ছত্রাকনাশক য়োকরাল স্প্রে
চুয়াডাঙ্গায় পেঁয়াজ চাষিদের সর্বনাশ, কোটি টাকার ক্ষতি
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৪:০৮
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের চাষিরা পেঁয়াজ খেতে মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ উৎপাদিত য়োকরাল ছত্রাকনাশক স্প্রে করে সর্বনাশ হয়েছে। এতে ২০ জন চাষির প্রায় ৩০ বিঘা জমির পেঁয়াজ পচে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে কোটি টাকার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খেতের পেঁয়াজ গাছ পুড়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে পেঁয়াজ। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকরা ফসলের খেতে এসে আহাজারি করছেন।
এক মাস পরেই পেঁয়াজ তাদের ঘরে ওঠার কথা থাকলেও পচে যাওয়ায় তারা এখন হতাশ। এনজিও এবং মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়েছিলেন ওই চাষিরা। ফসল তুলে ঋণের টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু ফসল পুড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
চাষিরা জানান, তাদের পেঁয়াজ চাষে বিঘা প্রতি ব্যয় হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। ফলন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল প্রতি কাঠায় ৮মণ। বিঘায় ১৬০ মণ। যা বিক্রি করা যেত প্রায় ২ লাখ টাকা।
ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা বলেন, পেঁয়াজ খেতে সাথি ফসল হিসাবে মুখি কচুর চাষও করেছিলেন। য়োকরাল ছত্রাকনাশক স্প্রে করার কারণে পেঁয়াজের সঙ্গে কঁচুও নষ্ট হয়ে গেছে।
জাহাজপোতা গ্রামের পেঁয়াজ চাষি সেলিম জানান, তিনি আড়াই লাখ টাকার গরু বিক্রি করে ও ঋণ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। সঙ্গে মুখি কঁচু চাষ করেন। পেঁয়াজ ও কচু নষ্ট হওয়ায় তার প্রায় ৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ৩ বিঘা জমিতে মার্শাল কোম্পানীর য়োকরাল কীটনাশক প্রয়োগ করায় এমনটি ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এখন ঋণের কিস্তি কিভাবে পরিশোধ করবেন— এ চিন্তায় দিশেহারা।
সেলিম বলেন, হরিরামপুর গ্রামের আরিফুলের দোকান থেকে তিনি মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ উৎপাদিত য়োকরাল ছত্রাকনাশক কিনে স্প্রে করে ফসলে দিলে সর্বনাশ হয়। তিনি এর ক্ষতি ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন।
জাহাজপোতা গ্রামের ফয়সালের স্ত্রী রেবেকা রুনা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, তাদের আড়াই লাখ টাকা দামের গরু বিক্রি করে দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেন। য়োকরাল বিষ দিলে তাদের সব পেঁয়াজ খেত পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। হুদাপাড়া গ্রামের সারের দোকানদার ইমরানের কাছ থেকে কেনা য়োকরাল বিষ কিনেছেন বলে জানান।
গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, হুদাপাড়া গ্রামের লিটনের ১৬ কাঠা, কালু কয়ালের ১০ কাঠা, খোকনের ১ বিঘা, সাগরের ১২ কাঠা, খোকনের ১০ কাঠা, জাহাজপোতা গ্রামের ফয়সালের ২৫ কাঠা, মহত আলীর দেড় বিঘা, আব্দুর রাজ্জাকের দেড় বিঘা, শরিফ উদ্দিনের ২ বিঘা, হরিরামপুর গ্রামের সব্দারের ২ বিঘা, জমিরুলের ১০ কাঠা, মুন্সীপুর গ্রামের নাজমুলের ২৫ কাঠা, একই গ্রামের সিরাজের ২৫ কাঠা, দুখো, শাকিল, শাহাবুদ্দিন, মনিরুল ও হাবিবুরের ১ বিঘা করে মোট ৫ বিঘা, কার্পাসডাঙ্গার সাঈদের ১৬ কাঠা খেতের পেঁয়াজ পুড়ে পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
হুদাপাড়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষি মহত আলী জানান, কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের বয়রা, হুদাপাড়া, জাহাজপোতা, হরিরামপুর, কুতুবপুর, চন্দ্রবাস, শিবনগর, মুন্সীপুর, আটকবর, কানাইডাঙ্গা গ্রামে প্রতি বছর শত শত বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করা হয়। কিন্তু এবার সবাই পথে বসতে হবে।
ওই সব গ্রামের পেঁয়াজ চাষিরা বলেন, মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ উৎপাদিত য়োকরাল ছত্রাকনাশক বিক্রি করে পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা ও ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কীটনাশক বিক্রেতা আরিফুল বলেন, তিনি মাঠে আছেন।
ডিলার হাসিবুরের সঙ্গে কথা বললে তিনি নিজের দায় এড়িয়ে বলেন, আমি কিছু জানিনা। কোম্পানির লোক বলতে পারবেন।
মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যালের ফিল্ড অফিসার আরিফুলের বলেন, আমরা মাঠে তদন্ত করে একটা তালিকা করেছি। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। আমাদের কীটনাশকে ক্ষতি হয়েছে কিনা পরীক্ষা চলছে। ক্ষতি হলে আমরা দেখবো।
কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মামুন বলেন, আমরা মাঠে তদন্ত করেছি। ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের বলেছি ক্ষতিপূরণ না দিলে উপজেলা কৃষি অফিসে লিখিত অভিযোগ করতে। আমরা কৃষকের পাশে থাকবো। ক্ষতিগ্রস্থ পেঁয়াজ চাষি ও ক্ষতির পরিমাণ নিরুপনের কাজ শেষ হলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, সরেজমিন ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ পরিদর্শন করেছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কীটনাশক কোম্পানীর কর্মকর্তাদের ডেকে কথা বলেছি, তারা আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আমি আশা করব তারা শীঘ্রই ক্ষতিপূরণ দিবেন। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/এসআর
চুয়াডাঙ্গা ছত্রাকনাশক য়োকরাল স্প্রে পেঁয়াজ চাষিদের সর্বনাশ সারাবাংলা