Saturday 22 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভারতে বিজিবি-বিএসএফ এর ৫৫তম সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:২২

ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বৈঠকে বিএসএফের মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী ও বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৪ দিনব্যাপী (১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি) ৫৫তম সীমান্ত সম্মেলন ভারতের নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন। অপরদিকে বিএসএফ মহাপরিচালক শ্রী দলজিৎ সিং চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহন করেন।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিহতের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সীমান্ত হত্যার ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি জোর আহ্বান জানান। সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে যেকোনো স্থায়ী স্থাপনা এবং কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের ক্ষেত্রে উভয় দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ পরিদর্শকদলের পরিদর্শন ও যৌথ আলোচনার দলিলের ভিত্তিতে নির্মানের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়।

আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম সীমান্তের শূন্যরেখায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মানের বিষয়টি তুলে ধরে সীমান্তে ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বিএসএফ মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়া সীমান্তবর্তী নদীর ভাঙন রোধে তীরবর্তী বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজ এবং পূর্বাভাস না দিয়ে বাংলাদেশের উজানে বাঁধ খুলে পানি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশে সৃষ্ট অনাকাঙ্খিত বন্যার ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করার জন্য বিএসএফকে অনুরোধ জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

ভারত থেকে বাংলাদেশে মাদক ও অস্ত্র পাচার রোধ, স্বর্ণসহ অন্যান্য দ্রব্যাদির চোরাচালান রোধ, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ এবং সীমান্তে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মতো অপরাধ দমনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়া হয়। সীমান্তে শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিজিবি মহাপরিচালক। বিএসএফ মহাপরিচালক মানুষের জীবন ও মানবাধিকার চেতনার প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান রেখে সীমান্তে হত্যা নিরসনে বিএসএফ কর্তৃক ‘অ-প্রাণঘাতী’ নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি মাদক পাচার ও চোরাচালান রোধসহ সীমান্তে শান্তির জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে এমন যেকোনো ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন।

এবারের সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো ছিল- ক. সীমান্তে নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো/হত্যা/আহত/মারধরের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যৌথ টহল বৃদ্ধি।

খ. আলোচনায় সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোন স্থাপনা, কাঁটাতারের বেড়া, প্রতিরক্ষায় ব্যবহৃত হয় এমন কোন স্থাপনা বা বাংকার নির্মানের ক্ষেত্রে উভয় দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ পরিদর্শক দলের পরিদর্শন এবং যৌথ আলোচনার দলিলের ভিত্তিতে নির্মাণ নিশ্চিত করা।

গ. গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে আরও ছিল- বিভিন্ন ধরণের আন্ত:সীমান্ত অপরাধ দমন বিশেষ করে ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য ও গবাদিপশু পাচার রোধ, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানব পাচার, স্বর্ণ, অস্ত্র, জাল মুদ্রার নোট প্রভৃতি চোরাচালান রোধ এবং এসকল অপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদান করতে উভয়পক্ষই সম্মত হয়েছে।

ঘ. আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন করে উভয় দেশের নাগরিক ও বাহিনীর সদস্যদের অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের ফলে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝি ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সীমান্তে উভয় বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি দুই দেশের সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করা থেকে বিরত রাখতে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে।

ঙ. মানবপাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ বিশেষ করে মানবপাচারের মত অমানবিক কার্ক্রমের সাথে জড়িত উভয় দেশের অপরাধী বা দালালচক্রের কার্যক্রম প্রতিরোধে পরস্পরকে সহায়তা এবং মানবপাচারের শিকার ব্যক্তিদেরকে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রচলিত দেশের আইন অনুযায়ী উদ্ধার ও পুনর্বাসনে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছেন।

চ. এছাড়া আগরতলা থেকে আখাউড়ার দিকে প্রবাহিত সীমান্তবর্তী ৪টি খালের বর্জ্য পানি অপসারণে উপযুক্ত পানি শোধনাগার স্থাপন, জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর সাথে রহিমপুর খালের মুখ উন্মুক্তকরণ, আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সম্ভাব্য অবস্থান ও তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ফলপ্রসূ আলোচনাও হয়েছে।

ছ. সবশেষে, উভয়পক্ষ ‘সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) এর আওতায় পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির জন্য গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে উভয় বাহিনীর পারস্পরিক সহযোগিতার প্রশংসা করেন। উভয়পক্ষ আগামী দিনে যৌথ খেলাধুলা ও জয়েন্ট রিট্রিট সিরিমনি সহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেও সম্মত হয়েছে।

সারাবাংলা/ইউজে/ এনজে

বিএসএফ বিজিবি সম্মেলন সিদ্ধান্ত

বিজ্ঞাপন

পঞ্চগড়ে প্রধান শিক্ষককে রাজকীয় বিদায়
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর