের জন্য ভাঙার আগেই সংস্কৃতিকর্মীদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়েছিল। তারা দাবি করেছিলেন, আগের অবয়ব ঠিক রেখেই সংস্কার করতে হবে। তখন তৎকালীন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, শহিদ মিনারের মূল নকশার কোনো পরিবর্তন করা হবে না।
পরে নির্মাণ কাজ শেষ হলেও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের নকশা নিয়ে ২০২৩ সালের নভেম্বরে আপত্তি তুলেছিল চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সংগঠক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এরপর সে সময়ের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি নকশা সংশোধনের ১০টি সুপারিশ করলেও সেগুলো বাস্তবায়নে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
সারাবাংলা/আইসি/এইচআই