Tuesday 04 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

থেমে নেই সেই মানবিক ডিসির মানবিক কাজ

উজ্জ্বল জিসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৪ মার্চ ২০২৫ ২৩:৪৩

প্রতিবন্ধী যুবকের হাতে আর্থিক সাহায্যের চেক তুলে দিচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের ডিসি মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: সোমবারের তপ্ত দুপুর। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক ১২টা ৩২ মিনিট। নারায়ণগঞ্জে মাসব্যাপী গাছ সুরক্ষা (গাছ থেকে পেরেক তোলা) কর্মসূচির উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। তার সঙ্গে উপস্থিত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিলুফা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন) মো. আব্দুল ওয়ারেছ আনসারি, ঢাকা সমাজিক বন বিভাগ ও ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহমুদা রোকসানা সুলতানা, সহকারী কাজী মাহিনুর রহমান, জান্নাতুল ফেরদৌস, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. আবু মুন্না প্রমুখ। রোভার স্কাউটস ও বিডি ক্লিন নারায়ণগঞ্জের সদস্যরাও জেলা প্রশাসকের পেছনে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে।

বিজ্ঞাপন

হঠাৎ হাজির অপরিচ্ছন্ন পোশাকের এক যুবক। জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলামকে কিছু বলার জন্য তার সামনে চলে আসছেন। কিন্তু নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে বাধা দিলেন। তবে মানবিক ডিসি জাহিদুল ইসলামের চোখ আটকে গেল ওই যুবকের হাতের দিকে। তিনি খেয়াল করলেন- যুবকের দুই হাত নেই। তাই তিনি নিজে এগিয়ে গেলেন যুবকের কাছে। যুবককে নিজে থেকে সালাম ও নিজের পরিচয় দিয়ে প্রশ্ন করলেন, কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি? তার এমন ব্যবহারে হতভাগ উপস্থিত সবাই।

বিজ্ঞাপন

সংক্ষেপে যুবকের দুঃখ-দুর্দশার কাহিনী শুনে পরের দিন ডিসি অফিসে তাকে আসতে বললেন তিনি। জেলা প্রশাসক তার সঙ্গে থাকা স্টাফকে যুবকের বিস্তারিত নাম ও পরিচয় লিখে নিতে বললেন। তাকে নির্দেশ দিলেন স্থানীয়ভাবে যুবকের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে।

যাচাই-বাছাই করে জানা যায়, যুবকের নাম আব্দুর রাহিম, বয়স ২২ বছর। জেলার ফতুল্লা থানার উত্তর নরসিংপুর এলাকার বাসিন্দা মরহুম আজিজুল বেপরীর ছেলে এই রহিম। তার মা রেহেনা পারভিন এই প্রতিবেদকে জানায়, রহিমকে মাদরাসায় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পড়াশোনায় মনোযোগী না হওয়ায় ২০১৫ সালে মাত্র ১০ বছর বয়সেই তার বাবা তাকে স্থানীয় একটি হোসিয়ারি কারখানায় অস্থায়ী শ্রমিকের কাজে দেয়, যাতে সংসারের অভাব অনটন কিছুটা দূর হয়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস কাজে যোগ দেওয়ার মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই খবর আসে হাই ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক তারে হাত লেগে সারা শরীর অগ্নিদগ্ধ হয় শিশু রহিমের। দ্রুত নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। কিন্তু ডাক্তারদের অনেক চেষ্টার পরেও জীবন বাঁচাতে রহিমের দুই হাতই কেটে ফেলতে হয়।’

এর পর থেকে পরিবারের বোঝা হয়েই থাকতে হয় রহিমকে। বয়স বাড়তে থাকলে এক সময় ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মা রহিমা বেগম দরিদ্র ঘরের মেয়ে পপি আক্তারের সঙ্গে বিয়ে দেন রহিমকে। তাদের ঘরে তিন বছর বয়সী সন্তান মোতাকাব্বির। দুই হাত না থাকায় মানুষের কাছে সাহায্য নিয়েই চলে রহিম-পপির সংসার।

গৃহবধূ পপি বলেন, ‘রোজা শুরু হয়েছে। ঘরে বাজার নেই। বাসা ভাড়াও বকেয়া কয়েক মাসের। বাড়ির মালিক বাসা ছেড়ে দেওয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই আমার স্বামী গতকাল সোমবার ডিসি স্যারের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। ডিসি স্যার একদিনের মধ্যেই তার অফিসে ডেকে নিয়ে ১০ হাজার টাকার চেক দেন। সেইসঙ্গে ব্যক্তিগতভাবেও নগদ দুই হাজার টাকা দেন আমার শিশু সন্তানের ঈদের পোশাক কেনার জন্য।’

এদিন বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে চেক গ্রহণ কালে কান্নায় ভেঙে পড়েন রহিম। কান্নাভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘অভাবের কারণে সংসারে ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকে। আমি এভাবে সাহায্য নিয়ে বাঁচতে চাই না। সমাজের স্বচ্ছল ব্যক্তিরা যদি একটা ছোট দোকান করে দিতো, তাহলে আমার ছেলেটাকে পড়াশোনা করাতে পারতাম।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি তহবিলের সীমাবদ্ধতার কারণে আমি চাইলেও শারীরিক প্রতিবন্ধী রহিমকে খুব বেশি আর্থিক সাহায্য করতে পারিনি। তবে আমি পরিকল্পনা করছি কীভাবে তাকে আর্থিকভাবে পুনর্বাসন করা যায়; যাতে যুবকটি তার একমাত্র সন্তানকে পড়াশোনা করাতে পারে।’

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

টপ নিউজ মানবিক ডিসি মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর