Tuesday 25 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মঞ্চ আর মাইকের’ সঙ্গে নোমানের ৬৩ বছরের পথচলার সমাপ্তি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫৮ | আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:১৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আবদুল্লাহ আল নোমান। ৮১ বছর বয়সের মধ্যে ৬৩ বছরই কাটিয়ে গেছেন রাজনীতির ময়দানে। ষাটের দশকের শুরুতে ছাত্র সংগঠনে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতির পথে যে যাত্রা তিনি শুরু করেছিলেন, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের মধ্য দিয়ে তার সেই পথচলাও শেষ হয়েছে। রাজনীতির দীর্ঘ যাত্রাপথে শুধু সাংগঠনিক উচ্চপদ নয়, একাধিকবার নির্বাচিত হয়ে সংসদে গেছেন, মন্ত্রীর চেয়ারেও বসেছেন কয়েকবার।

তবে পদপদবি আর রাজনীতির মত-পথকে একপাশে রেখে সবাইকে আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা নোমানকে দিয়েছে সর্বমানুষের শ্রদ্ধার আসন, ‘জনমানুষের নেতা’ হিসেবে পেয়েছেন স্বীকৃতি। আর তাই বর্ষীয়ান এ রাজনীতিকের প্রয়াণে চট্টগ্রাম জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। রাজনীতির নানা মতের, নানা পথের মানুষ শোকে মুহ্যমান তাদের প্রিয় ‘নোমান ভাইয়ের’ জন্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেন হাহাকার উঠেছে !

বিজ্ঞাপন

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন আবদুল্লাহ আল নোমানের। ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সরকারের গঠিত হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে ছাত্র আন্দোলন। সেই আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে যোগ দেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে। সেই শুরু সাম্যবাদী রাজনীতির পথচলার। ১৯৬৫ সালে বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলন দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আবদুল্লাহ আল নোমান ছাত্র ইউনিয়নের মেননপন্থী হিসেবে পরিচিত চীনপন্থী অংশে যোগ দেন। তিনি সংগঠনটির বৃহত্তর চট্টগ্রামের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

প্রবীণ সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি সারাবাংলাকে জানান, চট্টগ্রামে চীনপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের সূচনালগ্নেই এর হাল ধরেছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান। চট্টগ্রামে তিনি শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলেছিলেন। শত, শত ছাত্রছাত্রীকে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের পতাকাতলে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

‘১৯৬৭ সালে আমি যখন ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র, নোমান ভাই তখন আমাকে হাতে ধরে নিয়ে যান ছাত্র ইউনিয়নে। উনার হাত ধরেই আমি ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দিই। উনি আমার রাজনীতির গুরু। শুধু আমি নয়, আমার মতো শত, শত ছাত্রকে তিনি রাজনীতির পাঠ দিয়েছেন। উনার সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিল প্রবল। সম্মোহনী শক্তি ছিল অসাধারণ, মানুষকে খুব সহজে আপন করে নিতে পারতেন,’ বলেন জাহিদুল করিম কচি।

ছাত্র ইউনিয়নের নেতা হিসেবে আবদুল্লাহ আল নোমান চট্টগ্রামে আরও একটি ইতিহাস নির্মাণ করেছিলেন। দেশে বিদ্যালয় পর্যায়ে প্রথম শহিদ মিনার নির্মাণ হয় ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে। ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে সেই শহিদ মিনার নির্মাণের অন্যতম কারিগর ছিলেন নোমান।

সেসময়কার কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক অমল কান্তি নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে শহিদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। শিক্ষকদের মধ্যে আমি এবং ছাবেরী সাহেব এর পক্ষে ছিলাম। প্রধান শিক্ষক বিরোধিতা করলেও আমরা অনড় ছিলাম। তৎকালীন ভাসানীপন্থী ন্যাপের নেতা সৈয়দ জালাল সাহেব শহিদ মিনারের জন্য ইট, বালু, সিমেন্ট পাঠিয়েছিলেন। আবদুল্লাহ আল নোমান ভাই ফলক নিয়ে গিয়েছিলেন। সেসময় পাকিস্তানি শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এটা নির্মাণ করা সহজ কাজ ছিল না।’

জ্যেষ্ঠ্য সাংবাদিক মুস্তফা নঈম সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৯৬৬ সালে আবদুল্লাহ আল নোমান জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। কধুরখীল স্কুলের ছাত্র সৈয়দ নুরুল হুদা, বোয়ালখালীর ছাত্র ইউনিয়নের নেতা সৈয়দুল আলম, সৈয়দ হাসান, মিলন নাথ রেজাউল্লাহ আকবরীসহ সেসময় বেশ কয়েকজন ছাত্র মিলে স্কুলে শহিদ মিনার গড়ার উদ্যোগ নেন। আবদুল্লাহ আল নোমান তাদের সহায়তা করেন। শহীদ মিনার স্মুতিফলক তৈরি করে তিনি নিজে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে এ শহিদ মিনার বাংলাদেশে স্কুল পর্যায়ে প্রথম শহিদ মিনার হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।’

ঊনষত্তুরের গণঅভ্যুত্থানে নোমান চট্টগ্রামের একজন সামনের কাতারের সংগঠক ছিলেন। ছাত্র রাজনীতি শেষ হলে তিনি যোগ দেন শ্রমিক রাজনীতিতে। এর আগেই অবশ্য তিনি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সংস্পর্শে আসেন। নোমানকে পূর্ববাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি করা হয়। পাশাপাশি ভাসানীপন্থী ন্যাপের রাজনীতিতেও সক্রিয় হন। ১৯৭০ সালে তাকে ন্যাপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আবদুল্লাহ আল নোমান বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সত্তরের দশকের শেষদিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জাগদলের সঙ্গে ‘ভাসানী ন্যাপ’ একীভূত হয়। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের হাত ধরে ন্যাপ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান যোগ দেন বিএনপিতে। আমৃত্যু তিনি এ দলের সঙ্গেই ছিলেন। সর্বশেষ তিনি দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। আশি-নব্বইয়ের দশক, এর পরবর্তী আরও অন্তঃত এক দশক চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে আবদুল্লাহ আল নোমানকে ঘিরেই।

সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি বলেন, ‘নোমান ভাই ছিলেন নেতাদের নেতা। উনি হাতে ধরে কর্মী বানাতেন, হাতে ধরে নেতা তৈরি করতেন। চট্টগ্রামে এই যে তৃণমূলে বিএনপির লক্ষ, লক্ষ নেতাকর্মী, সমর্থক- সবই আবদুল্লাহ আল নোমানের তৈরি করা। চট্টগ্রামকে যে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি বলা হয়, এর রূপকার নোমান ভাই। উনি আজীবন গণমানুষর সঙ্গে থেকে রাজনীতি করে গেছেন। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান- কার কী ধর্ম, কার কী মত তিনি কিছুই বিবেচনায় নিতেন না। সবাইকে সমান চোখে দেখতেন। এজন্য চট্টগ্রামের কোতোয়ালী আসন, যে বিপুল সংখ্যক অমুসলিম ভোটার, সেই আসনেও বারবার তিনি নির্বাচিত হয়েছেন।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আবদুল্লাহ আল নোমান অবিভক্ত ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। ছাত্র রাজনীতির সময় থেকেই তিনি অসম্ভব সাহসী একজন নেতা ছিলেন। আমাদের রাজনীতির মত-পথ একসময় স্বাভাবিকভাবেই ভিন্ন হয়েছে, কিন্তু নোমান ভাইয়ের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল, তিনি সেসবকে আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকেননি। মতপথের ঊর্দ্ধে উঠে সব মানুষকে তিনি বুকে টেনে নিতে পারতেন। এজন্য যার যে রাজনীতিই থাকুক না কেন, সবাই তাকে আপন ভাবতেন।’

চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আশির দশকের মধ্যভাগ কিংবা শেষভাগে আমরা যারা ছাত্রদলের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলাম, আমাদের শিক্ষাগুরু, দীক্ষাগুরু ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান। আমরা অনেকেই উনার কাছে প্রথম রাজনীতির পাঠ নিয়েছি। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ দেখিয়ে দিয়েছেন নোমান ভাই।’

আশির দশকে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করার ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের অন্যতম রূপকার হিসেবে বলা হয় আবদুল্লাহ আল নোমানকে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে নোমানের ভূমিকা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন।

এক শোকবার্তায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে দলকে সুসংগঠিত করতে আবদুল্লাহ আল নোমান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তিনি গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সাহসী নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি ছিলেন দল অন্তঃপ্রাণ নেতা। তার মৃত্যুতে দেশ ও জাতীয়তাবাদী দল এক ত্যাগী, সাহসী, সংগ্রামী সজ্জন ও বর্ণাঢ্য রাজনীতিবিদকে হারালো। দেশের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তার অবদান দেশ, জাতি‌ ও দল চিরদিন মনে রাখবে।’

চট্টগ্রামের রাউজান ও কোতোয়ালি আসন থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপি সরকারের মন্ত্রিসভায় খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার দায়িত্ব পালন করেছেন। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর শাহ আমানত সেতু, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

চট্টগ্রামের ‍উন্নয়নে আবদুল্লাহ আল নোমানের নিরলস প্রচেষ্টার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন আশির দশকের ছাত্রদল নেতা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন এক শোকবার্তায় বলেন, ‘চট্টগ্রামের উন্নয়নে আবদুল্লাহ আল নোমানের অবদান চিরস্মরণীয়। তিনি চট্টগ্রামের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে নানা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শিক্ষাক্ষেত্রে তার প্রচেষ্টা ছিল প্রশংসনীয়। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের উন্নয়নে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। জনগণের কল্যাণে তার নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ আজও চট্টগ্রামের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।’

চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর শাহজাহান চৌধুরী ও সেক্রেটারি মুহাম্মদ নুরুল আমিন বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায় নেতারা বলেছেন, ‘আবদুল্লাহ আল নোমান একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিলেন। তার মৃত্যুতে বিএনপির রাজনীতিতে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে।’

চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির সভাপতি অশোক সাহা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বিবৃতি পাঠিয়েছেন। এতে সিপিবি নেতারা বলেন, ‘আবদুল্লাহ আল নোমান একজন দেশপ্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিজ্ঞ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তার সাহসী ভূমিকা অবিস্মরণীয়। তার মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, উত্তর জেলার সভাপতি গোলাম আকবর খোন্দকার, নগর কমিটির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ইদ্রিস ও সদস্য সচিব হেলাল উদ্দিন, নগর কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, চসিকের সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম শোক জানিয়ে বিবৃতি পাঠিয়েছেন।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে পাঠানো এক শোকবার্তায় দেশের উন্নয়নে আবদুল্লাহ আল নোমানের অবদান গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয়েছে। বিবৃতিতে প্রেসক্লাবের অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, সদস্য মুস্তফা নঈম ও গোলাম মাওলা মুরাদ জ্যেষ্ঠ্য সাংবাদিক শামসুল হক হায়দরী, মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, মিয়া মোহাম্মদ আরিফ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

১৯৯১ ও ২০০১ সালে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান। ২০০৮ সালে তিনি ডবলমুরিং-হালিশহর আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তবে জিততে পারেননি। ২০১৮ সালেও একই আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। বিতর্কিত সেই নির্বাচনের আগে প্রচারণায় এসে হামলার শিকার হয়েছিলেন তিনি।

সাংগঠনিক ও নির্বাচনি রাজনীতিতে ব্যাপক সাফল্য থাকলেও বিএনপিতে তিনি অবমূল্যায়নের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তারই ভাবশিষ্য সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি’র। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘নোমান ভাইকে কেন স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য করা হয়নি আমরা জানি না। এটা নীতিনির্ধারকরা ভালো বলতে পারবেন। আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি যে, উনাকে দলীয়ভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।’

২০০৮ সাল পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান। গ্রেফতার হয়ে কারাগারেও গিয়েছিলেন। আশি ঊর্দ্ধ নোমান নানা রোগে ভুগছিলেন। তারপরও চট্টগ্রামে নিয়মিত সভা-সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। সর্বশেষ গত জানুয়ারির মাঝামাঝিতে চট্টগ্রামে এসে একাধিক সভায় যোগ দেন। আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে যোগ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু আর আসতে পারলেন না। নোমানের মৃত্যুতে সেই সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে।

চট্টগ্রামে আবার ফিরবেন আবদুল্লাহ আল নোমান, তবে সশরীরে নয়, কফিনবন্দি হয়ে। নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ের প্রিয় প্রাঙ্গনে আর শোনা যাবে না নোমানের কন্ঠস্বর, দেখা যাবে না মুষ্ঠিবদ্ধ হাত।

আবদুল্লাহ আল নোমানের একান্ত সহকারী নুরুল আজিম হিরু সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, আগামী শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) আবদুল্লাহ আল নোমানকে চট্টগ্রামে আনা হবে। শুক্রবার ‍জুমার নামাজের পর জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গনে নামাজে জানাজা হবে। আসরের নামজের পর জন্মস্থান রাউজানের গহিরা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

আবদুল্লাহ আল নোমান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর