পিলখানা হত্যাকাণ্ড: বাবা কেমন হয়- জানা নেই ঐশীর
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:১৮
২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহে নিহত শহিদ মেজর হুমায়ূন হায়দারের স্ত্রী শামীমা পারভীন ও মেয়ে ঐশী আমব্রিন – ছবি : সারাবাংলা
ঢাকা: “বাবা কেমন হয়, বাবার ঘ্রাণ কেমন, আকাঙ্খা কেমন -তা আমি জানিনা। আমি আমার বাবাকে দেখি নাই।”
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সেনা শোক দিবসে বাবার কবরস্থানে দাঁড়িয়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত মেজর হুমায়ূন হায়দারের মেয়ে ঐশী আমব্রিন।
প্রসঙ্গত ২০০৯ সালের পিলখানা ট্রাজেডি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কময় ঘটনা। নির্মম ওই হত্যাযজ্ঞে শহিদ হন ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। এর মধ্যে রয়েছেন মেজর হুমায়ূন হায়দার। তিনি নিহত হওয়ার সময়ে তার মেয়ে ঐশী আমব্রিনের বয়স ছিল মাত্র ৪ মাস। বাবা কি জিনিস তা বুঝে ওঠার আগেই মাথার উপর থেকে ছায়া হারিয়ে ফেলে ঐশী। বঞ্চিত হন বাবার আদর, ভালোবাসা এবং তার হাতটি ধরে বেড়ে ওঠার স্বাদ থেকে।
ঐশী আমব্রিন বলেন, “শুনেছি, আমার বয়স যখন ৪ মাস তখন পিলখানায় বাবাকে হত্যা করা হয়। যারা আমার মতো অনেক সন্তানকে বাবার আদর, সোহাগ থেকে বঞ্চিত করেছে তাদের যথাযথ বিচার করে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝোলানো হোক।”
ঐশীর মা ও শহিদ মেজর হুমায়ূন হায়দারের স্ত্রী শামীমা পারভীন বলেন, “আমার স্বামী নিহত হওয়ার পর শোকে ট্রমায় ভুগে আমার ছেলে ১১ বছর বয়সে মারা যায়। আমি প্রতিবার আমার ছেলের কবর জিয়াররত করতে আসি। শহিদ সেনা দিবস ঘোষণা করার পর এবারই প্রথম আমার স্বামীর কবরে আসলাম। এর নেপথ্যে কে ছিল, সেটা জানতে চাই। ছোট ছোট বাচ্চাদের কারা এতিম করেছে সেটা জানতে চাই।”
তিনি বলেন, “বাসা থেকে বের হলেন একটা সুস্থ মানুষ, আর ৩ দিন পর লাশ হয়ে ফিরলেন। এটা তো একটা সভ্য দেশে হতে পারে না। এই হত্যাকাণ্ডে কে দায়ী- সেটা আমি বলতে চাই না, এতে তদন্ত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তদন্তে সঠিকভাবে দোষীদের শনাক্ত করা হবে বলে আমি এখনো আশা করি। তদন্তে বের হবে কে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত, কে পরিকল্পনাকারী, নেপথ্যে কে আছে এবং সরাসরি যারা ছিল- তাদের খুঁজে বের করে প্রকাশ্যে ফাঁসির দাবি জানাই।”
শামীমা পারভীন বলেন, “আমাদের একটি দাবি পূরণ হয়েছে। এখন অপেক্ষা বিচারের। আমরা একটি সুষ্ঠু বিচার চাই। যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক।”
শহীদ কর্নেল এমদাদুল ইসলামের মেয়ে বলেন, “আমরা একটা জালিম শাসনের অধীনে এতদিন ছিলাম। শেখ হাসিনা ঘটনাটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমরা তো পিলখানায় ছিলাম, অনেক সৈনিককে হত্যা করা হয়েছে। কেউ জেলে আছেন। আমাদের বাবাকে কে মেরেছে, তা আল্লাহ ছাড়া বলা সম্ভব না। মুসলিম হিসেবে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে যে, কেউ কখনো চিরদিন বাঁচে না। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার একদিন হবে।”
উল্লেখ্য, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ওই দিনটিকে শহিদ দিবস এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন শহিদ পরিবারগুলো। কিন্তু স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে তাদের কোনো দাবিই পূরণ হয়নি। অবশেষে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে তাদের দাবির একটি পূরণ হয়েছে, ঘোষণা করা হয়েছে ‘শহিদ সেনা দিবস’।
এবার তাদের দাবি- ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝোলানো হোক।
সারাবাংলা/এমএইচ/আরএস