থানা আইএসপি লাইসেন্স বহাল চান ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪২ | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৫৯
ঢাকা: টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরিসি) নতুন নীতিমালায় থানা আইএসপি লাইসেন্স বহাল রাখার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের ইন্টারনেট সেবাদানকারী আইএসপি ব্যবাসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনের সামনে সর্বস্তরের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবাসায়ীদের ব্যানারে ওই মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপিও দিয়েছেন সাধারণ আইএসপি সদস্যরা।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া সদস্যরা ‘আইএসপি বাঁচাও, কর্মসংস্থান বাড়াও’, ‘দেশীয় আইএসপি বাচিয়ে রাখি, দেশের টাকা দেশে রাখি’, ‘প্রতিযোগিতামূলক সেবা গ্রাহকের অধিকার’, ‘আমাদের বিনিয়োগের সুরক্ষা চাই’, ‘আমরা দেশীয় উদ্যোক্তারা প্রায় দেড় কোটি গ্রাহককে ইন্টারনেট সেবা দিয়ে থাকি’, ‘১০ লাখ কর্মংস্থান সৃষ্টি করেছে থানা আইএসপি’এমনসব প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
মানবন্ধনে অংশ নিয়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায়ী তালাত মাহমুদ তোষান বলেন, ‘আমরা এক হাজার ৮০০ এর অধিক লাইসেন্সধারী আছি। গত ২৫ বছর ধরে প্রান্তিক পর্যায়ে আমরা ইন্টারনেট সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা জানতে পেরয়েছি নতুন নীতিমালা হচ্ছে, সেখানে নতুন লেয়ার তৈরি হচ্ছে। থানা আইএসপি ক্যাটাগরি উঠিয়ে দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘গত ২৫ বছর ধরে যাদের হাত ধরে আইএসপি শিল্প গড়ে উঠেছে। আমরা যারা মাত্র ৫০০ টাকায় ইন্টারনেট সেবা দিয়েছি সেই আমাদেরকে পাশ কাটিয়ে কোনো পলিসি তৈরি করা যাবে না। নতুন পলিসিতে আমাদের লাইসেন্স বহাল থাকতে হবে। নতুন পলিসিতে বলা হয়েছ, থানা নামে আর কোনো লাইসেন্স থাকবে না। এখানে একটি সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে থানা আইএসপি যাদের আছে তাদেরকে ইন্টারনেট সেবাদানের জন্য অনুমতি দেবে। যখন এটি সার্টিফিকেটের মধ্যে যাবে এই এক হাজার ৮০০ হয়ে যাবে এক লাখ ৮০ হাজার। এতো বিশাল জনগোষ্ঠীকে বিটিআরসিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। এটি একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে।’

বিটিআরসির সামনে মানববন্ধনে ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা।
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আমাদের বিনিয়োগ শতাভাগ দেশীয়, এই টাকাটা দেশেই থাকছে। বৈদেশিক বিনিয়োগর জন্য এখন এখানে যদি কোনো ধরণের নীলনকশা করা হয়, সেটি হবে একটি আত্মাঘাতী সিদ্ধান্ত। আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ লাখ কর্সসংস্থানের সৃষ্টি করেছি, এই পলিসি হলে তাদের পেটে লাথি মারা হবে। আমরা এ ধরণের প্রহসণমূলক পলিসি চাই না। আমরা চাই নতুন পলিসিতে প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হোক।’
থানা পর্যায়ের আইএসপি ব্যবসায়ী মীর মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিটিআরসি বর্তমানে লাইসেন্স পরিবর্তনে নামে আমাদের থানা ভিত্তিক আইএসপিদের লাইসেন্স বাতিল করে টেলকো ব্যবসায়ীদের হাতে ইন্টারনেট ব্যবসাকে তুলে দেওয়ার পায়তারা করছে। আমরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। আমরা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছি খুবই স্বল্প খরচে। খরচ বাড়ানোর জন্য দেশের ব্যবসাকে বাইরের দেশের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বর্তমান বিটিআরসি তাদের গাইডলাইন পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। আমরা এই গাইডলাইন পরিবর্তনের বিরোধীতা করছি। আমাদের সুরক্ষা দিতে হবে। দেশীয় ব্যবাসায়ীদের সুরক্ষা দিয়ে আমাদের লাইসেন্স বহাল রাখতে হবে।’
আইএসপিএবি’র সদস্য কমান্ডার নেটের মালিক মো. রাসেল বলেন, ‘বিটিআরসি বর্তমানে গাইড লাইন পরিবর্তনের নামে থানা ভিত্তিক আইএসপি লাইসেন্স বাতিল করতে চাচ্ছে। আমাদের এই লাইসেন্স বহাল রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
আরেক আইএসপি ব্যবসায়ী শাওন বলেন, ‘আমরা যারা সারাদেশের থানা আইপিএবি সদস্য আছি, দেশের ইন্টারনেটের উন্নতির ক্ষেত্রে আমাদের সর্বোচ্চ অবদান রয়েছে। প্রতিটি গ্রামে, পাড়া ও মহল্লায় যে ইন্টারনেট ছড়িয়ে গেছে; মানুষকে হাতে কলমে ইন্টারনেট ব্যবহার শিখিয়ে আজকে ইন্টারনেটকে এই অবস্থায় এনেছি। আমাদের লাইসেন্স দেওয়ার ফলে আমরা আমাদের জীবনের সর্বস্ব বিনিয়োগ করে ব্যবসাটাকে দাঁড় করিয়েছি। আমাদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়া শুধুমাত্র টেলকো ও ন্যাশন ওয়াইডের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগ নিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যে খসড়াটি দেখেছি, সেখানে থানা আইএসপি বাদ দিয়ে খসড়া তৈরি করা হয়েছে। যদি সংস্কার করতেই হয় আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে সংষ্কার করতে হবে। আমরা যে লাইসেন্সের অধীনে জীবনের সকল সম্পদ বিনিয়োগ করেছি তার নিশ্চয়তা চাই। আমরা যাতে বড় হতে পারি, ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে যে আইনগত সুবিধাগুলো পাওয়া উচিৎ; তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া লাইসেন্সের নীতিমালা পরিবর্তন হলে সেটি আমরা মেনে নেব না।’
এদিকে সর্বস্তরের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের পাঠানো স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘দশ লাখ কর্মসংস্থানের এই ইন্ডাসট্রিতে জিডিপিতে আমাদের অবস্থান সহজেই অনুমেয়। অথচ, আজ কোনো অজানা গোষ্টির স্বার্থ রক্ষায় এত কর্মসংস্থান ও ত্যাগ-তিতিক্ষার এই শতভাগ দেশীয় ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংশের নীল নকশা করা হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রির বৃহৎ অংশীদার এই ব্যবসায়ীদের পাশ কাটিয়ে নতুন পলিসির মাধ্যমে শতভাগ দেশীয় ও পরিনত একটি ইন্ডাস্ট্রিকে ধ্বংসের প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
দেশীয় উদ্যোক্তাদের মতামতকে আড়ালে রেখে নতুন কোন পলিসি গ্রহণযোগ্য হবে না। ওই সংস্কার প্রস্তাবনায় এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এবং জাতীয় স্বার্থে সুলভ মূল্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে আমাদের মতামত ও ব্যপক অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে হবে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/ইআ